তিয়েনআনমেন বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়া কমিউনিস্ট নেতা বাও তং মারা গেছেন

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বর্ষীয়ান নেতা বাও তং
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বর্ষীয়ান নেতা বাও তং মারা গেছেন। গত বুধবার ৯০ বছর বয়সে বেইজিংয়ে নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাও–এর ছেলে বাও পু সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। খবর বিবিসির। 

১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রের দাবিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত ছাত্র-শ্রমিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নজিরবিহীন প্রতিবাদ করেছিলেন বাও। এ জন্য তাঁকে সাত বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী সদস্য হয়েও তিয়েনআনমেন বিক্ষোভে সামিল হওয়ায় ওই সময় নিজ দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন বাও। কারাগার থেকে বেরিয়ে শেষ জীবনটা নিভৃতে কেটেছে তাঁর। 

ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের নির্দেশে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা যেমন চীনে নিষিদ্ধ, তেমনি দেশটিতে বাওকে নিয়েও কেউ প্রকাশ্যে আলোচনা করেন না। দেশটির সামাজিকমাধ্যমে বাওয়ের নাম লিখে অনুসন্ধান করাকে বিপদ বিবেচনা করা হয়। সরকারের রোষানলে পড়ার ভয় থাকে। তাই চীনের নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাওকে চেনেন না, তাঁর নাম জানেন না। 

এমনকি মৃত্যুর পরেও দেশটিতে বাওকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শোক প্রকাশ করেনি চীন সরকার ও দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি। তবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চীনা অধিকারকর্মী ও গণতন্ত্রকামীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাওয়ের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। 

তিয়েনআনমেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাবেক ছাত্রনেতা ওয়াং দান টুইটে বলেন, বাও তং ছিলেন একজন রাজনৈতিক সংস্কারক ও বিদ্রোহী। চীনের দুয়ার খুলে দেওয়ার জন্য তিনি নিজ দলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অবস্থান নিয়েছিলেন।  

বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ার
ছবি: রয়টার্স

বাও তংয়ের জন্ম ১৯৩২ সালে, চীনের পূর্বাঞ্চলের ঝেজিয়াং প্রদেশে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। আশির দশকে দলের ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। ওই সময় কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ঝাও জিয়াং। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বাও। পরবর্তীতে বাও তাঁর রাজনৈতিক সচিব হন। চীনের প্রভাবশালী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দলটির রাজনৈতিক সংস্কারবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন বাও।  

আরও পড়ুন

আশির দশকজুড়ে চীন সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টিতে দুর্দান্ত প্রতাপ ছিল বাওয়ের। তবে সবকিছু বদলে যায় ১৯৮৯ সালে। তিয়েনআনমেন স্কয়ারে বিক্ষোভ দানা বাধলে তা দমাতে কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই প্রতিবাদের টুটি চেপে ধরা হয়। তখনকার চীন সরকারের এই দমনপীড়ন মেনে নিতে পারেননি বাও। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েও বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ান তিনি। 

১৯৮৯ সালের মে মাসেই বাওকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গ ও বিদ্রোহী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ এনে তাঁকে সাত বছরের জন্য কারাগারে পাঠায় সরকার। দল থেকেও বহিষ্কার করা হয় বাওকে। কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পরও সার্বক্ষণিক রাষ্ট্রীয় নজরদারিতে জীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। 

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে চীন সরকারের দুর্নীতি বন্ধ ও গণতন্ত্রের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তিয়েনআনমেন স্কয়ারে অনশন শুরু করে। তার সঙ্গে যোগ দেন শ্রমিকেরাও। বিক্ষোভকারীরা মাও সেতুংয়ের ছবির সামনে গণতন্ত্রের দেবীর মূর্তি খাড়া করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ক্ষমতাসীন সরকারকে। 

বিক্ষোভ দমাতে ৩ জুন রাতে সেনা ও ট্যাংক নামায় চীন সরকার। ৪ জুন মধ্যরাতে তারা সব দিক থেকে ঘিরে ফেলে তিয়েনআনমেন। বেয়নেট হাতে সেনাদের সামনে সার বেঁধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তিয়েনআনমেন স্কয়ার ত্যাগ করে। তবে স্কয়ারের বাইরে সেনাদের নির্বিচার গুলিতে ততক্ষণে নিহত হন শত শত ছাত্র-শ্রমিক। 

আরও পড়ুন

তিয়েনআনমেনের ‘গণহত্যার’ কোনো সরকারি পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি চীন সরকার। তবে প্রত্যক্ষদর্শী, মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষকদের মতে, তিয়েনআনমেনে সেদিন হাজারের ওপর লোককে হত্যা করেছিল সেনারা।

আরও পড়ুন