রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যে আজ সোমবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
কখন, কোথায় দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হতে পারে, তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে জল্পনা–কল্পনা ছিল।
এমনকি এরদোয়ান আগে বলেছিলেন, আগস্টে তুরস্ক সফর করবেন পুতিন। তবে এরদোয়ানের কথা অনুযায়ী সফরটি হয়নি।
এখন নিশ্চিত করা হয়েছে যে পুতিনের আমন্ত্রণে এরদোয়ান এক দিনের সফরে রাশিয়া যাবেন। রাশিয়ার দক্ষিণ উপকূলীয় শহর সোচিতে পুতিন-এরদোয়ানের মধ্যে বৈঠক হবে।
পুতিন-এরদোয়ানের মধ্যকার আসন্ন বৈঠকটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত জুলাই মাসে কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় রাশিয়া। এই চুক্তিতে রাশিয়াকে ফেরাতে চায় তুরস্ক। সে জন্য পুতিনকে রাজি করানোর ব্যাপারে আশাবাদী এরদোয়ান।
বৈঠকটি সম্পর্কে তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করবেন। বর্তমান বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।
রাশিয়া কেন বেরিয়ে গেল
জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কৃষ্ণসাগর শস্য রপ্তানি চুক্তি হয়।
রুশ আগ্রাসন সত্ত্বেও চুক্তিটির আওতায় প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ টন শস্যসহ অন্যান্য পণ্য নিজেদের তিনটি বন্দর থেকে নিরাপদে রপ্তানি করতে পেরেছে ইউক্রেন।
প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে চুক্তিটি নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায় ক্রেমলিন।
চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া কিছু ‘যুক্তি’ দেয়। মস্কো দাবি করে, কৃষ্ণসাগর চুক্তির বিনিময়ে রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানির বাধা দূর করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু এই অঙ্গীকার রক্ষা করা হয়নি। তাই তারা কৃষ্ণসাগর চুক্তি থেকে সরে গেছে।
মস্কো আরও বলে, শিপিং ও বিমার ওপর বিধিনিষেধের ফলে রাশিয়ার কৃষিবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও গত বছর রেকর্ড পরিমাণ গম রপ্তানি করেছে রাশিয়া।
তুরস্ক কেন মধ্যস্থতাকারী
কৃষ্ণসাগর চুক্তি থেকে পুতিনের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণার পর তা নবায়নের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন এরদোয়ান।
কৃষ্ণসাগর চুক্তিটি ছিল এমন এক ব্যবস্থা, যা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে খাদ্যসংকট এড়াতে সাহায্য করেছিল।
চুক্তিটি পুনরুদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে আসছে তুরস্ক। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার মস্কোয় রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে বৈঠক করেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।
বৈঠকটির আগের দিন গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাজধানীতে এক ব্রিফিংয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেন ও রাশিয়া গম, যব, সূর্যমুখী তেলসহ অন্যান্য পণ্যের শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী। দেশ দুটির এসব পণ্য রপ্তানির ওপর বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ নির্ভরশীল।
প্রায় ১৮ মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ চলাকালে পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এরদোয়ান।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে পশ্চিমারা। তবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রশ্নে পশ্চিমাদের দলে যোগ দেয়নি তুরস্ক।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার এই ডামাডোলে রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার হয়ে উঠেছে তুরস্ক। একই সঙ্গে তারা রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের রসদসামগ্রীর কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক। তারা ইউক্রেনকেও সমর্থন দিয়ে আসছে। এই সমর্থনের অংশ হিসেবে তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এরদোয়ান সাক্ষাৎ করেছেন। ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগদানের প্রচেষ্টাকে তুরস্ক সমর্থন করছে।
রাশিয়ার দাবি কী
রাশিয়া ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার ধারাবাহিকতায় সোচিতে পুতিন-এরদোয়ানের মধ্যে বৈঠকটি হতে যাচ্ছে।
কৃষ্ণসাগর শস্য রপ্তানি চুক্তি পুনরুজ্জীবিতকরণে পশ্চিমাদের কী কী করতে হবে, তার একটি তালিকা তুরস্কের কাছে ইতিমধ্যে দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গত বৃহস্পতিবার বলেন, কৃষ্ণসাগর শস্য রপ্তানি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যে নিশ্চয়তা দরকার, তা পাওয়ার কোনো লক্ষণ মস্কো দেখছে না।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরদিনই গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম বেড়ে যায়।
কৃষ্ণসাগর শস্য রপ্তানি চুক্তির বিষয়ে পুতিনের যে অবস্থান, তার প্রতি এরদোয়ানের একধরনের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি অতীতে দেখা গেছে।
যেমন গত জুলাইয়ে এরদোয়ান বলেছিলেন, চুক্তিটির বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে পুতিনের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রত্যাশা আছে। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববাজারে রাশিয়ার রপ্তানি ও কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি আবার চালুর লক্ষ্যে সম্প্রতি লাভরভকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তবে লাভরভ জানিয়ে দেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের দেওয়া প্রস্তাবে তাঁরা সন্তুষ্ট নন।
চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে তুরস্কের ব্যাপক প্রচেষ্টার বর্ণনা দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান বলেন, রাশিয়ার অবস্থান ও অনুরোধ আরও ভালোভাবে বোঝার পাশাপাশি তা পূরণের চেষ্টার একটি প্রক্রিয়া এটি।