নির্বাচনে হেরেছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানো বিজেপির মিত্র প্রোজ্জ্বল রেভান্না

ভারতের লোকসভার সদস্য প্রোজ্জ্বল রেভান্না। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছেছবি: এএনআই

লোকসভা নির্বাচনে হেরেছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানো কর্ণাটকের হাসন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিজেপির মিত্র জনতা দলের (জেডিএস) প্রোজ্জ্বল রেভান্না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রায় তিন হাজার নারীকে যৌন নির্যাতন করেছেন। নির্যাতনের ভিডিও তৈরি করে সেই নারীদের তিনি ব্ল্যাকমেল করতেন। নির্বাচনের সময় সেসব নির্যাতনের ভিডিও গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় সামাল দিতে প্রোজ্জ্বলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছেড়ে জার্মানি চলে যান তিনি। হাসন আসনের সংসদ সদস্য প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে তাঁদের একজন গৃহকর্মী ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন।

যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ৩৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তখনো কোনো ভিডিও প্রকাশ হয়নি। তাঁকে প্রার্থী না করতে জেডিএস ও বিজেপি—দুই দলের ওপরই দলের মধ্য থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও জেডিএস তাঁকে প্রার্থী করে, বিজেপিও আপত্তি জানায়নি।

গত ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী শ্রেয়াস এম প্যাটেলের কাছে সাড়ে ৪২ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন প্রোজ্জ্বল। ৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৯টি ভোট পান তিনি। শ্রেয়াস পান ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৮ ভোট।

প্রোজ্জ্বল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার নাতি। প্রোজ্জ্বলকে হারিয়ে দেওয়া শ্রেয়াসও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তিনি কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা জি পুট্টস্বামী গৌড়ার নাতি। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পুট্টস্বামী গৌড়া হাসন আসনে দেবগৌড়াকে হারিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

তারপর ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসন আসনে টানা সংসদ সদস্য ছিলেন দেবগৌড়া। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দেবগৌড়া নাতি প্রোজ্জ্বলকে হাসন আসন ছেড়ে দেন। সেবার প্রোজ্জ্বল ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি হারিয়েছিলেন সেই সময়ের বিজেপির প্রার্থী এ. মঞ্জুকে।

এবারের নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দেয় প্রোজ্জ্বলের দল জেডিএস। প্রোজ্জ্বলের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস হওয়ার আগে দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রোজ্জ্বলের পক্ষে হাসনে রোড শো ও শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।

যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পরও প্রোজ্জ্বল দেশ ছেড়ে যাওয়ায় কংগ্রেস বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছিল, ক্ষমতাসীন দল প্রোজ্জ্বলকে সহায়তা করছে।

বিজেপি এ অভিযোগ উড়িয়ে বলেছিল, রাজ্য সরকার প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে প্রাথমিকভাবে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। কর্ণাটকে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস।

আরও পড়ুন

প্রোজ্জ্বলের হাসন আসনে ভোট হয় গত ২৬ এপ্রিল, লোকসভার দ্বিতীয় দফা ভোটের দিন। পরদিন প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে যৌন কেলঙ্কারির ভিডিও ফাঁস হওয়া নিয়ে হইচই শুরু হয়। রাজ্যজুড়ে পার্ক, বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের খালি আসনসহ নানা জায়গায় পেনড্রাইভ ফেলে রেখে ভিডিওগুলো কে বা কারা ছড়িয়ে দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে সেগুলো ভাইরাল হয়।

যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ছেলের সঙ্গে নাম জুড়ে যায় তাঁর বাবা এইচ ডি রেভান্নারও। রেভান্না ওই রাজ্যের হোলেনারসিপুরা কেন্দ্রের বিধায়ক। প্রোজ্জ্বলের বিরুদ্ধে তাঁদের যে গৃহকর্মী পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন, তিনি অভিযোগপত্রে লেখেন, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রোজ্জ্বল তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। এমনকি তাঁর মেয়ের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছেন তিনি।
ওই নারী প্রোজ্জ্বলের বাবার বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ এনে বলেছেন, স্ত্রী বাড়ি না থাকলে তিনিও তাঁকে যৌন হেনস্তা করতেন।

প্রোজ্জ্বল জার্মানি চলে যাওয়ার পর জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারাস্বামী তাঁকে দেশে ফিরে আসার এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে প্রোজ্জ্বল দেশে ফিরে আসেন এবং পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।