অধ্যাপনা ছেড়ে নির্বাচনে, ৪০ বছরের শেলি যেভাবে হলেন দিল্লির মেয়র

নানা নাটকীয়তার পর বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়ে দিল্লির মেয়র হয়েছেন আম আদমি পার্টির শেলি ওবেরয়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম শেলি ওবেরয়। ৪০ বছর বয়সের এই নারী দিল্লির মেয়র হয়েছেন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একের পর এক বাধা দমাতে পারেনি তাঁকে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ পক্ষে যাওয়ায় অবশেষে মেয়রের আসনে বসেছেন দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা শেলি।

রাজনীতিতে শেলি ওবেরয়ের যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে দিল্লির মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষকতাও করতেন তিনি। ছিলেন দিল্লি ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক।

১৯৮৩ সালে দিল্লিতে শেলির জন্ম। পড়াশোনা করেছেন দিল্লির ফেইথ একাডেমি ও জানকি দেবী মেমোরিয়াল কলেজে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। হিমাচল প্রদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর করেন শেলি। পরে তামিলনাড়ুর আন্নামালাই ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনে আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ থেকে পিএইচডি করছেন শেলি। ২০১৭ সালে এখানে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবস্থাপনায় ডিপ্লোমা করেছেন শেলি।

শেলির বাবা সতীশ কুমার ওবেরয় একজন ব্যবসায়ী। মা সরোজ ওবেরয় গৃহিণী। পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও এক ভাই ও এক বোন রয়েছেন শেলির। তিনি এখনো বিয়ে করেননি।

আরও পড়ুন

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন শেলি। পরে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি মুম্বাইয়ের এমএমআইএমএসে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবেও কাজ করছেন। শিক্ষকতা পেশায় তাঁর লেখা ৩৫টি নিবন্ধ রয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ান কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইসিএ) আজীবন সদস্য।

রাজনীতির প্রতি আগ্রহ থাকায় শেলি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হাত ধরে আপে যোগ দেন। দলটির দিল্লির নারী শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। ২০২০ সালে তাঁকে এ পদে বসানো হয়। আপের হয়ে বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারের পরিচিত মুখ শেলি।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ১০ বছরেরও কম সময় আগে প্রথমবারের মতো ভোটে দাঁড়ান শেলি। গত বছরের ডিসেম্বরে দিল্লি পৌরসভা নির্বাচনে পূর্ব প্যাটেল নগর (৮৬ নম্বর ওয়ার্ড) থেকে আপের প্রার্থী শেলি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন

পরে দলের পক্ষ থেকে শেলিকে দিল্লির মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর শেলিকে নানা নাটকীয়তার মুখোমুখি হতে হয়। দিল্লি পৌরসভার ২৫০ আসনের মধ্যে গত ডিসেম্বরের ভোটে আপ জিতেছিল ১৩৪টি, বিজেপি ১০৪ ও কংগ্রেস ৯টি। ৩টি ওয়ার্ডে জেতেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বলতে শুরু করে, আপের সংখ্যা থাকলেও মেয়র হবেন বিজেপির প্রার্থী রেখা গুপ্ত। সেই থেকে শুরু সংশয়। আপ মনে করতে থাকে, বিজেপি টাকা দিয়ে কাউন্সিলর কেনার খেলায় নামবে। এ নিয়ে তীব্র বাদানুবাদে তিনবার মেয়র নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে যায়।

মাত্র ৪০ বছর বয়সে দিল্লির মেয়র হয়েছেন শেলি ওবেরয়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
আরও পড়ুন

আপের মেয়র পদপ্রার্থী শেলি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর বিজেপির ছক উল্টে যায়। গতকালের মেয়র নির্বাচনে আপ প্রার্থী শেলি ওবেরয় ৩৪ ভোটে হারিয়ে দেন বিজেপির রেখা গুপ্তকে। শেলি পান ১৫০ ভোট, রেখা ১১৬।

শেলিকে অভিনন্দন জানিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইটে লেখেন, ‘জনতা জিতেছে, গুন্ডারা হেরেছে।’

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন