একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর 
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ জীববিজ্ঞান ১ম পত্রের অধ্যায়-৫ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

# ব্যবহারিক ক্লাসে অর্পা অণুবীক্ষণ যন্ত্রে একটি সবুজ, সূত্রাকার অশাখ উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ করল যার কোষগুলো বেলনাকার এবং গার্ডল আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট বিদ্যমান। অন্যদিকে স্বপ্না আর একটি উদ্ভিদের জীবন্ত নমুনা প্রত্যক্ষ করল যার ওপরের দিকের অংশটি অনেকটা হাতার মতো এবং গোড়ার দিকে অংশটি কাণ্ডের মতো।
প্রশ্ন:
ক. ছত্রাক কাকে বলে?
খ. বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায় কী?
গ. অর্পার পর্যবেক্ষণকৃত উদ্ভিদটির অযৌন জনন বর্ণনা করো।
ঘ. অর্পা ও স্বপ্নার পর্যবেক্ষণকৃত উদ্ভিদ দুটির দৈহিক গঠনের বৈচিত্র্যতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ক. ছত্রাক ক্লোরোফিলবিহীন এমন একটি জীবগোষ্ঠী যারা বিভিন্ন পরিবেশে মৃতজীবী অথবা পরজীবী হিসেবে বসবাস করে এবং খাদ্যকে শোষণ করে দেহের অভ্যন্তরে নেয়।
উত্তর: খ. বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়গুলো হলো:
১. বেশির ভাগ উজ্জ্বল বর্ণের প্রজাতিগুলো বিষাক্ত হয়ে থাকে। ২. অম্লগন্ধযুক্ত ও ঝাঁজালো প্রজাতিগুলো বিষাক্ত। ৩. বিষাক্ত প্রজাতিগুলোর ব্যাসিডিওস্পোর বেগুনি রঙের। ৪. বিষাক্ত মাশরুম কখনো প্রখর রোদে জন্মায় না। ৫. কাঠের ওপর জন্মায় এমন প্রজাতিগুলো বিষাক্ত।

Ulothrix -এর অযৌন জননের বিভিন্ন পর্যায়
Ulothrix -এর অযৌন জননের বিভিন্ন পর্যায়

উত্তর: গ. অর্পার পর্যবেক্ষণকৃত শৈবালটি Ulothrix। জুস্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে Ulothrix-এর অযৌন জনন সম্পন্ন হয়। কখনো কখনো অ্যাপ্ল্যানোস্পোর সৃষ্টির মাধ্যমেও অযৌন জনন হয়ে থাকে। জুস্পোরগুলো সাধারণত চার ফ্লাজেলাযুক্ত। যে কোষ থেকে জুস্পোর উৎপন্ন হয় তাকে জুস্পোরাঞ্জিয়াস বলে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া যেকোনো কোষ থেকে জুস্পোর সৃষ্টি হতে পারে। প্রজাতির ওপর নির্ভর করে প্রত্যেক জুস্পোরাঞ্জিয়াম থেকে ১-৩২টি জুস্পোর সৃষ্টি হয়। একটি মাত্র জুস্পোর সৃষ্টি হলে কোষের সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাস্টই একটি জুস্পোরে রূপান্তরিত হয়। একাধিক জুস্পোর উৎপন্ন হলে জুস্পোরাঞ্জিয়ামের প্রোটোপ্লাস্ট একটু সংকুচিত হয় এবং লম্বালম্বিভাবে দুইভাগে বিভক্ত হয়। প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ৩২টি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট সৃষ্টি পর্যন্ত এই বিভাজন চলতে পারে। প্রতিটি অপত্য প্রোটোপ্লাস্ট তখন চার ফ্লাজেলাযুক্ত জুস্পোরে রূপান্তরিত হয়। সরু কোষের প্রজাতি থেকে সৃষ্ট সব জুস্পোর একই প্রকার হয় কিন্তু মোটা কোষের প্রজাতি থেকে দুই প্রকার জুস্পোর উৎপন্ন হয়—(১) মাইক্রোজুস্পোর এবং (২) ম্যাক্রোজুস্পোর। জুস্পোরগুলো নাশপাতি আকৃতির। একটি ভেসিকল দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় জুস্পোরগুলো জুস্পোরাঞ্জিয়ামের প্রাচীরের গায়ে উৎপন্ন হয়ে ছিদ্রপথে বের হয়ে আসে। ডেসিকলের অবলুপ্তির পর এরা মুক্তভাবে ভেসে বেড়ায়। দুই-ছয় দিন সন্তরনের পর জুস্পোরের ফ্লাজেলাযুক্ত মাথাটি কোনো জলজ বস্তুর সঙ্গে আবদ্ধ হয়। আবদ্ধ হওয়ার পর এরা আস্তে আস্তে ফ্লাজেলাবিহীন হয়। পরে চারদিকে একটি প্রাচীর নিঃসরণ করে এবং ক্রমে দীর্ঘ হয় ও বিভাজনের মাধ্যমে নতুন Ulothrix ফিলামেন্ট সৃষ্টি করে।
প্রতিকূল পরিবেশে জুস্পোরগুলো জুস্পোরাঞ্জিয়াম থেকে নির্গত হয় না, অধিকন্তু এদের চারদিকে একটি প্রাচীর গঠন করে অ্যাপ্ল্যানোস্পোরে পরিণত হয়। কখনো কখনো কোনো একটি কোষের সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাস্ট গোলাকার হয় এবং চারপাশে একটি পুরু প্রাচীর গঠন করে অ্যাকাইনিটিতে পরিণত হয়। একে হিপনোস্পোর বলে। অনুকূল পরিবেশে এরা এদের পুরু প্রাচীর বিদীর্ণ করে বের হয়ে আসে এবং অংকুরায়ন ও বিভাজনের মাধ্যমে নতুন ফিলামেন্টে পরিণত হয়।

Ulothrix ৈশবাল
Ulothrix ৈশবাল

উত্তর: ঘ. অর্পার পর্যবেক্ষণকৃত শৈবালটি Ulothrix। Ulothrix একটি ফিলামেন্টাস এবং অশাখ সবুজ শৈবাল। এর দেহ এক সারি খর্ব ও বেলনাকার কোষ দ্বারা গঠিত। এর গোড়ার কোষটি লম্বাকৃতির, বর্ণহীন এবং নিচের দিকে ক্রমশ সরু। একে হোল্ডফাস্ট বলে। হোল্ডফাস্ট দ্বারা শৈবালটি কোনো বস্তুর সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। ফিলামেন্টের প্রতিটি কোষের একটি সুনির্দিষ্ট কোষপ্রাচীর আছে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া প্রতিটি কোষের একটি নিউক্লিয়াস আছে, একটি গার্ডল আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট আছে এবং এক বা একাধিক পাইরিনয়েড আছে। ক্লোরোপ্লাস্টটি কোষকে আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে বেস্টন করে রাখে। হোল্ডফাস্ট ছাড়া অন্য যেকোনো কোষ আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হতে পারে। ফলে ফিলামেন্ট দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
অন্যদিকে স্বপ্নার পর্যবেক্ষণকৃত ছত্রাকটি Agaricus। মাইসেলিয়াম থেকে ছাতার মতো বায়বীয় অংশ সৃষ্টিকে ফ্রুকটিফিকেশন বলে এবং ওই বায়বীয় অংশকে Agaricus-এর ফ্রুটবডি বলা হয়। Agaricus এর দেহ দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা: ১. দৈহিক অংশ বা মাইসেলিয়াম ২. জনন অংশ বা ফ্রুটবডি।
মাইসেলিয়াম: মাইসেলিয়াম অত্যন্ত শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ও সূত্রাকার এবং মাটি বা জৈব বস্তুর ভেতরে অবস্থান করে। মাইসেলিয়াম অসংখ্য সাদা বর্ণের, প্রস্থ প্রাচীরযুক্ত হাইফি নিয়ে গঠিত। হাইফার কোষগুলোতে দানাদার প্রোটোপ্লাজম, একাধিক নিউক্লিয়াস, ছোট ছোট গহ্বর ও সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে তেলবিন্দু অবস্থান করে। অনেক সময় হাইফিগুলো একত্রে জড়াজড়ি করে দড়ির মতো গঠন তৈরি করে। একে রাইজোমর্ফ বলে।

Agaricus ছত্রাকের ফ্রুটবডি এবং বিভিন্ন অংশ
Agaricus ছত্রাকের ফ্রুটবডি এবং বিভিন্ন অংশ

ফ্রুটবডি: ফ্রুটবডি মাটি বা আবাদমাধ্যম থেকে ওপরে বৃদ্ধি পায়। এর কয়েকটি অংশ থাকে। গোড়ার দিকে কাণ্ডের মতো অংশকে স্টাইপ এবং ওপরের দিকে ছাতার মতো অংশকে পাইলিয়াস বলে। পাইলিয়াসের নিচে ঝুলন্ত পর্দার মতো অংশকে গিল বলা হয়। স্টাইপের মাথায় যে চক্রাকার অংশ রয়েছে তার নাম অ্যানুলাস। Agaricus এর ফ্রুটবডিকে ব্যাসিডিয়োকার্প বলে। গিলে বহু ব্যাসিডিয়াম তৈরি হয়। প্রতিটি ব্যাসিডিয়ামের শীর্ষে আঙুলের মতো চারটি অংশের মাথায় একটি করে ব্যাসিডিয়োস্পোর তৈরি হয়। অনুকূল পরিবেশে স্পোর অংকুরিত হয়ে নতুন মাইসেলিয়ামের জন্ম দেয়।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, অর্পার পর্যবেক্ষণকৃত Ulothrix শৈবাল এবং স্বপ্নার পর্যবেক্ষণকৃত Agaricus ছত্রাক দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে বৈচিত্র্যময়।

প্রভাষক, রূপনগর মডেল স্কুল ও কলেজ, ঢাকা