কলকাতার ধর্মতলা এখন যেন ‘ধরনাতলা’
কলকাতা শহরের কেন্দ্রস্থল বলতে এখনো ধর্মতলাকেই ধরা হয়। এসপ্ল্যানেড নামটি ছাপিয়ে মানুষের মুখে মুখে এই ধর্মতলাই শোনা যায়। ধর্মতলার আশপাশেই রয়েছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ সব ভবন ও স্থাপনা।
এই ধর্মতলা থেকে এ রাজ্যের বেশির ভাগ আন্দোলনের সূচনা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। বলা হয়, ধর্মতলাই কলকাতার যাবতীয় আন্দোলনের সূতিকাগার। দুর্নীতিবিরোধী থেকে রাজনীতি—সব ছোট-বড় আন্দোলন গড়ে উঠেছে এই ধর্মতলা ঘিরেই।
কলকাতার ‘হৃৎপিণ্ড’
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত বহু স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন রয়েছে এ ধর্মতলার আশপাশেই। যেমন শহীদ মিনার, গড়ের মাঠ, ওয়াই চ্যানেল, আকাশবাণী ভবন, রাজভবন, রেসকোর্স ময়দান, ইডেন গার্ডেনস, কলকাতা প্রেস ক্লাব, জাদুঘর, ট্রাম ডিপো, নিউমার্কেট, রেড রোড, ফোর্ট উইলিয়াম, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মোহামেডান ফুটবল ক্লাবের দপ্তর এবং স্টেডিয়াম।
এ ছাড়া ধর্মতলার কাছেই রয়েছে রাজ্য বিধানসভা ভবন, হাইকোর্ট ও টাউন হল। সেই সঙ্গে অদূরেই বহমান গঙ্গা (হুগলি) নদী। আর তার ওপরেই রয়েছে ঐতিহাসিক হাওড়া সেতু ও বিদ্যাসাগর সেতু। তাই এ ধর্মতলা তথা এসপ্ল্যানেডকে অনেকেই কলকাতার ‘হৃৎপিণ্ড’ বলে থাকেন।
ধর্মতলা যেভাবে ‘ধরনাতলা’
বর্তমানে ধর্মতলার কেন্দ্রস্থল মহাত্মা গান্ধী ও রানি রাসমণির মূর্তির পাদদেশে ছয়টি সংগঠন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এসব সংগঠন আন্দোলন চালিয়ে গেলেও নিজ অবস্থানে অনড় রাজ্য সরকার। এরপরও বিভিন্ন দাবিতে এসব আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলছে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন। টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিবাদ এবং যোগ্য প্রার্থীদের অবিলম্বে চাকরি দেওয়ার দাবিতে এ আন্দোলন চলছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখনো চলছে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। গত রোববার ছিল এই আন্দোলনের ৭০০তম দিন।
এখনো ধর্মতলা চত্বরে আন্দোলন জারি রেখেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), টেট বা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্টে ‘উত্তীর্ণ’ হয়ে চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরাও। নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিবাদে তাঁরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে ডিএর (একধরনের ভাতা) দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। আন্দোলন জারি রেখেছেন প্রাইমারি স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষায় ‘উত্তীর্ণ’ হয়ে চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরাও। একই সঙ্গে আন্দোলনের মাঠে আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আপার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতার পরীক্ষায় ‘উত্তীর্ণ’ প্রার্থীরাও।
রাজ্য পুলিশ দীর্ঘ সময় ধরে চলা এসব আন্দোলন থামিয়ে দিতে চাইলেও পারেনি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকায় চাইলেও আন্দোলনকারীদের জোরপূর্বক সেখান থেকে সরিয়ে দিতে পারছে না পুলিশ।
কার্যত দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা, যা কলকাতার ভাষায় ‘ধরনা’ হিসেবে পরিচিত। ধর্মতলার মহাত্মা গান্ধী ও রানি রাসমণির মূর্তির পাদদেশ থেকে এসব আন্দোলনের বিস্তৃতি শহীদ মিনার পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এসব আন্দোলনের কারণে ধর্মতলাকে অনেকে ‘ধরনাতলা’ বলছেন।