‘খাবারের অভাবে আমরা সবাই মারা যাব’

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর একটি বাজারে কাজ করছেন শ্রমিকেরা
ছবি : রয়টার্স

‘গ্যাস-কেরোসিন ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারছি না। এর শেষ কোথায়? এটা নিশ্চিত, খাবারের অভাবে আমরা সবাই মারা যাব।’ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় জ্বালানি কিনতে আসা গাড়িচালক মোহাম্মদ শাঝলির এ বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে দেশটিতে কী অবস্থা বিরাজ করছে।

আজ শুক্রবার একটি দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ওই গাড়িচালক আরও বলেন, ‘এই লাইনে ৫০০ জনের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ জ্বালানি গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০০টি।’ তিন দিন লাইনে দাঁড়ানোর পর পাঁচ সদস্যের পরিবারে রান্নার জন্য সিলিন্ডার কিনতে পেরেছেন তিনি। প্রতিদিনই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কলম্বোবাসীকে জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। কিন্তু এরপরও অনেকে পাচ্ছেন না জ্বালানি।
কলম্বোর ফল ও সবজি বিক্রেতা এপিডি সুমনাভাথি বলেন, ‘জীবন কতটা কঠিন হয়ে গেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে দুই মাস পর আর এখানে থাকতে পারব না।’

অর্থনৈতিক দুরবস্থার জেরে তীব্র খাবারের সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সংকট নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী মৌসুমে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে রাসায়নিক সার আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। এর জেরে দেশটিতে কৃষি উৎপাদন অনেক কমে যায়। এ অবস্থান থেকে সরে আসছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল। গত বৃহস্পতিবার টুইটে তিনি বলেন, ‘চলতি ইয়ালা মৌসুমের (মে থেকে আগস্ট) প্রয়োজনীয় সার কেনার সময় আর নেই। তবে আসন্ন মাহা (সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) মৌসুমে সারের সংকট থাকবে না। আমি আন্তরিকভাবে সবাইকে এই সংকটের গভীরতা বোঝার অনুরোধ করছি।’

আরও পড়ুন

খাদ্যসংকটে ভুগতে থাকা শ্রীলঙ্কা আরও বেশি অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি দেশটি স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন খাদ্যশস্য–সংকটেও পড়ে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কা কাউন্সিল ফর অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ পলিসির প্রেসিডেন্ট গামিনি সেনানায়েকে বলেন, ‘খাদ্যের দিক থেকে আগামী কয়েক মাস খুব কঠিন সময় আসবে। খাদ্যসংকট দেখা দেবে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি ৪০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। চাহিদা বাড়তি থাকলেও এ সময় জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ সীমিত থাকতে পারে। ফলে শিগগিরই মিটছে না চলমান সংকট।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশে। এ সময় খাবারের দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানা ও প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে গতকালও কলম্বোয় বিক্ষোভ হয়েছে।

আরও পড়ুন

নতুন ৯ মন্ত্রী নিয়োগ

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে আজ শুক্রবার তাঁর জোট সরকারে নতুন ৯ মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য ও পর্যটনমন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সর্বদলীয় সরকারের নতুন ৯ মন্ত্রীকে শপথ পড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।

তুমুল জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করায় চলতি মাসে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক রনিল বিক্রমাসিংহে।

আরও পড়ুন