মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ-২৭। আগামী শুক্রবার সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি কার্যকর জলবায়ু চুক্তি সই করার আহ্বান জানিয়েছেন কপ-২৭-এর প্রেসিডেন্ট সামেহ হাসান শাউক্রি। আজ সোমবারের আলোচনায় তিনি এ বিষয়ে জলবায়ু আলোচকদের সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববাসী দেখছে, দ্রুত একটি কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে।’ খবর রয়টার্স ও এএফপির।
আলোচক ও কূটনীতিকদের উদ্দেশে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কপ-২৭-এর প্রেসিডেন্ট সামেহ হাসান বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। শুক্রবার শার্ম আল-শেখে সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই একটি সমন্বিত, উচ্চাভিলাষী ও ভারসাম্যমূলক ফলাফল বের করে আনতে হবে।’
সামেহ হাসান দেশগুলোর উদ্দেশে আরও বলেন, ‘সময় এখন আর আমাদের পক্ষে নেই। বিশ্ববাসী এই আলোচনার দিকে তাকিয়ে আছে। আসুন, সময় শেষ হওয়ার আগে একযোগে এগিয়ে যাই।’
কপ-২৭-এর উদ্বোধনী আয়োজনে একই সুরে কথা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি। দ্রুত ও একযোগে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
অন্যদিকে কপ-২৭ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘মানবজাতির সামনে দুটি কঠিন বিকল্প রয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করা কিংবা সম্মিলিত আত্মহত্যা।’
ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ২০০৯ সালে বসেছিল কপ-১৫ জলবায়ু সম্মেলন। ওই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির শিকার দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো সেই প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি। তাই এবারের কপ-২৭ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে সোচ্চার হওয়ার দাবি উঠেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে দেশে দেশে সবুজ অর্থনীতি (গ্রিন ইকোনমি) চালু, জ্বালানি-শিল্পনীতিতে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে এবারের সম্মেলনের অর্থায়নবিষয়ক কমিটির কো-চেয়ার জাহের ফকির বলেন, আগামী ১০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ১০ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা পর্যাপ্ত নয়।
বিশেষ তহবিল গঠন
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তা দেওয়ার জন্য গতকাল কপ-২৭ সম্মেলন থেকে একটি বিশেষ স্কিম বা তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘গ্লোবাল শিল্ড অ্যাগেইনস্ট ক্লাইমেট রিস্কস’ নামের এই তহবিলের আওতায় ২০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সরবরাহ করা হবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলো জোট জি-৭-এর সদস্যসহ কয়েকটি দেশে এই উদ্যোগে অর্থ দেবে। এ বিষয়ে ঘানার অর্থমন্ত্রী কেন ওফোরি-আত্তা সম্মেলনে বলেন, এটা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি উদ্যোগ ছিল।