রাহুলের পাশে হাঁটলেন খাড়গে, ক্ষোভ থারুরের

ভারত জোড়ো যাত্রায় মল্লিকার্জুন খাড়গের পাশে রাহুল গান্ধী । গতকাল কর্ণাটকে।
ছবি : এএনআই

নির্বাচনী প্রচারের শেষ বেলায় গতকাল শনিবার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভারত জোড়ো যাত্রায় পা মেলালেন কংগ্রেস সভাপতি পদপ্রার্থী মল্লিকার্জুন খাড়গে। কর্ণাটকের বেলারি জেলায় তিনি রাহুলের পাশে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটলেন। তাঁর সঙ্গেই পদযাত্রায় অংশ নিলেন রাজ্যের দুই প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা প্রদেশ সভাপতি ডি কে শিবকুমার ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া। নির্বাচনের দুদিন আগে খাড়গের যাত্রাসঙ্গী হওয়া প্রতীকী হয়ে রইল। স্পষ্টতর হলো, আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ সরকারি প্রার্থী না হলেও দলের সভাপতি নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের সমর্থন কার দিকে।

কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন আগামীকাল সোমবার। গণনা শেষে ফল ঘোষণা ১৯ অক্টোবর। এই নির্বাচন ঘিরে যাবতীয় জল্পনার অবসান যে ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে, মল্লিকার্জুন খাড়গের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুরের সাম্প্রতিক বয়ানই তার প্রমাণ। গত শুক্রবার তিনি খেদ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, লড়াইটা সমানে সমানে হচ্ছে না। সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই কবুল করেছেন, খাড়গেকে সমর্থনের জন্য তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রদেশ সভাপতিদেরও দেখছি খাড়গের পাশে থাকতে। তাঁর জন্য সব হচ্ছে। সবাই ব্যস্ত।’ থারুর যত রাজ্যে গিয়েছেন, একমাত্র মধ্যপ্রদেশে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি কমলনাথ। শুক্রবার ভোপালে নিজেই সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাতটি রাজ্যে প্রচারে গিয়েছি। এই প্রথম কোনো প্রদেশ সভাপতি আমাকে স্বাগত জানালেন। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য কমলনাথকে ধন্যবাদ।’

নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দায়িত্বে থাকা এআইসিসি নেতা মধুসুদন মিস্ত্রী জানিয়েছিলেন, কোনো মুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি বা এআইসিসির কোনো পদাধিকারী কোনো প্রার্থীর হয়ে প্রকাশ্যে প্রচার চালাতে পারবেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুক্রবার দেখা গেল রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এক টুইটে খোলাখুলিভাবে খাড়গেকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, সব প্রতিনিধির উচিত তাঁকে সমর্থন করা। কারণ, খাড়গে কংগ্রেসের আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্যও যোগ্য প্রার্থী। তাঁর মতো অভিজ্ঞতা অনেকের নেই। খাড়গের মনোনয়নের জন্য যাঁরা প্রস্তাবক ছিলেন, গেহলট তাঁদের অন্যতম। তাঁর এই প্রকাশ্য আহ্বান নিয়ে এআইসিসিও গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।

শুধু গেহলটই নন, থারুরের মতো ‘জি–২৩’ গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে পরিচিত লোকসভার সদস্য মণীশ তিওয়ারিও খোলামেলা খাড়গেকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেন, সব দিক বিবেচনা করে নিরপেক্ষ পর্যালোচনায় স্পষ্ট, কংগ্রেসের ভার খাড়গের মতোই এক নিরাপদ নেতার হাতে থাকা দরকার। তৃণমূল স্তর থেকে তিনি উঠে এসেছেন। এখন দলে যে ধরনের স্থিতিশীলতা দরকার, তা তিনিই দিতে পারবেন।

ভোটটা যে তিনি হারার জন্য লড়ছেন, শেষ বেলায় শশী থারুরের সেই বোধোদয় ঘটেছে। সেই কারণে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমান সুযোগ পেতে না দেওয়ায় যেমন খেদ প্রকাশ করেছেন, তেমনই উত্তরাধিকারের রাজনীতির বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকর কোথাও লেখেননি যে তিনি উত্তরাধিকারের রাজনীতির বিরোধী। কিন্তু ধরে নেওয়া যায়, নির্বাচন বা মেধার বদলে উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণের ধারণা ও ভাবনা তিনি মেনে নিতেন না। ওই প্রবণতাকে সমালোচনার দৃষ্টিতেই দেখতেন।

সভাপতি পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে থারুরের এই উপলব্ধি বিজেপিকে বাড়তি এক হাতিয়ার জুগিয়েছে। শাসক দলের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান অমিত মালবিয়া টুইট করে বলেন, লড়াইটা যে প্রহসন, অবশেষে শশী থারুরের সেই বোধোদয় ঘটেছে। গান্ধীরা শিগগিরই মনমোহন সিংয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ পেতে চলেছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন