এনিড ব্লাইটনের সব বই আমার প্রিয়

গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী
গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী

যখন থেকে পড়তে শিখেছি, তখন থেকেই বই আমার নিত্যসঙ্গী। আমাদের বাড়িতে বই পড়ার চমৎকার একটা পরিবেশ ছিল। আব্বা হরেক রকমের বই কিনে আনতেন আমার জন্য। কখনো জন্মদিন উপলক্ষে, কখনো ঈদে, আবার কখনো কোনো উপলক্ষ ছাড়াই। প্রায়ই আব্বা-আম্মা বিভিন্ন বই নিয়ে আমাদের সামনে আলোচনা করতেন। হয়তো সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে বসেছি—আব্বা আম্মাকে বললেন, ‘জানো, আজ এই বইটা পড়েছি। এর চরিত্রগুলো এত মজার! খুব ভালো লাগল।’ যে বইটির প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, সেটি টেবিলের ওপরেই থাকত। আমরা বইটার প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতাম। ভাবতাম, হয়তো এটা ছোটদের পড়া নিষেধ। তাই লুকিয়ে পড়তাম। কিন্তু বইয়ের পাতা উল্টিয়ে দেখতাম, কিসের কি! এটা যে শিশুতোষ বই। অনেক সময় আম্মা আমাদের শুনিয়ে আব্বাকে বলতেন, ‘এই জানো, আজ রিডার্স ডাইজেস্ট পড়লাম। একটি শব্দের নতুন একটি অর্থ শিখলাম। এর মানেটা যে এটাও হয়, তা আগে জানতাম না!’ আমরা খুঁজে খুঁজে সেটা দেখতে শুরু করলাম। সঙ্গে সঙ্গে শব্দটি শিখে নিলাম। এখন বড় হয়ে বুঝেছি, ওই শিশুতোষ বই আর নতুন নতুন শব্দ নিয়ে তাঁরা কেন আমাদের সামনে আলোচনা করতেন! এটা ছিল আমাদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করতে তাঁদের একটি অভিনব কৌশল। এ রকমভাবে কত যে নতুন নতুন বই পড়েছি আর অজানা বিষয় শিখেছি, তার ইয়ত্তা নেই।
সে সময় আব্বার দেওয়া বই ছাড়াও স্কুলের পাঠাগার, ব্রিটিশ কাউন্সিলের বই বেশি পড়তাম।
প্রিয় লেখকদের মধ্যে প্রথমেই বলা যায় উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাম। তারপর এনিড ব্লাইটন। আমি তাঁর মস্ত বড় ভক্ত। তাই এখনো যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, আমার প্রিয় লেখক কে? আমি এক নিঃশ্বাসে বলি, এনিড ব্লাইটন। তাঁর সব, সব বই আমার প্রিয়। সেই শৈশবে তাঁর বই পড়েছি। কিন্তু এখনো ভালো লাগা রয়ে গেছে। তিনি মূলত শিশুতোষ বই লিখতেন। তাঁর ফেমাস ফাইভ গোয়েন্দা সিরিজ আমার খুব প্রিয় ছিল। সেখানে চরিত্র ছিল পাঁচটি—জুলিয়ান, অনি, ডিক, জর্জিনা, কিরিন ও টিমি। এ ছাড়া এডিন ব্লাইটনের দি অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ ও দ্য সিক্রেট সিরিজও বেশ ভালো লাগত।

প্রিয় বই
প্রিয় বই


তারপর তো বড় হয়ে অনেক অনেক বই পড়তে হয়েছে। তবে এখন আমার পেশা-সংশ্লিষ্ট বই-ই পড়তে হয়। তাই বিপণন আর বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত বই-ই বেশি পড়ি। এ রকম একটি বই ডেভিড ওগেলভির কনফেশনস অব এন অ্যাডভারটাইজিং ম্যান। এটি আমি পড়েছি সত্তরের দশকে। তখন সবে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছি। বিপণন-বিজ্ঞাপন নিয়ে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। হাতে এল এই বই। পড়লাম। আর সত্যি সত্যি বইটি আমায় অন্য এক আলোর পথ দেখাল। স্বপ্ন দেখতে শেখাল। বলতে গেলে হারতে হারতে জিতে যাওয়ার মন্ত্র শেখাল বইটি। এখানে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা, তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, নানা সময়ে নানা ভুল সিদ্ধান্ত আর সেটা কীভাবে তিনি মোকাবিলা করেছেন, তার বর্ণনা ছিল। এটা এককথায় অসাধারণ! আজও সেই বই আমার জীবনের পাথেয় হয়ে আছে।
 অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার