মার্সিডিজ, মারুতি এবং পরে মোটরসাইকেলে চেপে ‘পাকিস্তানে’ পালিয়েছেন অমৃতপাল

আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ নামের একটি সংগঠন, যার নেতৃত্বে আছেন অমৃতপাল সিংছবি: এএফপি

খালিস্তানপন্থী ‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ (পাঞ্জাবের উত্তরাধিকারী) নেতা অমৃতপাল সিং কি পুলিশের চোখে ধুলা দিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে গেলেন? রাজ্যের প্রভাবশালী মহল কি তাঁকে পালানোর সুযোগ করে দিল? নাকি পাঞ্জাব পুলিশ অমৃতপালকে গুম করেছে? শোরগোল ফেলে দেওয়া ২৯ বছরের এই স্বঘোষিত খালিস্তানপন্থী নেতার অবস্থান নিয়ে সংশয় বেড়েই চলেছে। তল্লাশি সত্ত্বেও মঙ্গলবার চতুর্থ দিনেও তাঁকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

অমৃতপালকে ধরতে গত শনিবার অভিযান চালানো হয়। সেদিন প্রথমে তাঁকে দেখা গিয়েছিল একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে। সেই গাড়িতে তাঁর কাকা ও চালক ছিলেন। তাঁরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। শাহকোট এলাকায় সেই মার্সিডিজ ছেড়ে তিনি ওঠেন সাদা রঙের এক মারুতি সুইফট ব্রেজা গাড়িতে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জলন্ধরে এক টোল প্লাজায় ওই গাড়িতে তাঁকে দেখা যায়। এই গাড়িটি পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পাওয়া যায়। সেই গাড়িতে তিনি তাঁর ধর্মীয় পোশাক ছেড়ে প্যান্ট-শার্ট পরেন। পাগড়ি পাল্টে ফেলেন। গাড়ি ছেড়ে দুটি বাইকে চেপে অনুগামীসহ তিনি পালান। তিনি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিত্যক্ত গাড়িতে তাঁর ছেড়ে যাওয়া পোশাক পাওয়া গেছে। পুলিশের মতে, অমৃতপাল পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের আশীর্বাদধন্য।

এই পরিস্থিতিতে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট পাঞ্জাব পুলিশকে ভর্ৎসনা করে গতকাল জানতে চান, রাজ্যে ৮০ হাজার পুলিশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কী করে অমৃতপাল পলাতক? কী করছে রাজ্যের পুলিশ?

হাইকোর্টের বিচারপতি এন এস শেখাওয়াত বলেন, এত জোরদার পুলিশি ব্যবস্থা সত্ত্বেও একজন কী করে পালিয়ে থাকতে পারেন, সেটাই বোধগম্য নয়। নিঃসন্দেহে এটা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা। অমৃতপালকে ধরার জন্য অভিযান চালাতে কী কী করা হয়েছিল, বিচারপতি তা রাজ্য সরকারকে জানাতে বলেছেন। চার দিন পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

হাইকোর্টে মামলাটি করেন ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে সংগঠনের আইনি উপদেষ্টা ইমান সিং খারা। হেবিয়াস কর্পাস আবেদন দাখিল করে তিনি বলেন, অমৃতপাল সিংকে পাঞ্জাব পুলিশ অবৈধভাবে আটক করেছে। তাঁকে অবিলম্বে আদালতের সামনে হাজির করা হোক।

আরও পড়ুন

হাইকোর্টে পাঞ্জাব পুলিশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিনোদ ঘাই। ৮০ হাজার পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও কী করে অমৃতপাল পলাতক জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অমৃতপালের সব শাগরেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট ১১২ জনকে পুলিশ ধরেছে। অমৃতপালের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলাও রুজু হয়েছে। তাঁকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি শেখাওয়াত বলেন, রাজ্যে জি-২০ সম্মেলন চলছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও আঁটসাঁট। তা সত্ত্বেও এভাবে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার চরম উদাহরণ।

অমৃতপালকে ধরতে পাঞ্জাবের বাতালা পুলিশের অভিযান। রোববার তোলা।
ছবি: এএনআই

প্রধানত তিনটি সম্ভাবনা আলোচনার স্তরে উঠে এসেছে। প্রথমটি অমৃতপালের পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে। পুলিশের অনুমান, তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন। সীমান্তের কাছে পরিত্যক্ত এক গাড়িতে অমৃতপালের পোশাক পাওয়া গেছে। অথবা পাঞ্জাব পুলিশ তাঁকে গুম করেছে। সবাইকে ধরা গেলেও তাঁকে ধরতে না পারা সেই সন্দেহ বাড়িয়েছে। কারণ, অনেক পরিকল্পনা করে তাঁকে ধরার অভিযান শুরু করা হয়েছিল। তৃতীয় সম্ভাবনা, রাজ্যেরই কোনো প্রভাবশালী মহল পুলিশি সহায়তায় অমৃতপালকে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সেই মহলের মধ্যে পুলিশের প্রভাবশালীরাও যুক্ত।

অমৃতপাল সিংকে নিয়ে সন্দেহ ও সংশয়ের ধোঁয়াশা বেড়েই চলেছে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তাঁর মতো একজন অজ্ঞাতকুলশীল কীভাবে এত ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন, তা রহস্যের। আরও রহস্য, তাঁকে চোখে চোখে রাখতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা। পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর রাজ্যে এত অল্প দিনে খালিস্তানি আন্দোলনের এভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দাদের নজর কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারে, কী করে তাঁর অনুগামীরা অস্ত্র সংগ্রহ করেন, তা চর্চায় উঠে এসেছে।

এত বিপুল নিরাপত্তা সত্ত্বেও তিনি সত্যিই পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়ে থাকলে সীমান্তবর্তী পাঞ্জাব রাজ্যের ‘বজ্র আঁটুনি’ নিরাপত্তা যে কতটা ‘ফসকা গেরো’, তা বোঝা যাচ্ছে। গতকাল পাঞ্জাব হরিয়ানা হাইকোর্টের ভর্ৎসনা রাজ্যের আম আদমি পার্টি ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতারই ইঙ্গিতবাহী।

আরও পড়ুন