হরিয়ানায় আজ আবার হিন্দুত্ববাদীদের শোভাযাত্রার ঘোষণা, নুহ ঘিরে নিরাপত্তাবলয়

সংঘর্ষের সময় দোকান ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়
ফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের নুহ জেলা আবার খবরের শিরোনামে। আজ সোমবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেই জেলায় ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ধর্মীয় শোভাযাত্রা নিয়ে যেতে পারবেন কি না, শুরু হয়েছে সেই জল্পনা। বাড়ছে উত্তেজনা।

শোভাযাত্রা ঠেকাতে পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন যতটা মরিয়া, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) নেতারা ততটাই অনড়। জেলাজুড়ে উত্তেজনার খই ফুটছে। কী হয় কী হয়, সেই দিকে নজর সবার। ইতিমধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শাখা সংগঠন বিশ্ব হিন্দু তখতের নেতা বীরেশ সান্দিল্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হরিয়ানার মুসলমান প্রধান এই নুহ জেলায় গত ৩১ জুলাই হিন্দু দেবতা শিবের মাথায় জল ঢালতে আয়োজিত এক শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বেধেছিল। দুই সম্প্রদায়ের সেই সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মীসহ নিহত হয়েছিলেন ছয়জন। নুহ সংঘর্ষের জের ছড়িয়েছিল হরিয়ানার পাশ্বর্বর্তী অন্যান্য জেলায়ও। সৃষ্টি হয়েছিল উত্তেজনা।

ওই সময় গুরুগ্রাম, মানেসর, সোহনাসহ বহু এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল মুসলমানদের। অনেকে চলেও গিয়েছিল, যাদের অধিকাংশ পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার দরিদ্র মুসলমান। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও নতুন করে ভিএইচপির হুমকি ও জলাভিষেক যাত্রার কর্মসূচি পরিস্থিতি আবার ঘোলাটে করে তুলেছে। মুসলমানদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পাশ্বর্বর্তী জেলাগুলোয় নতুন করে পোস্টার পড়েছে। নানাভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে।

হরিয়ানা রাজ্য সরকার ও নুহ জেলা প্রশাসন আজকের ওই শোভাযাত্রার অনুমতি দেয়নি। বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার গতকাল রোববার জানিয়ে দেন, শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালতে হলে ধর্মপ্রাণ লোকজন যেন তাঁদের নিজ নিজ এলাকার মন্দিরেই তা করেন। নুহ যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন শোভাযাত্রা ঠেকাতে তৎপর অন্য এক কারণেও। এই নুহ জেলাতেই আগামী ৩ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বসবে জি–২০–এর শেরপা গ্রুপ বৈঠক। সরকার চায় না এই সময় ওই এলাকাজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হোক। তাতে বিদেশের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্ট হবে। সেই কারণে শোভাযাত্রা ঠেকাতে চেষ্টার অন্ত নেই।

আরও পড়ুন

জেলা ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। জেলার প্রতিটি প্রবেশপথ সিল করে দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অন্তত দুই হাজার সশস্ত্র পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী। জায়গায় জায়গায় বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। জেলায় ঢোকার মুখে জাতীয় সড়কে প্রতিটি গাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যেসব গাড়ি পুলিশের বিবেচনায় সন্দেহজনক, তাদের জেলায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

পুরো জেলায় তিন দিন আগে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। ছুটি দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বন্ধ রাখা হয়েছে ব্যাংক। জেলাজুড়ে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা, যা নিষিদ্ধ করে চারজনের বেশি জমায়েত। ভিএইচপি নেতৃত্বের সদর্প ঘোষণা, অনুমতি আছে কি নেই, তা বিবেচনায় আনা হবে না। শোভাযাত্রা হবেই। নেতাদের দাবি, ধর্মীয় শোভাযাত্রার জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন

ভিএইচপি ও তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের পক্ষে উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা ১৩ আগস্ট এক মহাপঞ্চায়েতে এই শোভাযাত্রা নতুন করে শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের বক্তব্য, ৩১ জুলাই যে যাত্রা শেষ করা যায়নি, ২৮ আগস্ট তা করা হবে। যে সমাবেশে হিন্দুত্ববাদী নেতারা ওই ঘোষণা দেন, তার অনুমতিও পুলিশ দেয়নি। সমাবেশ থেকে ঘৃণা ভাষণও দেওয়া হয়। যদিও হরিয়ানা পুলিশ ও প্রশাসন কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

অনুমতি অমান্য করে যাত্রা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ঘোষণা দেওয়া হলেও নেতাদের প্রতিহত করতে আগাম গ্রেপ্তার করা হয়নি কাউকে। পুলিশ প্রশাসন নাকি যাত্রীরা, কারা জিতে, সে দিকেই এখন নজর সবার।