মরক্কোর বিরুদ্ধে ফরাসি সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ, তদন্তের ঘোষণা

প্রতীকী ছবি

স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে ফ্রান্সের সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছে মরক্কোর গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি কৌঁসুলিরা।

আজ মঙ্গলবার ফরাসি কৌঁসুলিরা জানান, ১০টি পৃথক অভিযোগের তদন্ত করা হবে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রতারণামূলক প্রবেশাধিকার এবং এ–সংক্রান্ত অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

ফ্রান্সের ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট গত সোমবার এ বিষয়ে মরক্কোর গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে। মিডিয়াপার্টের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এডওয়ে প্লেনেল ও অপর এক সাংবাদিকের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। এর পেছনে মরক্কোর গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ওয়েবসাইটটি। এতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, মরক্কো দুজন ফরাসি সাংবাদিকের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে তারা (মরক্কোর গোয়েন্দারা) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাধারণ মানুষকে তথ্য জানানোর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পেশাদারত্বকে খাটো করেছে। ব্যক্তিগত ও পেশাসংক্রান্ত তথ্য চুরি করেছে। ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।

আরও পড়ুন

দেশটির সাপ্তাহিক পত্রিকা লা কানার্দ এনচেইনে একই ধরনের অভিযোগ আনোর পরিকল্পনা করছে। মরক্কোর গোয়েন্দা সংস্থা ফ্রান্সের প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক ও সংবাদসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির ওপর গোপনে নজরদারি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে লা মঁদে, লা ফিগারো, ফ্রান্স টেলিভিশন, এএফপির সাংবাদিকেরা রয়েছেন।

এ বিষয়ে ফরাসি সরকারের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েল আত্তাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটা খুবই জঘন্য একটি অভিযোগ। যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা খুবই গুরুতর ঘটনা হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে ফ্রান্স বরাবরই সচেতন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার এমন অভিযোগ ফরাসি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।

আরও পড়ুন

তবে মরক্কোর পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দেশটি বলেছে, আড়ি পাতার জন্য এমন কোনো সফটওয়্যার কখনোই কেনা হয়নি।

২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে মরক্কোর অবস্থান ১৩৬তম। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, মরক্কোর অনেক সাংবাদিক দেশটিতে বিচারিক হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। বিশেষত যাঁরা দেশটির রাজতন্ত্র, দুর্নীতি এবং বিরোধপূর্ণ ওয়েস্টার্ন সাহারা অঞ্চল নিয়ে অনুসন্ধানী কাজ করেন, তাঁরা এ ধরনের হয়রানির শিকার হন।

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসওর তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে আইফোন ও অ্যানড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়। এই স্পাইওয়্যার ফোন ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই মাইক্রোফোন চালু করে দিতেও সক্ষম।

পেগাসাস ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন অধিকারকর্মী, আইনজীবী, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, এমনকি কোনো কোনো দেশে ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের ওপরও আড়ি পাতা হয়েছে। আড়ি পাতা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন ২০টি দেশের ১৮০ জন সাংবাদিকও। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এনএসওর গ্রাহকেরা এসব ব্যক্তিদের ফোনে আড়ি পেতেছে।

আরও পড়ুন

প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রথম এ তথ্য পায়। পরে তারা বিষয়টি গার্ডিয়ান ও দ্য ওয়ারসহ বিশ্বের ১৭টি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করে। এসব সংবাদমাধ্যম একযোগে এ–সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে।