কংগ্রেসের বিধায়ক মামন খান
ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মুসলমান–অধ্যুষিত নুহ জেলায় গত ৩১ জুলাইয়ের সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয় বিধায়ক মামন খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ফিরোজপুর ঝিরকা এলাকার কংগ্রেস দলীয় বিধায়ক। আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতে হাজির করার কথা আছে।

গত ৩১ জুলাই হিন্দুদের এক ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে নুহ জেলায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সেই উত্তেজনা সংঘর্ষে পরিণত হয়। এতে মারা যান ছয়জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন ছিলেন পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় দাখিল করা কয়েকটি এফআইআরের মধ্যে একটিতে অভিযুক্ত হিসেবে মামন খানের নাম আছে। গত সপ্তাহে মামন খানকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ।

এফআইআরে ৫২ জন অভিযুক্তের কথা বলা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন জামিনে আছেন।

পুলিশ সূত্র বলেছে, মামন খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আছে।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের কাছে ফোনকলের তালিকা এবং অন্য প্রমাণ আছে বলে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টকে জানিয়েছে হরিয়ানা সরকার।

হরিয়ানার অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল (সরকারি কৌঁসুলি) দীপক সবরওয়াল আদালতে বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তের তালিকায় মামন খানের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার এই বিধায়ক আদালতে আপিল আবেদন করেছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে চাইছিলেন তিনি। মামন খানের দাবি, তাঁকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সহিংসতার দিন নুহতে ছিলেন না বলেও দাবি তাঁর। আগামী ১৯ অক্টোবর তাঁর আপিল আবেদনের শুনানির কথা আছে।

নুহতে সহিংসতাসংক্রান্ত সব মামলা বিশেষ তদন্ত দলের কাছে হস্তান্তর চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন মামন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়েছে, বিশেষ তদন্ত দলটি এরই মধ্যে গঠন করা হয়ে গেছে।

এর আগে তদন্তের স্বার্থে মামন খানকে দুবার ডেকেছিল নুহ পুলিশ। তবে তিনি হাজির হননি। গত ৩১ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলে মামন বলেছিলেন, তিনি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত।

আদালতে করা আবেদনে মামন খান বলেছেন, গত ২৬ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি নুহতে ছিলেন না। তিনি তাঁর গুরুগ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

তবে সরকার পক্ষের আইনজীবীদের বরাতে পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ আছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, একই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া তৌফিকও জিজ্ঞাসাবাদে মামন খানের নাম বলেছেন। কল রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে, সহিংসতার আগের দুই দিন (২৯ ও ৩০ জুলাই) তাঁদের দুজনের মধ্যে কথা হয়েছে।

আরও পড়ুন

হরিয়ানায় ধর্মীয় শোভাযাত্রায় কারা অস্ত্র দিল: প্রশ্ন বিজেপির মন্ত্রীর

মনু মানেসর ১৫ দিনের নিরাপত্তা হেফাজতে

এদিকে রাজস্থানের ভরতপুর জেলার দুই যুবককে গরু পাচারের দায়ে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা মনু মানেসরকে ১৫ দিনের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজস্থানের দিগ জেলার একটি আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।

গোপালগড় স্টেশন হাউস কর্মকর্তা সন্তোষ শর্মা বলেন, মনু মানেসরকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। আদালত তাঁকে ১৫ দিনের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

মনু মানেসর একজন স্বঘোষিত গোরক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভরতপুর জেলার দুই যুবক নাসির (২৫) ও জুনায়েদকে (৩৫) গরু পাচারের দায়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মনু মানেসর অপহরণ করেন। পরের দিন হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলায় একটি জ্বলন্ত গাড়ির ভেতর তাঁদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। মনু মানেসর তাঁদের হত্যা করেন বলে রাজস্থান পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়।

হরিয়ানার নুহ জেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগও আছে মনু মানেসরের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন

হরিয়ানায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে উসকানিদাতা মনু গ্রেপ্তার