বাংলাদেশে গোলকিপিং কোচের কাজ না পেয়ে কম্বোডিয়ায় গিয়েছিলেন। চাকরি হলো না কেন?
বিপ্লব ভট্টাচার্য: ওরা স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি চাইছিলাম এক বছরের চুক্তি। স্পনসর না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।
নতুন দেশে চাকরি খোঁজার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
বিপ্লব: খুব কঠিন। এজেন্টের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি, পাশাপাশি ৮–১২ বছরের জুনিয়র গোলকিপারদের ঘণ্টাভিত্তিক ট্রেনিং দিতাম। তবে আমার বড় সমস্যা হয়েছে ওদের স্থানীয় ভাষা না জানায়।
কম্বোডিয়ায় কীভাবে ছিলেন?
বিপ্লব: কম্বোডিয়ায় শেষ দুই মাস যে বাসায় থাকতাম, ওদের রান্না করে খাওয়াতাম, বিনিময়ে বাসাভাড়া দিতে হতো না। মোট পাঁচ মাস ছিলাম। প্রথম তিন মাস হোটেলে থেকেছি। শেষ দুই মাস আমার হাত খালি হয়ে যায়। তখন এক বাঙালির বাসায় থাকতাম, সেখানে ছিলেন আরও একজন বাঙালি। আমিসহ তিনজন। ওনাদের রান্না করে খাওয়াতাম বলে বাসাভাড়া লাগেনি। আমি রান্নাটা শিখেছিলাম বলেই শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য এই কাজটা করেছি। জীবন আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে কম্বোডিয়ায়। মাঝেমধ্যে কখন চোখে পানি এসে যেত, বুঝতাম না।
কয়েক মাস অপেক্ষার পরও যখন কোনো সুযোগ পেলেন না, তখন তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কথা...
বিপ্লব: খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা। আমার এক বন্ধুর পরামর্শে ওখানে গিয়ে একটা স্কুল ফুটবল দলের কোচ হিসেবে খণ্ডকালীন কাজও করি। ওই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শ্রীলঙ্কান প্রধান ক্রীড়া শিক্ষক আমার জীবনবৃত্তান্ত এবং কাজের ধরন দেখে অনেক পছন্দ করেন। বলেছেন ভবিষ্যতে ভালো স্পনসর পেলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
দেশে ফিরে আসার মুহূর্তটা কতটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল?
বিপ্লব: অনেক কঠিন। কিন্তু যতই রাগ করে কম্বোডিয়ায় পড়েছিলাম, আমি আমার স্বপ্নের মাতৃভূমি কখনোই ছাড়তে চাইনি। মনটা ঠিকই দেশের জন্য কেঁদেছে। আমি বর্তমান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই দেশে ফিরেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন ভবিষ্যতে কাজ করার সুযোগ করে দেবেন। আশা করি, তিনি আমাকে নিরাশ করবেন না।
জীবনে আর কোনো কষ্টের স্মৃতি আছে?
বিপ্লব: আছে। ২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পূর্বাচলে ৫ কাঠা জায়গা উপহার দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু সেই জায়গার কিস্তি দিতে পারিনি বলে জায়গাটা মাত্র ৬ লাখ টাকায় অন্য একজনকে ছেড়ে দিই। তখন ঠিকমতো কিস্তি দিতে পারলে জায়গাটা আজ থাকত এবং এই সময়ে এসে এত কষ্ট করতে হতো না।
আপনার মতো অভিজ্ঞ গোলকিপিং কোচের চাকরি না পাওয়ার দায় কার?
বিপ্লব: কাউকে দায়ী করছি না। হয়তো ঈশ্বর আমার মধ্যে ধৈর্যের পরীক্ষা করছেন। এই খারাপ সময় হয়তো কেটে যাবে, আমার বিশ্বাস আমি আবারও আসিফ, মাহীন বা ইমনের মতো গোলকিপার তৈরির সুযোগ পাব।
কম্বোডিয়া যাওয়ার কয়েক মাস আগে আপনি হঠাৎ ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, চাকরি না পাওয়ার হতাশায় হয়তো দেশ ছেড়ে প্রবাসে স্থায়ী হবেন। এখনো কি সেই ইচ্ছা আছে?
বিপ্লব: পরিস্থিতি বাধ্য না করলে সহজে দেশ ছাড়তে চাই না। কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনে যতটুকু জমিয়েছিলাম, গত প্রায় দুই বছরে সব প্রায় শেষের দিকে। হয়তো এভাবে চলতে থাকলে সন্তানদের মানুষ করতে শেষ সম্বলও বিক্রি করে দেশের বাইরে যেতে হবে। আমার ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে। মেয়ে নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী। ওদের পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো অবস্থা আমার এখন নেই। এগুলো বললে কেউ হয়তো বিশ্বাসও করবে না।
আপনি তো বাফুফের গোলকিপিং কোচ হয়েছিলেন। কাজী সালাহউদ্দিন আপনাকে কাজ দেন। তারপর সেখানে কী হলো?
বিপ্লব: ২০২১ ও ২০২২ সালে বাফুফের ছেলেদের একাডেমি ও মেয়েদের গোলকিপিং কোচের পাশাপাশি জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও কাজ করেছি। সংশ্লিষ্টরা দেখেছেন আমার কোচিং ও কাজের প্রতি একাগ্রতা। পরে আমি ক্লাব থেকে গোলকিপিং কোচের ভালো প্রস্তাব পেয়ে বাফুফের অনুমতি নিয়ে চলে আসি।
কোন ক্লাবে?
বিপ্লব: শেখ জামাল ধানমন্ডিতে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দুটি বড় দল শেখ রাসেল ও শেখ জামাল দল গঠন করতে না পারায় কাজের জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আমার মতো অনেক কোচ এবং খেলোয়াড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এখন কি আবার বাফুফেতে কাজ করতে চান?
বিপ্লব: সুযোগ পেলে অবশ্যই করব। বাংলাদেশের জন্য ভালো মানের গোলকিপার তৈরি করতে পারব, নিজের ওপর সেই বিশ্বাসটা রাখি।
একসময় গোলকিপিংয়ে আপনার প্রবল প্রতিপক্ষ আমিনুল হক এখন রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, ভবিষ্যতে মন্ত্রীও হতে পারেন। অথচ আপনি একটি চাকরির খোঁজে হয়রান। কেমন লাগে ভাবলে?
বিপ্লব: নিজের এই কর্মহীন অবস্থার জন্য খারাপ লাগে। আমিনুল বর্তমান বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক, একজন রাজনীতিবিদ। ওর জন্য শুভকামনা, কদিন আগেও ওর নির্বাচনী এলাকায় খেলেছি। আমিনুল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করলে পল্লবীর মানুষের কাছে ওর জন্য ভোট চাইব। কম্বোডিয়া থেকে ফেরার পর প্রথম দেখাতেই মিরপুরে আমিনুল আমাকে ‘বিপু’ বলে জড়িয়ে ধরে এক মঞ্চে ওর পাশে বসিয়েছে। আমাদের সম্পর্কটা অসাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে আমি কখনোই রাজনীতি করব না ঠিক করে রেখেছিলাম।
কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনে তো একে অন্যের অলিখিত শত্রু ছিলেন?
বিপ্লব: না, না, এভাবে দেখি না বিষয়টা। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসের আগে আমিনুল চোটে পড়ে। প্রথমবার সাফ গেমস ফুটবলে আরাধ্য সোনা জয়ের পেছনে আমার অবদান কতটুকু আপনারা জানেন। আবার ২০০৩ সাফে ঢাকায় চ্যাম্পিয়ন হলাম, তখন আমিনুলই মূলত খেলেছে। আমিও দলে ছিলাম।
জীবনের সেরা ম্যাচ কি ১৯৯৯ কাঠামান্ডুর ওই ফাইনাল?
বিপ্লব: হ্যাঁ, নেপালের বিপক্ষে ফাইনাল তো আছেই, ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালও মনে রাখার মতো। চীনের বিপক্ষে ২০০২ বুসান এশিয়ান গেমসের ম্যাচটাও স্মরণীয়।
আপনি বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে রেকর্ড আটটি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। সাফে সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি কোনটা?
বিপ্লব: ১৯৯৭ সালে নেপালে প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি, ২০১৩ সালে সেই নেপালেই নিজের অষ্টম সাফ খেলি। পুরো জার্নিটাই আমার কাছে অনেক মূল্যবান।
আজ পেছনে তাকিয়ে কী মনে হয়?
বিপ্লব: নিজেকে অবহেলিত এক গল্পের নায়ক মনে হয়। যে ২৪ বছর ক্লাব পর্যায়ে আর জাতীয় দলে ১৬ বছর খেলেছে। সেই মানুষটার পাশে কি বাফুফে বা রাষ্ট্র দাঁড়াতে পারে না—এই প্রশ্নটা বারবার মনে আসে।
কিন্তু চাইলে তো আপনি অন্য কিছু করতে পারতেন, তাই না?
বিপ্লব: হ্যাঁ, করতে পারতাম। কিন্তু আমি ফুটবলেই থাকতে চেয়েছি। আমিনুল, বিপ্লবের চেয়ে ভালো গোলকিপার দেশকে উপহার দিতে চেয়েছি। ফুটবল আমাকে নাম, যশ, খ্যাতি সব দিয়েছে; আবার কেড়েও নিয়েছে। খুব কাছের কিছু মানুষ আমার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়ন করেনি। বরং বাজে মন্তব্য করে আমার কাজের পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে বা দিচ্ছে। যার ভুক্তভোগী আমি ও আমার পরিবার।
বিপ্লব এমন সফল একজন খেলোয়াড়। অথচ তাঁর ভেতরে এত হাহাকার— সতিই বিস্ময়কর লাগে!
বিপ্লব: জীবনে একজন সফল খেলোয়াড় হতে পেরেছি ঠিক, কিন্তু একজন বাবা হিসেবে সন্তানদের জন্য নিশ্চিত ভবিষ্যৎ রেখে যেতে পারব কি না অনিশ্চিত। সন্তানদের জন্য আমার একটা চাকরি খুব প্রয়োজন। আজ যদি কেউ যোগ্যতা থাকা অবস্থায়ও ভালো জায়গায় আমাকে কাজ না দেয়, তাহলে সন্তানদের মানুষ করতে পারব না।
অথচ আপনার খেলোয়াড়ি জীবনের গল্পটা পুরো ভিন্ন। আপনার প্রচুর ভক্ত ছিল।
বিপ্লব: লাকসামের এক মেয়ে তো আমার জন্য আত্মহত্যা করতে গিয়েছে। এ ছাড়া মেয়েদের চিঠি পেতাম প্রচুর, বিশেষ করে আবাহনীতে ১০ বছর খেলার সময়। ১৯৯৯ সালে নেপালে প্রথমবার সাফ গেমসে সোনা জেতার পর অনেক মেয়েই প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
জীবনে যাকে চেয়েছিলেন, তাকে কি পেয়েছেন?
বিপ্লব: না, পাইনি।
কেন?
বিপ্লব: পারিবারিকভাবে আমরা পরিচিত ছিলাম। আমি থাকতাম ঢাকায়, সে চট্টগ্রামে। আমাদের দেখা কম হতো, ফোনে কথা হতো, আসলে দূরে থাকলে যা হয়, পরিবারের অন্য কেউ ভুল বুঝিয়ে আমার কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয়েছে।
তারপর? বিয়ে করলেন কবে?
বিপ্লব: আমার প্রেম যখন ভেঙে যায়, তখন ২০০১ সালে আমি মৌলভীবাজারে শেরেবাংলা কাপ ফুটবলে কুমিল্লা জেলা দলের হয়ে খেলতে যাই। আমি কুমিল্লার অধিনায়ক ছিলাম। একদিন ম্যাচের পর মৌলভীবাজার দলে আমার এক বন্ধু ঝিনুকের বাসায় দাওয়াত খেতে যাই। সেখানে ওদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে কাকতালীয়ভাবে ওদেরই আত্মীয় ঐশ্বর্যর গান শুনে আমার ভালো লাগে। পরে পারিবারিকভাবে প্রস্তাব দিলে ওরা রাজি হয়ে যায়। ২০০২ সালে বিয়ে করি ঐশ্বর্যকে। ডাকনাম ঐশ্বর্য, আসল নাম অঞ্জনা ভট্টাচার্য, তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী।
আপনি নিজে গানটান ভালোবাসেন?
বিপ্লব: আমার গানের গলা ভালো নয়, কেউ চাইলে আমার বউয়ের গান শুনতে পারে। আমি গাইতে বাধ্য হলে দেশাত্মবোধক গান শুনিয়ে দেব, যেমন...যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা...দে না সে মাটি আমার অঙ্গে মাখিয়ে দে না।
ঐশ্বর্যর কী ভালো লাগে?
বিপ্লব: সে অসাধারণ খাসির মাংস রান্না করে, আর তার শুঁটকির বড়া এককথায় অনবদ্য।
ভক্তের কাছ থেকে পাওয়া স্মরণীয় উপহার?
বিপ্লব: বাগেরহাট থেকে রহিম নামের এক ভক্ত আমার জন্য উপহার পাঠায়। খুলে দেখি আমার খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক পেপার কাটিং। সেই উপহার ছিল অমূল্য।
প্রিয় মাঠ আর প্রিয় গোলকিপার?
বিপ্লব: ঢাকা স্টেডিয়াম আর জিয়ানলুইজি বুফন।
কোন সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে মনে হয়েছে—এর চেয়ে আমি নিজেই ভালো প্রশ্ন করতে পারি?
বিপ্লব: মানবজমিনের এক সাংবাদিক কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর আবাহনী ক্লাবে বসে মুন্না ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। আমি মাত্র আবাহনী টিমে এসেছি। ১৯৯৪ সালের কথা। ওই সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে মনে হয়েছিল আমি ওনার চেয়ে ভালো প্রশ্ন করতে পারতাম সাংবাদিক হলে।
খেলোয়াড় জীবনের মজার কোনো গল্প?
বিপ্লব: ২০০০ সালে মালদ্বীপে চার জাতি টুর্নামেন্টে আমার রুমমেট ছিলেন জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু ভাই। একসঙ্গেই ঘুমিয়েছিলাম। ঘুমের আগে ভেবে রেখেছিলাম মিন্টু ভাইকে ভয় দেখাব। যে–ই ভাবনা, সেই কাজ। গভীর রাতে হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে মিন্টু ভাইয়ের গলা চেপে ধরি, মিন্টু ভাই ভীষণ ভয় পান। আমি আবার ঘুমের ভান করে ঘুমিয়ে পড়ি, পরদিন মিন্টু ভাই আমাকে বলে, কী হয়েছে বল তো, আমি বলেছি মনে করতে পারছি না। এরপর মিন্টু ভাই ভয় পেত আমার সঙ্গে রুম শেয়ার করতে। সেবার আমাদের কোচ ছিলেন ব্রিটেনের মার্ক হ্যারিসন।
সতীর্থের এমন কী কথা, যা এখনো মনে পড়ে?
বিপ্লব: আরমান মিয়া ভাই আদর করে আমাকে মুগলি বলে ডাকতেন। এখনো ডাকেন। মুগলি একটা টিভি সিরিয়াল ছিল। আর এখনো লাকসাম গেলে বিলু ডাকে সবাই।
বিপ্লব কী করতে ভালোবাসে?
বিপ্লব: বিয়ের পরেও খেলার পাশাপাশি বাজারসদাই নিজেই করতাম। ছোট থেকেই বাজার করার শখ ছিল। বাজার করার টাকা দিতেন বাবা, সেই টাকা বাঁচিয়ে কিছু টাকা রেখে দিতাম বিকেলে ফুটবল অনুশীলনের পর নাশতার জন্য। সেই জন্যই মা–বাবাকে বলে বাজার করার দায়িত্ব নিতাম।
স্কুলের স্যারদের বলা কোন কথাটা বেশি মনে পড়ে?
বিপ্লব: আমার অঙ্কের স্যার ছিলেন খুব কড়া, নাম পরেশ সাহা। সেই স্যারের কাছে প্রাইভেট ক্লাস ঠিকমতো করতাম না, অথচ মাস গেলে টাকা দিতাম। স্যার একদিন বললেন, বিপ্লব তুমি প্রতিদিন ঝড়–বৃষ্টি থাকলেও ফুটবল ট্রেনিং কর, কিন্তু প্রাইভেট, এমনকি স্কুলের কিছু ক্লাসও মিস করো। এভাবে চললে ভবিষ্যতে এসএসসি পাস করতে পারবে না।
তারপর?
বিপ্লব: স্যার বললেন, বিয়ে করতে গেলে তখন শ্বশুরবাড়ির মানুষ কী বলবে! খেলোয়াড় হতে না পারলে পড়াশোনায় ভালো করতে হবে। আমি শুধু স্যারকে বলতাম, স্যার, আমি একদিন ভালো খেলোয়াড় হব আর দেখবেন, এসএসসিও পাস করব। স্যার মজা করে বলতেন, বিয়ে করার জন্য হলেও এসএসসি পাস করতে হবে তোকে বিপ্লব। আমি খেলোয়াড় হওয়ার পর লাকসাম পাইলট হাইস্কুলের আমার সব স্যাররা অনেক খুশি হয়েছিলেন।
ছোটবেলায় নাকি অনেক বাংলা সিনেমা দেখতেন?
বিপ্লব: দেখতাম মানে! লাকসাম পড়শী সিনেমা হলে নতুন যে ছবিই আসত, বন্ধু শিমুকে নিয়ে সেটা আমি দেখতাম স্কুল ফাঁকি দিয়ে। শিমুও ভালো গোলকিপার ছিল। ছুটির ঘণ্টা সিনেমা দেখে তো খুব কান্না করেছিলাম, এখনো মনে পড়ে। ছোটবেলায় কম করেও ১০০-এর বেশি ছবি দেখেছি। সিনেমা দেখে বাসায় এলে বকা খেতে হতো।
আপনার দেখা স্মরণীয় কয়েকটা সিনেমার নাম কি বলা যায়?
বিপ্লব: টক্কর, সারেং বৌ, রজনী গন্ধা, ছুটির ঘণ্টা, রসের বাইদানি, রংবাজ, নয়ন মনি, কথা দিলাম...আরও অনেক সিনেমার নাম এখন ভুলে গেছি। মৌসুমীর প্রেমে পড়েছিলাম, মৌসুমীর এক্সপ্রেশন ছিল অসাধারণ—সালমান শাহ আর মৌসুমী জুটি হিট ছিল নব্বইয়ের দশকে।
বাংলাদেশের নাটক দেখেন? প্রিয় অভিনেতা কে?
বিপ্লব: বাংলাদেশি নাটক আমার বিশেষ পছন্দের। অপূর্ব আর মোশাররফ করিমের নাটক আমার প্রিয়।
প্রিয় নায়ক-নায়িকা?
বিপ্লব: সালমান খান, ঐশ্বরিয়া রাই, সালমান শাহ, মৌসুমী।
ছোটবেলায় কী করতে ভালো লাগত?
বিপ্লব: ঘুড়ি ওড়াতাম। বাড়ির পাশেই ডাকাতিয়া নদীতে সময় পেলেই মাছ ধরতে চলে যেতাম। মাছ ধরা একটা নেশা ছিল, তবে ফুটবলের টানে সেই নেশা চলে যায়। একবার এক ছেলে ধরা আমাকে ধরে নিয়ে বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছিল, খুব ছোট ছিলাম, কিছু মানুষ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে। ছোটবেলায় বন্ধুরা মিলে শহীদ মিনার বানিয়ে কলাগাছ দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতাম।
ফুটবলে বিশেষ দুটি মানুষ, যাঁদের মনে রেখেছেন আলাদাভাবে?
বিপ্লব: একজন জাতীয় দলের বয় মহসীন আরেকজন মরহুম হামিদুজ্জামান নোমান (সাবেক রেফারি) ভাই।
গোলকিপার কোচ হিসেবে কার কথা মনে পড়ে বেশি?
বিপ্লব: মরহুম মোতালেব ভাইকে। গাফফার ভাই, কাজী আনোয়ার ভাই ও ঝন্টু ভাই আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন আবাহনীতে ১৯৯৩ সালে ট্রায়ালে আসার পর। ওনাদের ছায়ায় বড় হয়ে উঠেছিলাম আবাহনীতে।