মুম্বাইয়ে চিকিৎসকের তিনবার করোনা, টিকা নেওয়ার পর দুবার

টিকা নেওয়ার পরও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন মুম্বাইয়ের চিকিৎসক শ্রুষ্টি হালারি।
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালের চিকিৎসক শ্রুষ্টি হালারি। গত ১৩ মাসের মধ্যে এই চিকিৎসক তিনবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাঝে নিয়েছেন করোনার টিকার দুই ডোজ। এরপরও রক্ষা পাননি। তিনবারের মধ্য দুবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন টিকা নেওয়ার পর। এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে শ্রুষ্টি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।

করোনায় আক্রান্ত শ্রুষ্টিকে নিয়ে আজ মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, মুম্বাইয়ের মুলুন্দ এলাকায় বীর সাভাকর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেন শ্রুষ্টি। দায়িত্বরত অবস্থায় গত বছরের ১৭ জুন প্রথমবার করোনায় আক্রান্ত হন ২৬ বছর বয়সী এই চিকিৎসক। তবে ওই সময় তাঁর শরীরে করোনার মৃদু উপসর্গ ছিল। চিকিৎসা নিয়ে অল্প দিনের মধ্যে সুস্থ হন তিনি।

সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে চলতি বছরের ৮ মার্চ করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেন শ্রুষ্টি। দ্বিতীয় ডোজ নেন ২৯ এপ্রিল। তিনি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা কোভিশিল্ডের দুটো ডোজ নিয়েছিলেন। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এই টিকা উৎপাদন করছে। শ্রুষ্টির সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও কোভিশিল্ডের দুটো ডোজ নিয়েছিলেন।

টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ঠিক এক মাস পর গত ২৯ মে শ্রুষ্টির দ্বিতীয় দফায় করোনা শনাক্ত হয়। এবারও উপসর্গ ছিল মৃদু। বাড়িতে থেকেই সুস্থ হন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি।

আরও পড়ুন

তবে তৃতীয়বার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় শ্রুষ্টিকে ভুগতে হচ্ছে বেশ। ১১ জুলাই তাঁর তৃতীয়বারের মতো করোনা শনাক্ত হয়েছে। কোভিশিল্ডের দুই ডোজ নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের চার সদস্যের সবাই। চারজনকেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। তাঁরা করোনার ডেলটা ধরনে সংক্রমিত হয়েছেন কি না, তা জানতে সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রুষ্টি এনডিটিভিকে বলেন, ‘তৃতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে। পরিবারের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। রেমডেসিভির নিতে হচ্ছে।’
শ্রুষ্টি জানান, তাঁর মা ও ভাইয়ের ডায়াবেটিস রয়েছে। বাবা আগে থেকেই কোলেস্টেরলের সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। দুই দিন ধরে তাঁকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

করোনার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, করোনা থেকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে না টিকা। বিশেষজ্ঞরাও এখন একই সুরে কথা বলছেন। তাঁদের মতে, টিকায় পুরোপুরি সুরক্ষা মিলবে না। এমনকি টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পরও করোনা হতে পারে। তবে টিকা নেওয়ার পর করোনা হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হার কমে আসে। কমে আসে করোনায় মৃত্যুর আশঙ্কা।

এই বিষয়ে মুম্বাইয়ের ওকহার্ডট হাসপাতালের চিকিৎসক বেহরাম পারদিওয়ালা বলেন, ‘দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত অনেক রোগীর চিকিৎসা করেছি। যেকোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে টিকা তাঁদের দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।’

ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দুই ডোজ যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া করোনার আলফা ধরনের বিরুদ্ধে যতটা কার্যকর ছিল, ভারতীয় ধরন ডেলটার বিরুদ্ধেও প্রায় ততটাই কার্যকর বলে নতুন একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) গবেষকেরা বলেছেন, করোনার ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে ফাইজারের টিকার দুই ডোজ ৮৮ শতাংশ কার্যকর। আর আলফা ধরনের বিরুদ্ধে এই টিকার দুই ডোজ ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।

অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকার দুই ডোজ ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে ৬৭ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে বলে পিএইচইর গবেষকেরা জানিয়েছেন। আর আলফা ধরনের বিরুদ্ধে এই টিকার দুই ডোজ ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।