ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দায় জি–২০ নেতারা

জি–২০ সম্মেলনের বিরতিতে বৃক্ষরোপন করেন নেতারা। বুধবার বালিতে
ছবি : রয়টার্স

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কঠোর নিন্দা জানালেন বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০-এর নেতারা। বুধবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দুই দিনের জি-২০ সম্মেলনের সমাপনীতে নেতাদের এক ঘোষণায় ইউক্রেন থেকে নিঃশর্ত রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর নেতারা মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে সাবধানে এগোনোর বিষয়ে সম্মত হন। তবে সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি।

রাশিয়া জি-২০ সদস্যভুক্ত দেশ। রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে সম্মেলনে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়, অধিকাংশ সদস্য ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ঘোষণার বিরোধিতা করা হয়। ঘোষণায় পরিস্থিতি ও নিষেধাজ্ঞা ঘিরে ভিন্নমত ও মূল্যায়নের বিষয়টিরও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনজন কূটনীতিক বলেছেন, সম্মেলনে ঘোষণাটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

জি-২০-এর নেতারা ঘোষণায় আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ছিল অগ্রহণযোগ্য। শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন এ বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা মেনে চলা অপরিহার্য।

সম্মেলনের আয়োজক দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ সবচেয়ে বিতর্কিত সমস্যা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল খুব কঠিন। শেষ পর্যন্ত জি-২০-এর নেতারা ঘোষণার আধেয় বিষয়ে সম্মত হন। এতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা জানানো হয়। কারণ, তা দেশের সীমানা ও অখণ্ডতা লঙ্ঘন করেছে। সম্মেলনে এ ঘোষণার বিষয়ে চীনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

সম্মেলনে জরুরি বৈঠক

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, গতকাল সম্মেলন চলাকালে জরুরি বৈঠক করেন নেতারা। তাঁদের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি। গত মঙ্গলবার ইউক্রেন সীমান্তের কাছে পোল্যান্ডের মাটিতে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুজন নিহত হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তথ্য বলছে, রাশিয়া থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়নি।

এদিকে সম্মেলনের মধ্যেই কিছুটা বিরতি নিয়ে জি-২০-এর নেতারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জলবায়ু সংকটের বিষয়ে তাঁদের লড়াই জারি রাখার ইঙ্গিত দেন। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পৃথক বৈঠক করেন। তাঁরা পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। মূল সম্মেলনের পাশে বেশ কিছু পার্শ্ব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান

সম্মেলনের শুরু থেকেই দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে নিন্দা জানাতে তাদের চাপ অব্যাহত রেখেছে। সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতাদের অনেকে বলেছেন, করোনা মহামারির ধাক্কার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে গেছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার ভূরাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।

তবে পশ্চিমা মিত্রদের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্মেলনকে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিনিধি হিসেবে জি-২০ সম্মেলনে উপস্থিত হন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি আগেভাগেই সম্মেলনস্থল ছেড়ে চলে যান। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে ঠিকই, কিন্তু তা হাইব্রিড যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সৃষ্টি করেছে পশ্চিমারা এবং তারা এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়াকে হুমকিতে ফেলেছিল।

পরবর্তী সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ নরেন্দ্র মোদির

বালিতে গতকাল ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর কাছ থেকে পরবর্তী এক বছরের জি-২০-এর সভাপতিত্বের ভার গ্রহণ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১ ডিসেম্বর থেকে এই দায়িত্ব পালন করবে ভারত। আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হবে এই জোটের শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষেক হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ তা গ্রহণ করেছে। এদিকে সম্মেলনের অবসরে ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে চিরায়ত প্রথা ভঙ্গ করেছেন। বিদেশে গিয়ে দেশীয় রাজনীতির অবতারণা করেছেন। আন্তর্জাতিক আসরে দেশীয় রাজনীতি টেনে এনেছেন।

প্রবাসীদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ২০১৪ সালের আগে ভারত ছিল এক রকম, তার পর থেকে অন্য রকম হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগের ভারত ছিল স্লথ। পরের ভারত গতিশীল। আজকের ভারত তীব্র গতিতে ধাবমান। আজকের ভারত দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন