মারিউপোলে আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের নিয়ে শঙ্কা

গত সোমবার দিনের শেষ দিকে রুশ সাঁজোয়া যানের পাহারায় একটি বাসের বহর আজভস্তাল ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যায়
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের মারিউপোলে রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের ভাগ্য নিয়ে আজ বুধবার উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহের মরিয়া প্রতিরোধের পর মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানার ২৫০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। খবর রয়টার্সের।

এ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অবরোধের ইতি ঘটল। এর মধ্য দিয়ে হোঁচট খাওয়া এই সামরিক অভিযানে বিরল বিজয় দাবির সুযোগ পেলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকের দাবি, রাশিয়ার এ অভিযানের অগ্রগতি নেই।

গত সোমবার দিনের শেষ দিকে রুশ সাঁজোয়া যানের পাহারায় একটি বাসের বহর ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যায়। পাঁচটি বাস রুশ নিয়ন্ত্রিত শহর নভোয়াজভস্কে পৌঁছায়। আহত যোদ্ধাদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে।

ইউক্রেনের আজভস্তাল গ্যারিসনের সেনাদের বহনকারী আরও সাতটি বাস দোনেৎস্কের কাছে রুশ নিয়ন্ত্রিত ওলেনিভকা শহরে আবার চালু করা একটি কারাগারে পৌঁছায় বলে রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

রাশিয়া জানিয়েছে, কমপক্ষে ২৫৬ জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধা তাঁদের অস্ত্র পরিত্যাগ ও আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন গুরুতর আহত। ইউক্রেন জানিয়েছে, ২৬৪ জন সেনা আজভস্তাল ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জন আহত। রয়টার্সের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত একটি বাসে কয়েক নারীকে দেখা গেছে।

দুই পক্ষই বলেছে, একটি চুক্তির অধীন সব ইউক্রেনীয় ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যাবে। তবে চুক্তির অনেক কিছুই প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি কত সেনা সেখানে অবস্থান করছে, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি। বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা হয়েছে কি না, সেটাও বলা হয়নি।

ক্রেমলিন বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বন্দীদের সঙ্গে আচরণ করার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ বন্দীদের বিনিময়ে তাঁদের ছাড়িয়ে আনা হবে।

ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক বলেছেন, আহত সেনাদের অবস্থা স্থিতিশীল হলে বন্দী বিনিময়ের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবে কিয়েভ।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি এ নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেন, ‘একটিমাত্র বার্তাকে এত বেশি উপায়ে প্রকাশের উপায় ইংরেজিতে আছে কি না, আমি জানি না। আজভ নাৎসিরা নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে।’

বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, ‘ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় অপরাধের’ তদন্তের অংশ হিসেবে এসব সেনাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা আছে রুশ কমিটির। তাদের অধিকাংশই আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্য।

আরও পড়ুন

প্রভাবশালী রুশ আইনপ্রণেতারা বন্দী বিনিময়ের বিপক্ষে কথা বলছেন। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভলোদিন বলেছেন, ‘নাৎসি অপরাধীদের বন্দী বিনিময়ের আওতায় আনা উচিত হবে না।’

ইউক্রেনের সঙ্গে সংলাপে রুশ প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন আইনপ্রণেতা লিওনিদ স্লাৎস্কি। তিনি বলেছেন, আজভস্তাল থেকে সরিয়ে আনা যোদ্ধারা ‘মানবরূপী পশু’। তাঁদের ফাঁসি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে ২০১৪ সালে উগ্র ডানপন্থী স্বেচ্ছাসেবক মিলিশিয়াদের নিয়ে আজভ রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নিজেদের ফ্যাসিবাদী বা নাৎসি বলতে নারাজ তারা। ইউক্রেন জানিয়েছে, সংস্কার আনার মাধ্যমে আজভ রেজিমেন্টকে ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

কারখানায় আটকে পড়া এক নাবিকের স্ত্রী নাতালিয়া রয়টার্সকে বলেন, যথাযথ বন্দী বিনিময় হবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে তিনি উদ্বিগ্ন, ‘রাশিয়া এখন যা করছে, তা অমানবিক।’

মার্চের শুরুতে রুশ বাহিনীর অগ্রগামী সেনারা দক্ষিণাঞ্চলীয় মারিউপোল শহরটি ঘিরে ফেলে। এর পর থেকে আজভ রেজিমেন্ট, ন্যাশনাল গার্ড, পুলিশ, আঞ্চলিক প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যসহ কয়েক শ ইউক্রেনীয় সেনার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক বিশাল এই শিল্পাঞ্চলে আটকে পড়েন।