ব্রিজ

‘মানুষ মনে করে, তাস মানেই খারাপ’

ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন অ্যাডহক কমিটি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে ৯টি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। এই কমিটি কী সংস্কার করবে, কেন করবে—এসব জানতেই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার। আজ নবম ও শেষ দিনে প্রথম আলোর মুখোমুখি ব্রিজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসান

প্রশ্ন:

ব্রিজ তো আন্তর্জাতিক একটি খেলা। বাংলাদেশে এর শুরুটা কীভাবে?

নাইমুল হাসান: আশির দশকের শুরুতে ব্রিজ ফেডারেশন হয়। তারপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চর্চা শুরু। ১৯৮৯ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন (আইবিএ) থেকে পাস করি। সে সময় আইবিএর দু-তিনজন কন্ট্রাক্ট ব্রিজ পারত। তাদের দেখে আমিসহ আরও কয়েকজন খেলাটায় আসি।

প্রশ্ন:

আপনারা নাকি আইবিএর শিক্ষকদের সঙ্গেও খেলতেন?

নাইমুল: হ্যাঁ, আইবিএর স্যারদের সঙ্গে খেলেছি। আইবিএর দুজন স্যার তখন কন্ট্রাক্ট ব্রিজ জানতেন। ওনারাই বলেছিলেন, ‘তোমরা নাকি ব্রিজ জানো, আমাদের সঙ্গে খেলো।’

প্রশ্ন:

বাংলাদেশে এখনো অনেকে মনে করে, তাসে নাশ, তাসে সর্বনাশ। কী বলবেন?

নাইমুল: এটাই তো সমস্যা। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, তাস মানেই খারাপ কিছু। কিন্তু তাস মানে চিন্তার জগৎ উন্মোচিত হওয়া, যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখাও। এটা ঠিক, তাস দিয়ে জুয়াখেলা হয় বেশি। কিন্তু তাস মানে শুধু ৩ কার্ড, ৯ কার্ড বা জুয়া নয়। এটা বুদ্ধিভিত্তিক একটা খেলা।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

সেটা কীভাবে মানুষকে বোঝাবেন?

নাইমুল: প্রচারণা চালাতে হবে। প্রচারের অভাব, সচেতনতার অভাবেই তাস, ব্রিজ নিয়ে মানুষের ধারণা নেতিবাচক রয়ে গেছে। আমি যখন ব্রিজ খেলতে প্রথম দেশের বাইরে যাই, অনেকে অবাক হয়ে বলেছিল, ব্রিজ খেলতে আবার বিদেশে যায় নাকি কেউ! পরিস্থিতি এখনো তেমন বদলায়নি।

ব্রিজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসান
সংগৃহীত
প্রশ্ন:

ব্রিজ খেলতে আগ্রহীদের উদ্দেশে কী বলবেন?

নাইমুল: সংক্ষেপে যদি বলি, আমরা কন্ট্রাক্ট ব্রিজ খেলি। কন্ট্রাক্ট ডুপ্লিকেটও বলতে পারেন, অর্থাৎ একই কার্ড দিয়ে সবাই খেলে। এখানে ভাগ্যের কোনো ব্যাপার নেই। ব্রিজে পেয়ার, চারজনের টিম খেলা হয়। আমি যে কার্ড পাব, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ও একই কার্ড পাবে। এটাই ডুপ্লিকেট ব্রিজ। আগ্রহীরা চাইলেই শিখতে পারে।

প্রশ্ন:

ব্রিজ এখন অনলাইনেও খেলা যায়। অনলাইনে কেমন মানুষ খেলেন?

নাইমুল: অনেকেই খেলে, আমিও খেলি নিয়মিত। অনলাইনে খেলা আসার পর ফিজিক্যাল ব্রিজ অনেক কমে গেছে। তবে ফিজিক্যাল ব্রিজ ছাড়া আমাদের দেশে ব্রিজের উন্নতি হবে না। ব্রিজকে ভালোবাসতে হবে। যেমন আমি ভালোবেসেছি। আমি বলি, ব্রিজ হলো আমার প্রধান প্রেমিকা। শুধু আমার নয়, বেশির ভাগ ব্রিজ খেলোয়াড়েরই। এটা খেলতে শুধু টেবিল–চেয়ার হলেই হয়।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

সঙ্গে একটা বড় কক্ষও তো লাগে...

নাইমুল: তা তো লাগেই। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে একটা রুম আছে ব্রিজ ফেডারেশনের, খুবই ছোট। সরকারের কাছে অনেক দিন ধরেই দাবি করে আসছি একটা বড় কক্ষের জন্য। আজও সেটা পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন:

সংকটের মধ্যেও ২০১৭ ও ২০১৯ ব্রিজ বিশ্বকাপে খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ ও ২০২৩ এশিয়ান গেমসেও খেলেছে। বলার মতো সাফল্য নেই কেন?

নাইমুল: আমরা ভালো করেছি, হয়তো পদক পাইনি। আগামী দিনে নিশ্চয়ই পাব, যদি খেলাটা নিয়মিত করা যায়। ব্রিজ অলিম্পিকেও যোগ হবে। ফলে খেলাটার সামনে সুযোগ বাড়ছে। আমাদের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বেশি খেলতে হবে। আমি নিজে ১০-১২ বার ব্রিজ খেলোয়াড় হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। সম্ভবত ১৯৯২ সালে প্রথম গেলাম মরিশাস, ১৯৯৬ সালে গ্রিসে, তারপর জর্ডান ও ভারতে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে গেছি। সর্বশেষ গেছি ২০১৮ সালে পোল্যান্ডে।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

ব্রিজ ফেডারেশনের কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। ব্রিজ নিয়ে আপনার সংস্কার পরিকল্পনা কী?

নাইমুল: নবীন খেলোয়াড় বাড়ানোর উদ্যোগ নেব, এটাই হবে আমাদের সংস্কার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্রিজ নেওয়ার চেষ্টা করব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে সেমিনার করব, যাতে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হয়। আগে বুয়েট থেকে প্রচুর ছেলে আসত। এখনো আসে কিন্তু কমে গেছে। সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহান বাংলাদেশ ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। আমি তখন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক। তাঁর সময়ে ২০০৫ সালে আমরা বিএফএএএমএই (ব্রিজ ফেডারেশন অব এশিয়া-আফ্রিকা মিডল ইস্ট) একটা টুর্নামেন্ট করেছিলাম, একবারই তা হয়েছে বাংলাদেশে। এমন টুর্নামেন্ট আবার করতে হবে। এখন ঘরোয়া তিন-চারটি টুর্নামেন্ট হয়। এগুলো বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।

আরও পড়ুন