অধ্যায়-১
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের ১ম অধ্যায় থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
# সেদিন পত্রিকার শিরোনামে জেরিন একটি দেশের দাঙ্গার খবর পড়েছে। পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে ছিল হত্যা, ভাঙচুর, লুটপাট আর বিশৃঙ্খলার বীভত্স চিত্র। এসব দেখে জেরিনের মনে হলো, এরা আমাদের কী সভ্যতা শিখিয়েছে? এরা তো জোর করে আমাদের শাসন করেছিল। তারা আমাদের ভারতবর্ষ থেকে পুঁজি পাচার আর শোষণ নিপীড়নে মেতে উঠেছিল। তারা মুরব্বি সেজে আমাদের সভ্যতা শেখাতে চেয়েছিল। জেরিনের বারবার মনে হয়, তারা সম্পদের যে প্রার্চুয গড়ে তুলেছে, তা আমাদের দেশ থেকে নেওয়া।
প্রশ্ন
ক. ভারতবর্ষ কত সালে স্বাধীন হয়?
খ. মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকে জেরিন কাদের শাসনের কথা বলতে চেয়েছে? তাদের শাসনব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে জেরিনের দৃষ্টিতে যে শাসনব্যবস্থার কথা ফুটে উঠেছে, ইতিহাসে তাদের পরিণতি কী হয়েছে? বিশেষণ করো।
উত্তর: ক. ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়।
উত্তর: খ. মুসলমানরা শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন মৌলিক দাবিদাওয়া আদায়ে দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল। ফলে, তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মুলমানদের রাজনৈতিক দাবিদাওয়া ও অধিকার ইংরেজ শাসকদের কাছে তুলে ধরার জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর: গ. উদ্দীপকে জেরিন ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাসনের কথা বলতে চেয়েছে। তার বক্তব্যে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসন-শোষণ, জুলুম-নির্যাতন আর সম্পদ লুণ্ঠনের ইতিহাস ব্যক্ত হয়েছে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধে পরাজয় ও মর্মান্তিক মৃত্যু এবং ইংরেজদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এ দেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা ২০০ বছর ধরে এ দেশের মানুষকে পরাজিত করে রেখেছিল। তারা সভ্য জাতি হিসেবে নিজেদের ভাবত। তাই তারা আমাদের সভ্যতা শিখিয়েছে। অথচ সভ্যতার নামে চরম অসভ্য আচরণ করেছে তারা এ দেশবাসীর ওপর। এ দেশের কামার-কুমোর, কৃষক, জেলে, তাঁতি আর খেটে খাওয়া মানুষের রক্ত পানি করা সম্পদ তারা মুনাফা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ইংরেজরা এ দেশে প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে তা আদায়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। অথচ এ দেশ থেকে সম্পদ পাচার করে নিজ দেশে সম্পদের প্রার্চুয তৈরি করেছিল। ইংরেজ শাসনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের সম্পদ পাচার।
উত্তর: ঘ. উদ্দীপকে জেরিনের দৃষ্টিতে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার কথা ফুটে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত এ দেশে ব্রিটিশদের পরিণতি ভালো হয়নি। এ দেশের স্বাধীনচেতা মানুষ তাদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছে। তাদের অন্যায়ের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে। ফলে, তারা এ দেশ থেকে পরাজিত হয়ে বিতাড়িত হয়েছিল। ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন-শোষণ আর নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশের মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছিল। হিন্দু-মুসলমান, দলমত-নির্বিশেষে বুঝতে পেরেছিল ব্রিটিশরা আমাদের শত্রু। তাদের হাতে আমাদের জীবন ও দেশের সম্পদ নিরাপদ নয়। ফলে, সিপাহী বিদ্রোহ, অসহযোগ আন্দোলন, নীল বিদ্রোহসহ তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। চালানো হয় তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যা, সশস্ত্র যুদ্ধবিগ্রহ। রাজনৈতিক দল গঠন ও আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠে। আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ বুঝিয়ে দেয়, তারা স্বাধীনতা চায়। ফলে, বাধ্য হয়ে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার এ দেশ ছাড়ে। ২০০ বছরের ইংরেজদের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা লাভ করে।