তিন রূপে শেরিল

শেরিল স্যান্ডবার্গ
শেরিল স্যান্ডবার্গ

বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ক্ষমতাবান নারীর তালিকায় শেরিল স্যান্ডবার্গ চতুর্থ। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মেলিন্ডা গেটসের পরে তাঁর অবস্থান। শেরিল ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও)। তার আগে গুগলে ছয় বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে গুগলের বিজ্ঞাপনী নেটওয়ার্ক। ২০০৮ সালে ফেসবুকে যোগ দিয়ে রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী নির্বাহী তিনি। তবে এই এক পরিচয়ে তাঁকে বাঁধা যায় না। শেরিল স্যান্ডবার্গের আরেক পরিচয়—তিনি লেখিকা। তাঁর বেস্ট সেলার বই লিন ইন ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় বই অপশন বি এসেছে গত বছরের এপ্রিলে। লিন ইন বইয়ের অভূতপূর্ব সাড়া দেখে একই নামে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে সেখানেও সফল শেরিল স্যান্ডবার্গ। তাঁর তিন পরিচয়ের কথা জানিয়েছেন শাওন খান

নির্বাহী শেরিল
২০০৭ সালের এক বড়দিনের উৎসবে শেরিল স্যান্ডবার্গের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের। সে সময় ফেসবুকে সিওও পদের জন্য কাউকে খুঁজছিলেন না জাকারবার্গ। তবে শেরিলের সঙ্গে দেখা করার পর ফেসবুকের সিওও পদের জন্য শেরিলকে উপযুক্ত মনে করেন মার্ক। ২০০৮ সালের মার্চে শেরিলকে ফেসবুকে নিয়োগের কথা প্রকাশ করেন তিনি। জাকারবার্গের আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করে গুগল ছেড়ে ফেসবুকে যোগ দেন শেরিল। ফেসবুকে এসেই লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে মন দেন শেরিল। ফেসবুক থেকে নানা উপায়ে বিজ্ঞাপনী আয় করার পরিকল্পনা শেরিলের। পরবর্তী দুই বছরে লাভের মুখ দেখে ফেসবুক। ২০১২ সালে শেরিল ফেসবুক পরিচালনা পরিষদের অষ্টম এবং প্রথম নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে শেরিলের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬০ কোটি ডলার।

মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে শেরিল
মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে শেরিল

উদ্যোক্তা শেরিল
শেরিল তাঁর লেখা লিন ইন বইটির সাফল্যে অবাক হন। পিছিয়ে পড়া নারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যাটা যে বিশাল, তা অনুভব করেন। তাই নারীদের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে একটি অলাভজনক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে লিন ইন ফাউন্ডেশন নামে যাত্রা শুরু করে সে সংস্থা। লিন ইন ফাউন্ডেশনে নারী উদ্যোক্তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হলো, নারীদের অনুপ্রাণিত করা ও তাঁদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করা। লিন ইন ফাউন্ডেশনের আওতায় বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় ৪০ হাজার নারীর কমিউনিটি রয়েছে। পাশাপাশি শেরিল স্যান্ডবার্গ অ্যান্ড ডেভ গোল্ডবার্গ ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন নামে একটি পারিবারিক দাতব্য সংস্থাও পরিচালনা করেন শেরিল। প্রতিবছর বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কাজে কোটি কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিয়ে থাকে শেরিলের সংস্থাটি।

লেখক শেরিল
২০১০ সালে টেড–টকের মঞ্চে নারীদের পিছিয়ে থাকার বিভিন্ন কারণ নিয়ে কথা বলেন শেরিল স্যান্ডবার্গ। তাঁর সেই কথাগুলো বিশ্বের অসংখ্য নারীর মনে ধরে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই শেরিল স্যান্ডবার্গ নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে একটি বই লেখেন। নারীদের ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বে এগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বইটিতে। ২০১৩ সালের ১১ মার্চ প্রথম প্রকাশিত হয় শেরিলের লেখা লিন ইন: উইমেন, ওয়ার্ক অ্যান্ড দ্য উইল টু লিড নামের বইটি। আর এই বইটিই সে বছরের সবচেয়ে বেশিবার বিক্রীত হওয়া বই। প্রায় ১০ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয় ২০১৩ সালেই। বইটি অসংখ্য পেশাদার নারীকে তাঁদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহস জুগিয়েছে, অনুপ্রাণিত করেছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে শেরিলের লেখা দ্বিতীয় বই অপশন বি প্রকাশিত হয়।