ইতিহাসের দ্রুততম মানবের এখন সিঁড়ি ভাঙতে দম ফুরিয়ে আসে

টোকিওতে চলছে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন উসাইন বোল্টএএফপি

হঠাৎ মনে হতে পারে, কথাবার্তায় লোকটা এখন তো বেশ সাদামাটা। তা-ই কি?

মোটেও না। চেনা সেই ক্যারিশমা যে চলে যায়নি, সেটা বোঝা গেল ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে উসাইন বোল্ট যখন সোজা বলে দিলেন, কেন তাঁর রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেননি। মনে হবে, এই তো সেই বোল্ট। আবার একটু ধাক্কাও লাগবে পরের কথাগুলো শুনলে। একসময়ের সুপারম্যান এখন তাহলে এমন আটপৌরে জীবন কাটাচ্ছেন! যে জীবনে নাকি সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় তাঁর দম ফুরিয়ে আসে! অথচ এই লোকটাই একসময় ১০০ মিটার দৌড়েছেন ৯.৫৮ সেকেন্ডে।

আরও পড়ুন

টেলিগ্রাফের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটা বোল্ট দিয়েছেন টোকিওতে। বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ দেখতে গেছেন সেখানে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ২০১৭ সালে অবসরের পর এই প্রথম অ্যাথলেটিকসের কোনো বড় আসর দেখতে গেলেন আটবারের এই অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। জাপানি দর্শকেরা অবশ্য তাঁকে দেখে ঠিকই উল্লাসে ফেটে পড়েছে। তবে বোল্ট এখন বদলে গেছেন অনেকটাই। জ্যামাইকায় এখন তাঁর ঘরোয়া জীবনটা আলোয় থাকার সময়ের সেই জীবনের সঙ্গে একেবারেই মেলে না।

অবসর নেওয়ার পর এই প্রথম অ্যাথলেটিকসের কোনো বড় আসরে এলেন বোল্ট। টোকিওতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে
এএফপি

এখন তাহলে বোল্টের জীবন কেমন? বজ্রবিদ্যুৎ নিজেই বললেন, ‘সাধারণত আমি ঘুম থেকে উঠি যখন বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। এরপর দিনটা কেমন কাটবে, সেটা নির্ভর করে আমার কোনো কাজ আছে কি না, তার ওপর। কাজ না থাকলে ঘরে আরাম করি। মুড ভালো থাকলে একটু ব্যায়াম করি। নাহলে কোনো সিরিজ দেখি। বাচ্চারা ফিরে এলে তাদের সঙ্গে সময় কাটাই। ওরা যখন বিরক্ত করতে শুরু করে, তখন সরে যাই।’ হাসতে হাসতে আরও যোগ করলেন, ‘ইদানীং লেগো খেলায় মজা পাচ্ছি। সিনেমা দেখি আর লেগো জোড়া লাগাই।’

বোল্ট ও তাঁর সঙ্গী কাসি বেনেটের তিন সন্তান—৫ বছরের মেয়ে অলিম্পিয়া লাইটনিং আর যমজ ছেলে থান্ডার ও সেন্ট লিও (৪ বছর)। ওদের নিয়েই এখন ৩৯ বছর বয়সী বোল্টের জীবন। এখন তিনি একেবারেই দৌড়াদৌড়ির মধ্যে নেই।

আরও পড়ুন

অথচ বোল্টের চেয়ে মাত্র এক বছরের ছোট সহপাঠী শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস এবার টোকিওতে মেয়েদের ১০০ মিটারের ফাইনালে দৌঁড়েছেন। বোল্ট কি তাহলে এখন একটুও দৌড়ান না? শুনে হাসলেন স্প্রিন্টের কিংবদন্তি, ‘না। এখন দৌড়াতে ভালো লাগে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শুরু করতে হবে। কারণ, সিঁড়ি ভাঙতে গেলেই হাঁপিয়ে যাই। এখন জিমে বেশি সময় দিই। যখন পুরোপুরি ওয়ার্কআউট শুরু করব, তখন হয়তো কিছু ল্যাপ দিতে হবে, যাতে শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক হয়।’

রোববার পুরুষ ও নারীদের ১০০ মিটার ফাইনালের আগে বোল্ট যখন মঞ্চে উঠলেন, দর্শকদের উল্লাস ছিল বজ্রধ্বনির মতো। মানে আলোচনার বাইরে থাকলেও তিনি এখনো জনপ্রিয়। সাক্ষাৎকারে লন্ডন ২০১২, বিশ্ব রেকর্ড আর তাঁর পুরোনো দিনগুলোর কথা তুলতেই চোখেমুখে ফুটে উঠল সেই পুরোনো ঝলক।

সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নতুন প্রজন্মের বুট পরে বোল্ট এখন দৌড়ালে ১০০ মিটারের জন্য তাঁর সময় লাগত ৯.৪২ সেকেন্ড। নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওবলিক সেভিলের চেয়ে প্রায় দুই মিটার এগিয়ে থাকতেন বোল্ট। তাঁর ২০০৯ সালের ৯.৫৮ সেকেন্ডের বিশ্ব রেকর্ড এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। নোয়াহ লাইলস যতই বলুন ১৯.১৯ সেকেন্ডের ২০০ মিটার বিশ্ব রেকর্ড এখনো দূরের স্বপ্ন।

আরও পড়ুন

তাহলে বোল্টের সময়ের স্প্রিন্টাররাই কি বেশি ভালো ছিলেন? এমন প্রশ্নে বোল্টের উত্তর, ‘সত্যিটা জানতে চান? আসলে আমরাই বেশি প্রতিভাবান ছিলাম। এখনকার মেয়েরা ভালো করছে, তারা দ্রুত দৌড়াচ্ছে। এটা প্রতিভার জন্যই হয়। শেলি-অ্যানকে দেখুন, নতুন স্পাইকে সে আরও দ্রুত দৌড়াচ্ছে। তবে সেই সময়ে পুরুষেরা বেশি প্রতিভাবান ছিল। ব্যাপারটা খেয়াল করলে টের পাওয়া যায়।’

২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক বদলে দিয়েছিল বোল্টের জীবন। সেখানেই জন্ম হয়েছিল সুপারস্টার বোল্টের। ২০২৭ সালের বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ আবার হবে বেইজিংয়ের সেই ‘বার্ডস নেস্ট’ স্টেডিয়ামে। সন্তানদের নিয়ে সেখানে ফিরতে চান তিনি, ‘ওটা আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তাই বেইজিং আমার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। এবার বাচ্চাদের নিয়ে যাব। ওদের বলব, দেখো, এখানেই হয়েছিল সব। তখন ওরা বুঝতেও পারবে, তাদের বাবা কী করেছে।’