চীন আক্রমণ করলে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে জাপানের টোকিওতে রয়েছেন জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

চীন প্রতিবেশী তাইওয়ানে সামরিক হামলা চালালে চুপ করে বসে থাকবে না যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানকে রক্ষায় প্রয়োজনে চীনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। আজ সোমবার এমন মন্তব্যই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর জবাবে চীন বলেছে, তাদের জনগণের দৃঢ় সংকল্প ও সক্ষমতাকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারেন না।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল হয়ে এখন জাপানের টোকিও সফর করছেন বাইডেন। আগামীকাল মঙ্গলবার রাজধানী টোকিওতে কৌশলগত নিরাপত্তা জোট কোয়াডের বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। এর আগে আজ তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে দুই নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বাইডেনের কাছে জানতে চান, তাইওয়ানের ভূখণ্ডে চীন সামরিক আগ্রাসন চালালে যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা ব্যবস্থা নেবে কি না? জবাবে বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা “এক চীন নীতি” মেনে নিয়েছি। এ–সংক্রান্ত চুক্তিও করেছি। কিন্তু চীন যদি সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে তাইওয়ান দখলের চেষ্টা করে, তাহলে সেটা হবে অগ্রহণযোগ্য।’ তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন বাইডেন।

চীনকে সতর্ক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বেইজিং এখন আগুন নিয়ে খেলছে। ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে মস্কোকে দীর্ঘমেয়াদে ভুগতে হবে। তাইওয়ানের ভাগ্য ইউক্রেনের মতো হলে চীনকেও এমন মূল্য দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। ২৩ মে, জাপানের টোকিওতে
ছবি: রয়টার্স

তাইওয়ানকে চীন নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। তবে তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে। তাইওয়ান সরকারকে অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দেওয়ার বিষয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও দেশটির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এখন বাইডেনের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি তাইওয়ান ইস্যুতে নীতি পরিবর্তন করে কঠোর পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন

এর আগে গত অক্টোবরে বাইডেন তাইওয়ানের নিরাপত্তা নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে অনেকটা একই সুরে কথা বলেছিলেন। তবে তখন হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আসছে না।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া মিলে কোয়াড গঠন করেছে। চীনকে মোকাবিলায় আজ ১৩টি দেশ নিয়ে ‘ইন্দো–প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে নতুন একটি বাণিজ্য উদ্যোগের ঘোষণা দেন বাইডেন।

আরও পড়ুন

তাইওয়ানে সম্ভাব্য চীনা আগ্রাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাও। এ জন্য জাপান প্রতিরক্ষাসক্ষমতা বাড়াচ্ছে বলে বাইডেনকে অবহিত করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘শক্তিশালী জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র–জাপানের শক্তিশালী বন্ধুত্ব এ অঞ্চলে বড় শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।’

অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলনে ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার প্রয়োজন বলে বাইডেন একমত হয়েছেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় পরিষদ আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। আমি আশা করি, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে জাপানের অন্তর্ভুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন সমর্থন দেবে।’

আরও পড়ুন

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে বাইডেনের হুঁশিয়ারির কড়া জবাব দিয়েছে বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন আজ বাইডেনের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, নিজস্ব ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীনের জনগণের দৃঢ় সংকল্প ও সক্ষমতাকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারেন না। বিষয়টি নিয়ে চীন কখনোই আপস করবে না, ছাড় দেবে না।

তিনি আরও বলেন, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এটা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয় নিয়ে বাইরের কারও কথা বলার অধিকার নেই। চীন সব সময় তার ১৪০ কোটি জনগণের শক্তি নিয়ে জাতীয় স্বার্থরক্ষা করে যাবে।

আরও পড়ুন