চাক দে! ইন্ডিয়া: শাহরুখের সেরা সিনেমা, মসলার বাইরে সাহসী বলিউড
অপবাদ ও অপমান মাথায় নিয়ে খেলা ছাড়ার সাত বছর পর আবার হকিতে ফেরেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক কবির খান। দায়িত্ব নেন ভারতীয় নারী হকি দলের কোচের। এই দলে ডাক পাওয়া খেলোয়াড়েরা এমন যে পেশাদারির সঙ্গে তাঁদের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় এসেছেন দেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে। যাঁদের কেউ কেউ রেলওয়ের চাকরির অংশ হিসেবে খেলেন, আবার কেউ খেলেন নিছক খেয়েপরে বাঁচার জন্য। এমনকি কেউ কেউ হিন্দিতে কথাও বলতে পারেন না।
দলটার কাছে কারও কোনো প্রত্যাশা নেই, দলটির ভবিষ্যৎও দেখেন না কেউ। আর সে কারণেই কবির খানের ঘাড়ে এই বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। বিনা আপত্তিতে কবিরও নিয়ে নেন এই দায়িত্ব। নিজের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের এটাই ছিল তাঁর একমাত্র সুযোগ। আর এরপরই শুরু হয় ভারতীয় নারী হকি দলের সঙ্গে কবিরের অন্য রকম এক যাত্রা। যে যাত্রার নাম ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’।
সত্য ঘটনা ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে ভারতীয় নারী হকি দলের কোচের ভূমিকায় অভিনয় করেন বলিউড বাদশাহখ্যাত শাহরুখ খান। মূলত এটা ভারতের হকি দলের সাবেক গোলরক্ষক মীর রঞ্জন নেগির গল্প। যদিও গল্পটা বলতে গিয়ে মূল ঘটনা এবং চরিত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
যেমন নেগি গোলরক্ষক হলেও কবির তথা শাহরুখকে দেখানো হয়েছে দলের স্ট্রাইকার হিসেবে। ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’কে শাহরুখের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি বিবেচনা করা হয়। শাহরুখ খান তাঁর চিরাচরিত রোমান্টিক ছাঁচ ভেঙে এক গম্ভীর, রাগী ও একরোখা কোচের ভূমিকায় দারুণ অভিনয় করেছেন। জিতেছেন ফিল্মফেয়ারের সেরা অভিনেতার পুরস্কারও।
নারী দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর কবির বুঝতে পারেন, কাজটা কতটা কঠিন। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে সামলানো বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল তাঁর জন্য। এর মধ্যে দলের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বিন্দিয়া নায়েকের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বও ছিল স্পষ্ট। বিন্দিয়া তাঁর কাছের খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি দলও তৈরি করেন।
কবিরের অতিরিক্ত খবরদারি, কড়া নিয়মকানুন এবং বদমেজাজের কারণে একপর্যায়ে তাঁর অধীনে না খেলার সিদ্ধান্তও নেয় মেয়েরা। তবে নাটকীয় কিছু ঘটনার পর আবার দায়িত্ব নেন কবির। এরপর দলকে বিশ্বকাপে পাঠানোর অনুমতি না পেয়ে পুরুষ দলের সঙ্গে মেয়েদের খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন কবির। ম্যাচে জিততে না পারলেও মেয়েদের খেলা প্রশংসিত হয় এবং বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেমন খেলে সেখানে কবিরের দল?
ছবির শক্তি এর চরিত্রগুলো। ১৬ জন খেলোয়াড়—ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজের পটভূমি থেকে আসা এবং তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ছাইচাপা আগুন। কেউ উত্তর ভারতের কড়া পুরুষতন্ত্রে দমচাপা পড়া, কেউ আবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জাতিগত বৈষম্যের শিকার।
পরিচালক শিমিত আমিন এবং চিত্রনাট্যকার জয়দীপ সাহনি যেভাবে এই বৈচিত্র্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে সিনেমার গতি একটু ধীর মনে হতে পারে। বিশেষ করে প্রথমার্ধে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত গল্প এবং দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব দেখাতে গিয়ে মূল গল্প কিছুটা পিছিয়ে যায়। যদিও এই অংশগুলো চরিত্রদের বুঝতে সাহায্য করে, তবু কোথাও যেন একটু দীর্ঘ মনে হয়।
চিত্রগ্রহণ ও আবহসংগীত বেশ ভালো। বিশেষত খেলার দৃশ্যগুলো যতটা টান টান, ঠিক ততটাই আবেগ মাখানো। আর ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’ শিরোনামের গানটি যেন ছবির প্রাণ। ‘মাওলা মেরে লে লে মেরি জান’ গানটিও অনেকেরই পছন্দ।
সব মিলিয়ে যাঁরা বলিউডের চেনা ছাঁচের ‘মসলাদার’ ছবির বাইরে গিয়ে অন্য কিছু দেখতে চান, ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’ তাদের হতাশ করবে না।
একনজরে
চাক দে! ইন্ডিয়া
পরিচালক: শিমিত আমিন
অভিনয়: শাহরুখ খান, শিল্পা শুক্লা, বিদ্যা মালভাদে, সাগরিকা ঘাটগে, আনিতা নায়ার
মুক্তি: ১০ আগস্ট ২০০৭
রানটাইম: ২ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১