বার্সার বিদায়ের পর কানসেলোর মেয়ের মৃত্যু কামনা সমর্থকদের

পরিবারের সঙ্গে বার্সেলোনার পর্তুগিজ ডিফেন্ডার জোয়াও কানসেলোইনস্টাগ্রাম

ঘরের মাঠে গত মঙ্গলবার রাতে পিএসজির কাছে ৪–১ গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছে বার্সেলোনা। বার্সার বিদায়ে হতাশা লুকাতে পারেননি সমর্থকেরা। অনেককে সে রাতে গ্যালারিতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বার্সার খেলা দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।

এই ক্ষুব্ধ সমর্থকদেরই একাংশ পরে জোয়াও কানসেলোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আইডিতে হামলে পড়েছেন। কানসেলোকে আক্রমণ করার কারণ, পিএসজির বিপক্ষে সে রাতের ম্যাচে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে না পারা।

ম্যাচের ৫৯ মিনিটে উসমান দেম্বেলেকে নিজেদের বক্সে ট্যাকল করে ফেলে দেন ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ধারে বার্সায় খেলতে যাওয়া কানসেলো। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। ৬১ মিনিটে সফল স্পট কিকে পিএসজিকে ৩–১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। বার্সা কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে তখনই। ক্ষুব্ধ সমর্থকেরা ম্যাচ শেষে কানসেলোকে শুধু বাজে ভাষায় গালিগালাজই করেননি, তাঁর পরিবারের মৃত্যুও কামনা করেছে।

দেম্বেলেকে নিজেদের বক্সে ফাউল করে পিএসজিকে পেনাল্টি উপহার দেন কানসেলো
এএফপি

চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিযান থেকে ছিটকে পড়ার পর বার্সেলোনা এবারের মৌসুমের শেষ ‘এল ক্লাসিকো’য় আগামীকাল রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে ইএসপিএনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কানসেলো। সেখানেই ইনস্টাগ্রামে পাওয়া হুমকির বিষয়টি জানিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ ফুলব্যাক।

আরও পড়ুন

সাক্ষাৎকারের একটি অংশে কানসেলো বলেন, ‘লোকেরা যাচ্ছেতাই লিখেছে। ইনস্টাগ্রামে এমনও মন্তব্য দেখেছি, যেখানে আমার মেয়ের মৃত্যু কামনা করা হয়েছে। অথচ ওর এখনো জন্মই হয়নি। তারা কথাগুলো আমার সামনে এসে বলতে পারবে না। কারণ, তারা জানে এতে ঝামেলা হবে। কিন্তু (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) যা মন চায়, সেটাই লিখতে পারে।’

কানসেলোর প্রেমিকা দানিয়েলা মাসাদো একজন ইন্টারনেট ব্যক্তিত্ব ও ব্লগার। তাঁদের প্রথম কন্যাসন্তান আলিসিয়া জন্ম নেয় ২০১৯ সালে। ২৭ বছর বয়সী মাসাদো বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। আরেকটি কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি। কানসেলো সাক্ষাৎকারে সেই অনাগত সন্তানের কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

শিগগিরই দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হতে চলেছেন কানসেলো। বার্সার সমর্থকেরা সেই অনাগত সন্তানেরই মৃত্যু কামনা করেছেন
ইনস্টাগ্রাম

সাক্ষাৎকারে কানসেলো আরও বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গী, মেয়ে ও অনাগত সন্তানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। পৃথিবীটা বড়ই নিষ্ঠুর। আপনাকে এটার (নিষ্ঠুরতার) সঙ্গে বসবাস করতে জানতে হবে। আমি জানি কীভাবে চলতে–ফিরতে হয়। কিন্তু তাদের নিয়ে কী বলব, সেটা জানা নেই।’

আরও পড়ুন

যাঁরা তাঁর পরিবারের মৃত্যু কামনা করেছেন, তাঁদের প্রতি একটা আহ্বানও জানিয়েছেন কানসেলো, ‘একটি শিশুর মৃত্যু কামনা করা সত্যিই গুরুতর ব্যাপার। মানুষ টেলিভিশনে যে ফুটবলকে দেখে, সেটার পেছনের গল্পটা তারা জানেনি। তাদের বোঝা উচিত, আমরা যারা ফুটবলার, তারাও মানুষ। আমরা ঠিক তাদের মতোই।’

ভালো খেলতে না পারলে পরিবারের নয়, শুধু তাঁরই সমালোচনা করতে বলেছেন কানসেলো, ‘আপনারা আমার পারফরম্যান্সের সমালোচনা করুন। তাতে আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু আমার পরিবার নিয়ে কিছু বলবেন না। সত্যি বলতে, এই সপ্তাহটা খুব কঠিন ছিল। আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে রোমাঞ্চিত ছিলাম। আমি মনে করি আমরা সেটার (সেমিফাইনালে) যোগ্যও ছিলাম। কিন্তু সেটা যেহেতু হয়নি, এখন আমাদের তা পেছনে ফেলে রেখে এগোতে হবে।’

ভালো খেলতে না পারলে পরিবারের নয়, শুধু তাঁর সমালোচনা করতে বলেছেন কানসেলো
রয়টার্স

পিএসজির কাছে হারের রাতে ঘুমাতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন কানসেলো, ‘ওই রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। যে দিন আমরা জিততে পারি না, সে রাতে আমার সহজে ঘুম আসে না। বারবার মনে হয়, আমি আমার কাজটা ঠিকভাবে করতে পারিনি, ভালো খেলতে পারিনি।’