গাজা সিটি দখলে ইসরায়েলি অভিযানের প্রথম ধাপ শুরু, ডাকা হচ্ছে ৬০ হাজার সেনা

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তের ইসরায়েলি অংশে সাঁজোয়া যানের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এক ইসরায়েলি সেনাসদস্য। ১৮ আগস্ট ২০২৫ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজা সিটি দখল ও নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত স্থল অভিযানের ‘প্রাথমিক পদক্ষেপ’ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা ইতিমধ্যে গাজা উপত্যকার ওই শহরের উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়েছে।

এক ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেন, মূল অভিযানের ক্ষেত্র তৈরির জন্য সেনারা এরই মধ্যে জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় অভিযান চালাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনার অনুমোদন দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।

এ অভিযানে অংশ নিতে আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুতে ৬০ হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হচ্ছে। তাঁদের রণাঙ্গনে লড়াইরত সেনাদের পরিবর্তে মোতায়েন করা হবে।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্মম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েল এগিয়ে নিতে থাকায় সেখানকার লাখো বাসিন্দাকে দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ইসরায়েলের অনেক মিত্র গাজা সিটি দখলের এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল বুধবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সতর্ক করে বলেছেন, এ পরিকল্পনা ‘দুই জাতির জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং গোটা অঞ্চলকে স্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।’

আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) বলেছে, নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ও সহিংসতা বেড়ে গেলে গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।

গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির পরোক্ষ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকা দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

গতকাল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, ২২ মাসের যুদ্ধে হামাস এখন ‘ক্ষতবিক্ষত ও বিধ্বস্ত’।

ডেফরিন বলেন, ‘আমরা গাজা সিটিতে হামাসের ওপর আরও গভীরভাবে আঘাত হানব। ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ ‘সন্ত্রাসী’ অবকাঠামো ধ্বংস করব এবং হামাসের ওপর জনগণের নির্ভরতা ছিন্ন করব।’

আইডিএফের এ মুখপাত্র বলেন, সেনাবাহিনী অভিযান শুরুর জন্য বসে থাকছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু করেছি। আইডিএফ ইতিমধ্যে গাজা সিটির উপকণ্ঠে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।’

মুখপাত্র জানান, জেইতুন এলাকায় দুটি ব্রিগেড ও জাবালিয়ায় আরেকটি ব্রিগেড কাজ করছে। তাঁর দাবি, জেইতুনে সাম্প্রতিক অভিযানে অস্ত্রভর্তি একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গও শনাক্ত করা হয়েছে।

ডেফরিন বলেন, বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গাজা সিটির বাসিন্দাদের আগে থেকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

তবে হামাসশাসিত গাজার বেসামরিক নিরাপত্তা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল এএফপিকে বলেন, জেইতুন ও সাবরা এলাকার পরিস্থিতি ‘খুবই ভয়াবহ ও অসহনীয়’।

এএফপি জানিয়েছে, গতকাল ওই এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।

ডেফরিন দাবি করেন, গাজায় এখনো ৫০ জন জিম্মি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযানে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে তাঁদের পরিবারগুলোর আশঙ্কা, স্থল অভিযানে জিম্মিদের জীবন হুমকিতে পড়তে পারে।

আইসিআরসি সতর্ক করেছে, নতুন এ অভিযান বেসামরিক নাগরিকদের পাশাপাশি জিম্মিদের জীবনও বিপদের মুখে ফেলবে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন