কোচরা তো এখন স্বল্প সময়ের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু আপনি আড়াই বছরের জন্য বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিলেন, কেন?
সিমন্স: বাংলাদেশে কয়েক মাসে যে কাজ করেছি, এখানে যেমন দেখেছি সবকিছু, দল যা করছে এবং তাদের যে সম্ভাবনা—এটা আমার পছন্দ হয়েছে। এখানে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করার মতো কিছু আছে। এ জন্যই দায়িত্বটা নেওয়া।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকেই চলে যাচ্ছেন বলে বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা পালাবদলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এমন একটা দলের দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
সিমন্স: পালাবদল মানে হচ্ছে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এই দলটিতে যোগ দেওয়ার জন্য এটাকেই তাই ভালো সময় মনে করেছি। পরিবর্তনগুলো এনে যতটা সম্ভব সফলতা এনে দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে এখন। আমাদের এমন একটা দল দাঁড় করাতে হবে, যেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড় জানবে আমরা কীভাবে খেলতে চাই এবং কী করতে চাই।
অভিজ্ঞদের মধ্যে শুধু মুশফিকুর রহিমই এখনো টেস্ট খেলে যাচ্ছেন। তাঁর কাছে কী প্রত্যাশা থাকবে আপনার?
সিমন্স: আমি টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিককে তত দিনই খেলতে দেখতে চাই, যত দিন সে খেলতে চাইবে। কারণ, সে এমন একজন ক্রিকেটার, যে সব সময় সবকিছু নিখুঁতভাবে ও ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। যত বেশি সে খেলবে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো। মুশফিক যতক্ষণ মনে করবে টেস্ট ক্রিকেটকে সে যা দিতে চায়, তা দিতে পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত খেলে যাক। তাকে আমাদের দরকার।
চলমান এফটিপি এবং এরপর ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অনেক ম্যাচ খেলতে হবে বাংলাদেশকে। টানা ম্যাচের এই যাত্রায় কীভাবে এগোবেন, ভেবেছেন?
সিমন্স: প্রথমত দেখতে হবে আমাদের হাতে কেমন ক্রিকেটার আছে। তাদের ভালো ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তার আগে কিন্তু এ বছর একই সংস্করণে এশিয়া কাপ হবে। সবকিছু একসঙ্গে করতে হবে, যেন আপনি প্রয়োজনে তৈরি কাউকে পেতে পারেন। এ বছর তেমন টেস্ট ক্রিকেট নেই, কিন্তু আগামী বছর আপনাকে অনেক টেস্ট খেলতে হবে। সে জন্য স্কোয়াডটা তৈরি রাখতে হবে, অদলবদল করে খেলানোর প্রক্রিয়াটা যেন ভালো হয়, তা–ও খেয়াল রাখতে হবে।
কিন্তু সবাই তো সব সংস্করণে খেলবেন না। যাঁরা যখন যে সংস্করণে খেলবেন না, তাঁরা নিজেদের কীভাবে প্রস্তুত রাখবেন?
সিমন্স: যারা জাতীয় দলে থাকবে না, তখনো তাদের কাজ করতে হবে। বিষয়টা এমন হওয়া যাবে না যে জাতীয় দলে নেই মানেই কিছু করবে না। স্কিল নিয়ে কাজ করতে হবে আর যখনই ডাক আসবে, এটা নিশ্চিত থাকতে হবে যে তারা প্রস্তুত।
তিন সংস্করণের মধ্যে ওয়ানডেটাই বাংলাদেশ ভালো খেলে। কিন্তু দলটার সেই দক্ষতাও এখনো আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য যথেষ্ট নয়। আপনার কী পর্যবেক্ষণ?
সিমন্স: হয়তো ওরা নিয়মিত ৩০০ রান করতে পারছে না, যেটা করার কথা ছিল। আমার চোখে এটার অর্থই হচ্ছে যে এখানে কাজ করার জায়গা আছে। এরই মধ্যে তা শুরুও হয়েছে— ক্রিকেটারদের অনুশীলনে, আমরা কীভাবে খেলব ওই ভাবনাতেও। আমরা কিছু বিষয় বদলানোর চেষ্টা করছি, এর মধ্যে ওয়ানডেতে ৩০০ রান করাটাও আছে।
রান করতে না পারার এই বিষয়টা তো টি–টোয়েন্টি প্রসঙ্গেও চলে আসে…
সিমন্স: এখানেও একই ব্যাপার। সফল হতে হলে আপনাকে খেলাটা ঠিকভাবে খেলতে হবে। টি–টোয়েন্টিতে আমাদের ওই মানের তরুণ খেলোয়াড় আছে। তবে আমাদের সব সংস্করণ নিয়েই কাজ করতে হবে।
টেস্ট ক্রিকেট তো এখন আরও বেশি দ্রুতগতির হচ্ছে। এই সংস্করণে কীভাবে খেলতে চান?
সিমন্স: আপনাকে এটার সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হবে এবং নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। টেস্ট এখন দ্রুতগতির হয়ে যাচ্ছে, আমাদের খেলাটাও সে রকম হতে হবে। জ্যামাইকাতে দেখিয়েছি, আমাদের ওই আক্রমণাত্মক মানসিকতা আছে। যেসব দল দেশের বাইরে সফল— তারা র্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে ওঠে। আমরাও দেশের বাইরে ধারাবাহিকভাবে জেতা দলগুলোর ওই ব্র্যাকেটে ঢুকতে চাই।
আধুনিক ক্রিকেটে প্রধান কোচের ভূমিকাটা কেমন দেখেন আপনি?
সিমন্স: সবাই যেন তাদের পথে থাকে, প্রধান কোচকে এটাই দেখভাল করতে হয়। এটাও নিশ্চিত করতে হবে, দল হিসেবে কোন পথটা বেছে নেওয়া হবে, কীভাবে আমরা খেলব। ওই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে হবে এবং খেলোয়াড়দের বলতে হবে ওভাবে খেলার জন্য।
কোচিং নিয়ে আপনার দর্শন কী?
সিমন্স: সফল হতে চাইলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শুধু যে মাঠের ভেতরে তা নয়, বাইরেও। স্কিল নিয়ে তো পরিশ্রম করতেই হবে, মানসিক বিষয়টাও সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। যদি চাপ সামলে নিতে না পারেন, তাহলে একটা সময় ভুগবেন।
পেছন ফিরলে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রায় সব কোচই শেষ দিকে ক্রিকেটারদের কাছে, বোর্ডের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে গেছেন। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
সিমন্স: এসব নিয়ে একদমই ভাবছি না। জনপ্রিয়তা কখনো আমাকে কিছুতে সাহায্য করেনি, আবার কোথাও আটকেও রাখেনি। আমি দেখি দলের কী দরকার, তারা কী চায়। আমি নিশ্চিত করি খেলোয়াড়েরা যেন বুঝতে পারে সফল হওয়ার জন্য কী করা দরকার। সব সময় সফল হবেন না তা সত্যি, সব দলই হারে। কিন্তু আমরা কীভাবে কাজটা করছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। স্কোয়াডের বাইরে কে কী বলল, তা নিয়ে আমি ভাবি না। স্কোয়াডের সবাই জানি যে আমরা লড়াই করছি এবং সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছি।
আপনি স্থানীয় কোচদের কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন। তাঁদের এখন পর্যন্ত কেমন দেখলেন?
সিমন্স: তাঁদের সঙ্গে কাজ করাটা আমি উপভোগ করেছি। আমি যেহেতু জাতীয় দলের প্রধান কোচ, আমি যা করব, তা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব পর্যায়েই হবে। আমি চাই সব খেলোয়াড় এমন একটা ধরনে খেলুক, যেটা আমি জাতীয় দলে খেলাতে চাই। এ জন্য এখানে আমরা যা করছি, স্থানীয় কোচদেরও নিচের দিকে তা করতে হবে। স্থানীয় কোচরা কেউ যদি জাতীয় দলের অনুশীলন দেখতে চান অথবা এটার সঙ্গে যুক্ত হতে চান, আমি তাহলে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আমার দরজা সব সময় খোলা। ক্রিকেটারদের তৈরি করে জাতীয় দলে কিন্তু তাঁদেরই পাঠাতে হবে।
অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেনকে কেমন দেখছেন?
সিমন্স: সহজাত নেতা, ড্রেসিংরুমে তাকে সবাই সম্মান করে। সে কোন পথে চলতে চায়, তা দলের সবার কাছে পরিষ্কার থাকে, সবাই জানে সে কীভাবে খেলতে চায়। নাজমুল যখন ছিল না, তখন মিরাজ দায়িত্ব নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আপনার দলে যে নেতা আছে, এটা তারই প্রমাণ। মাঠে আপনার ৮ জন অধিনায়কের দরকার নেই। ৮ জন নেতা যদি থাকে, তারা যদি জানে কখন কী করতে হবে, তাহলেই যথেষ্ট। এমন হলে পালাবদলটাও সহজ হয়ে যাবে। আমার সবার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা হবে, দলীয়ভাবে বলবই। পালাবদলে কার কী ভূমিকা হবে তা–ও বলব।
আড়াই বছর পর বাংলাদেশ দলকে কোথায় দেখতে চান?
সিমন্স: আড়াই বছরের মধ্যে দুটি বিশ্বকাপ আছে। আমাদের সবকিছুই নির্ভর করবে দল হিসেবে আমরা একসঙ্গে হতে পারছি কি না তার ওপর। বিশ্বকাপের জন্য সবকিছু ফেলে রাখলে হবে না, এখনই কাজ শুরু করতে হবে। আমি খুশি হব যদি আমরা ওই ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারি, যেটা খেলতে চাই। আমরা সব ম্যাচে জিতব না। কিন্তু ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে আমাদের একটা স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করতে হবে। এটা করতে পারলে সবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফল হব।