ভারতের কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধীকে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা মনসুখ মান্ডবীয়র লেখা একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে। চিঠিতে ‘উদ্বেগজনক করোনা পরিস্থিতির’ উল্লেখ করে চলমান ভারত জোড়ো যাত্রায় কঠোরভাবে করোনাবিধি মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা সম্ভব না হলে জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার লেখা এই চিঠি নিয়ে কংগ্রেসের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আজ বুধবার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে ভারত জোড়ো যাত্রা বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। যাত্রায় লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানতে পারছেন না। তাই যাত্রা বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী প্রচারে করোনাবিধি মানা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। অধীর বলেন, ‘গুজরাটে নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রীকে কি করোনাবিধি মানতে বলা হয়েছিল? তিনি কি তা মেনেছিলেন? মাস্ক পরেছিলেন?’
এ কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করতে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, ‘রাহুল গান্ধী এই যাত্রার মাধ্যমে বিজেপির যথেচ্ছ মিথ্যাচারের মুখোশ খুলে দিচ্ছেন। সর্বত্র এই যাত্রা আলোচিত। মিডিয়া নীরব থাকলেও সামাজিক মাধ্যম সরগরম। সাধারণ মানুষ দলে দলে যাত্রায় যোগ দিচ্ছেন। চারদিকে প্রবল প্রতিক্রিয়া। বিজেপি তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নামিয়েছে যাত্রা বন্ধ করতে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে।’
রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি মান্ডবীয় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকেও চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রায় করোনাবিধি মানা হোক। যাত্রীরা সবাই যেন মাস্ক পরেন। স্যানিটাইজার যেন রাখা হয়। শুধু যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন, তাঁরাই যেন যাত্রায় অংশ নেন। এসব বিধি যদি কঠোরভাবে না মানা হয়, তাহলে দেশের স্বার্থে যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হোক।’
মান্ডবীয় তাঁর চিঠির সঙ্গে তাঁকে লেখা বিজেপির তিন পার্লামেন্ট সদস্যের চিঠিও জুড়ে দিয়েছেন। ওই পার্লামেন্ট সদস্যরা চিঠিতে ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালে করোনা সতর্কতা মানার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা লিখেছেন, ‘হিমাচল প্রদেশের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু ভারত জোড়ো যাত্রায় হাঁটার পরই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অতএব সাবধান হওয়া দরকার।’
ভারত জোড়ো যাত্রার রাজস্থান পর্ব মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। আজ যাত্রীরা হরিয়ানায় ঢুকেছেন। হরিয়ানা পর্ব শেষ করে তা দিল্লি আসবে। বড়দিন ও বর্ষবিদায়ের বিরতির পর জানুয়ারির শুরুতে আবার যাত্রা শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সতর্ক হতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ জরুরি বৈঠকে বসেন। চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে করোনা সংক্রমণ নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ সব রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি লিখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপর বিশেষ জোর দিতে বলেছেন। সে জন্য সব নমুনা বিশেষ পরীক্ষাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বলা হয়, নমুনা পরীক্ষা, রোগ ও রোগী চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা, টিকাকরণ ও করোনাবিধি মানা—এই পাঁচ পদক্ষেপ কঠোরভাবে মানতে হবে।