ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা উপস্থিতি চায় না রাশিয়া, ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার কী হবে
যুদ্ধ–পরবর্তী ইউক্রেনে ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনা পাঠানোর বিষয়ে রাজি না হওয়ার বা ভেটোদানের ক্ষমতা চায় মস্কো। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাশিয়ার এ অবস্থান জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
লাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয়রা ইউক্রেনে তাদের সেনা মোতায়েনের যে প্রস্তাব দিচ্ছে, সেটা কার্যকর করা হলে তা হবে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’। একে তিনি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ২০২২ সালের একটি প্রস্তাবে ফিরে যেতে যায় মস্কো।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন নিয়ে প্রাথমিক শান্তি আলোচনায় যে কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেই আলোচনায় ফিরতে চায় মস্কো। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউরোপীয় মিত্রদের পাশাপাশি ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মস্কো ও বেইজিং সহায়তা করবে। তবে এ শর্তকে অগ্রহণযোগ্য বলেছে কিয়েভ।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে গত সোমবার ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে যুদ্ধ–পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও এস্তোনিয়া জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনে সেনা পাঠাবে তারা। আরও কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এর আগে গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন পুতিন। তবে লাভরভের সর্বশেষ বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, রাশিয়া আগের সেই অবস্থান ত্যাগ করেছে, অথবা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে ক্রেমলিনের অবস্থান ভুলভাবে তুলে ধরেছে ওয়াশিংটন।
এরই মধ্যে আজ রাশিয়াকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ায় ‘পাল্টা হামলা’ চালানোর জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি না দেওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর দোষারোপ করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, অনুপ্রবেশকারী দেশে পাল্টা হামলা চালানো ছাড়া যুদ্ধে জেতা খুবই কঠিন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এ বক্তব্য কিয়েভ ও ইউরোপের রাজধানীগুলো স্বাগত জানাবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগেও কিন্তু যুদ্ধবিরতিতে না গেলে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। ইউক্রেনের সহায়তা বাড়ানোর কথাও বলেছিলেন। পরে কিন্তু তিনি আবার তাঁর আগের অবস্থান থেকে সরে যান।
পুতিন ও জেলেনস্কির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে যে আলাপ চলছে, তাতেও পানি ঢেলে দিয়েছেন সের্গেই লাভরভ। দুজনের এই বৈঠকের কথা তুলেছিলেন ট্রাম্প নিজেই। লাভরভ বলেছেন, পুতিন তখনই কেবল জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন, যখন যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়ার শর্তগুলো মেনে নেওয়া হবে। আর রাশিয়ার ওই শর্তগুলো মেনে নেওয়ার অর্থ হলো ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ।
রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে সই করার কোনো আইনগত বৈধতা জেলেনস্কির আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন লাভরভ। এভাবে বিগত কয়েক দিনে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিন ও জেলেনস্কির দফায় দফায় কূটনৈতিক আলোচনার পরও যুদ্ধ বন্ধে নিজেদের দাবিগুলোতে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে খুবই কম আগ্রহ দেখিয়েছে ক্রেমলিন।
এরপরও গত বুধবার বেশ ইতিবাচক সুরেই কথা বলেছে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এদিন ফক্স নিউজকে বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ ও হত্যাকাণ্ড থামাতে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা দল।’
এদিকে পুতিন যদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাজি না হন, তাহলে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ‘কড়া প্রতিক্রিয়া’ আশা করছেন জেলেনস্কি। কিয়েভে বিদেশি সাংবাদিকদের তিনি প্রশ্ন করে বলেছিলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাবে আমি দ্রুতই সাড়া দিয়েছিলাম। আমরা প্রস্তুত আছি। তবে রুশরা যদি প্রস্তুত না থাকেন?’