‘শাকিব খানের সঙ্গে দেখা হলে বলব, নায়ক হিসেবে তাঁকে কতটা পছন্দ করি’

খেলোয়াড় পরিচয়ে তাঁদের চেনেন সবাই। কিন্তু সেই পরিচয়ের বাইরে তাঁদের অন্য জীবনটা কেমন? সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের সঙ্গে এই ঝটপট প্রশ্নোত্তরপর্বে সেটাই জানার চেষ্টা…

আজকের তারকা: নিগার সুলতানা

উইকেটকিপিং করেন, ব্যাটিং করেন মিডল অর্ডারে। তবে নিগার সুলাতানার বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়কও। ২০১৮ এশিয়া কাপজয়ী নিগার দেশের হয়ে ১০০ টি-টোয়েন্টি খেলা একমাত্র নারী ক্রিকেটার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান

প্রথম আলো:

খেলার ব্যস্ততার বাইরে সময় পেলে কী করেন?

নিগার সুলতানা: সারা বছর বাইরে বাইরে থাকি—সময় পেলেই তাই বাসায় চলে যাই। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোটাই আমার সবচেয়ে পছন্দ। তাদের সঙ্গে থাকা, গল্প করা—যে মুহূর্তগুলো মিস হয়ে যায় বাইরে থাকায়, তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। পরিবারের সবার সঙ্গে স্মৃতি তৈরি করি। সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা হয়।

প্রথম আলো:

ঘুরতে যান সবাইকে নিয়ে?

নিগার: না, পরিবার নিয়ে এখনো ঘুরতে যেতে পারিনি। একটা ব্যস্ততা থাকেই, হয় আমি বা পরিবারের কেউ সময় করে উঠতে পারে না।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় পান না নিগার সুলতানা
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

সুযোগ পেলে কোথায় যেতে চান?

নিগার: বাংলাদেশের অনেক জায়গায়। সুন্দরবনে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, আরেকটা হলো সাজেক ভ্যালি। সুযোগ পেলে সবার আগে এই দুইটা জায়গায় যেতে চাই।

প্রথম আলো:

আপনি তো নিজে খেলার জন্য অনেক ঘুরেছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে কোথায়?

নিগার: নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে। ওখানে সাগর আছে, পাহাড়ও। নিউজিল্যান্ড দেশটাই আসলে সুন্দর। যেখানে দাঁড়াবেন, সবটাই ছবির মতো।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

বাড়িতে থাকলে তো পরিবারের সঙ্গে গল্প করাটা পছন্দ বললেন। আর কিছু?

নিগার: বিশেষ কোনো উপলক্ষ হলে রান্না করতে পছন্দ করি। বাসায় মেহমান এলে তখন আর কী—আম্মুকে সাহায্য করার সঙ্গে রান্না করা হয়। তবে খুবই কম করি, বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া হয় না।

ভাগ্নির সঙ্গে নিগার
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

কী ভালো রান্না করতে পারেন?

নিগার: মিষ্টি জিনিস ভালো রান্না করতে পারি, সেমাইটা ভালো হয় আমার। কিছুদিন আগে প্রথমবার চিকেন বিরিয়ানি রান্না করেছি, অনেক ভালো হয়েছে। চিকেন কারিটাও ভালো করতে পারি।

প্রথম আলো:

কী খেতে পছন্দ করেন?

নিগার: আম্মুর হাতের যেকোনো কিছু। তবে শুঁটকি মাছটা একটু বেশি পছন্দ।

প্রথম আলো:

সিনেমা দেখেন?

নিগার: অনেক। যখনই সময় পাই, খেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখি। টিভিতেও তখন খেলা দেখি না। সিনেমা দেখেই সময় কাটে। হলিউড দেখি, থ্রিলার দেখি, অ্যানিমেশন অনেক পছন্দ। ইদানীং তো ভালো বাংলা সিনেমাও হচ্ছে, এগুলোও দেখি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

পছন্দের নায়ক কে? হলিউড-বলিউডের কেউ নাকি বাংলাদেশের?

নিগার: বাংলাদেশের। আমার মনে হয় বাংলাদেশে একটাই নায়ক, শাকিব খান। নাম্বার ওয়ান শাকিব খান।

মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানে শাকিব খান
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

প্রিয় নায়কের সঙ্গে কি দেখা হয়েছে কখনো?

নিগার: না। আমার ওনার প্রতি একটা সম্মান আছে—যেভাবে বাংলাদেশের সিনেমাটাকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, সে কারণে। ইদানীং অনেক ভালো ভালো সিনেমা করেছেন, সিনেমা হলেও ভিড় বাড়ছে শাকিব খানের কারণে। এখন উনি ক্রিকেটের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হয়েছেন। সামনে দেখা হতেও পারে। তখন অবশ্যই তাঁকে বলব, নায়ক হিসেবে তাঁকে কতটা পছন্দ করি।

প্রথম আলো:

প্রিয় নায়িকা আছে?

নিগার: নাহ, আলাদা করে তেমন কাউকে পছন্দ না।

প্রথম আলো:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো আপনি বেশ সক্রিয়...

নিগার: শুধু ফেসবুকে। ইনস্টাগ্রাম একদমই উপভোগ করি না। আমার ফোনে নাই–ই এই অ্যাপ। ফেসবুকে আমার অফিশিয়াল পেজ আছে—তবে টুর্নামেন্টের সময় ফেসবুকিং করি না। ফাঁকা সময়ে দু–একটা ছবি দিই। আমার ফ্যান যারা আছে, তারা যেন দেখতে পারে আমি কী করছি, কোথায় আছি।

নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করেন নিগার
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

ফেসবুকের কমেন্ট বক্স দেখেন?

নিগার: নাহ, কমেন্টস পড়ি না। খুবই কম। একটা সময় ছিল, আমি আমার বড় আপুর মেয়েকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ছবি দিতাম। সবাই ভাবত এটা আমার মেয়ে। অনেক কমেন্ট আসত—আপনার মেয়ে, আপনার মেয়ে। সেগুলো আমার পরিবারের সবাই দেখে বলত, তুই কেন কমেন্ট ব্যাক করিস না, বলিস না কেন যে তোর ভাগনি হয়! কিন্তু ভাবলাম থাক, সবাই যা বোঝে বুঝুক, বোনের মেয়ে তো নিজের মেয়েই।

প্রথম আলো:

ইনবক্স দেখেন?

নিগার: নাহ, একদমই না। ইনবক্স কখনোই দেখি না। ওই সময়ই নেই।

প্রথম আলো:

বই পড়ার অভ্যাস আছে?

নিগার: একদমই না। এই ক্ষেত্রে আমি পরিবারের মধ্যে একধরনের কলঙ্ক। আমাদের বাসার সবাই প্রচুর বই পড়ে, একদম পোকা সবাই। আমার বাবা পড়তেন, খুব বেশি না। কিন্তু আমার আম্মু অনেক পড়েন, নানু, বোন, ভাই সবাই। কিন্তু আমি পাঠ্যবই ছাড়া আর কিছুই পড়িনি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

পড়াশোনা কেমন লাগত?

নিগার: পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম অনেক বেশি। আমার ভালো লাগত। কারণ একটা জিনিস একবার পড়লেই মনে থাকত। ভালো রেজাল্ট করতে সব সময় মন চাইত।

মাঝে মাঝে শাড়িও পরেন নিগার
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

ইংরেজি বলা কি তখনই শিখেছেন?

নিগার: হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই। বাবা অনেক বেশি শব্দার্থ শেখাতেন। আমি সেগুলো মুখস্থ করতাম। বাবা ছোটবেলায় চকলেট এনে দিতেন, শব্দার্থ বলতে পারলে দিতেন। হলিউডের মুভি বেশি দেখি, এটাও মনে হয় সাহায্য করেছে।

প্রথম আলো:

ক্রিকেটের বাইরে আপনার একটা স্বপ্নের দিন কেমন হবে?

নিগার: এ রকম কল্পনার দিন কখনো আসেনি। তবে সুযোগ পেলে এমন একটা দিন চাই—ক্রিকেট নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না, পরিবার নিয়েও। কেউ ডিস্টার্ব করবে না। ফোন বাজবে না। মেসেজ আসবে না। কোনো দায়িত্ব থাকবে না। কিচ্ছু থাকবে না। কোনো টেনশন নেই। একদম টেনশন ফ্রি।

নিজের মতো করে একটা দিন কাটাতে চান নিগার
ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

সেই দিন কি শুধু ঘুমাবেন?

নিগার: না, দিনে একদমই ঘুমাই না। রাতের ঘুমটা বেশি পছন্দ। আমি খুব বেশি ঘুমকাতুরে নই। তবে অ্যাথলেট হিসেবে পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি মনে হয়, বিশেষ করে রাতে।