গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যেসব শর্ত আছে

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় বিধ্বস্ত জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের কয়েকটি ভবন। ২১ নভেম্বর, উত্তর গাজায়
ছবি: রয়টার্স

সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা বন্ধের এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। ফলে অন্তত চার দিনের জন্য গাজাবাসী ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেকে রেহাই পাবে।

আজ বুধবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদনের এ খবর জানা গেছে। জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসকে সম্মত করতে মধ্যস্থতা করেছে কাতার।

এর পরপরই হামাসের পক্ষ থেকে টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েল সরকারও। এসব বিবৃতি থেকে যুদ্ধবিরতির কিছু শর্তের কথা জানা গেছে।

আরও পড়ুন

বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় সব এলাকায় আকাশ ও স্থলপথে যেকোনো ধরনের অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকবে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সামরিক যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

চিকিৎসা উপকরণ, জ্বালানিসহ মানবিক সহায়তা নিয়ে শত শত ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এসব ট্রাককে গাজায় ঢোকার অনুমতি দেবে।

হামাস জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় চার দিনের জন্য ড্রোন ওড়ানো বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। উত্তর গাজায় প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা (স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত) ড্রোন ওড়ানো বন্ধ রাখা হবে।

সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় গাজার যেকোনো এলাকা থেকে যে কাউকে আটক করা কিংবা কারও ওপর হামলা না করার বিষয়েও সম্মত হয়েছে ইসরায়েল, এমনটাই জানিয়েছে হামাস।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ইসরায়েল সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের হাতে আটক থাকা ৫০ জনের মতো জিম্মিকে (নারী ও শিশু) আগামী চার দিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে। তাঁদের নিরাপদে ইসরায়েলে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে। কেননা, ইসরায়েল সরকার সব জিম্মিকে মুক্ত করার বিষয়ে দায়বদ্ধ।

এ ছাড়া জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে। অতিরিক্ত ১০ জন করে জিম্মিকে মুক্তি দিলে যুদ্ধবিরতিতে একটি করে অতিরিক্ত দিন যোগ করা হবে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েল সরকার।

তবে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হলেও হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার, দেশের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সব জিম্মিকে দেশে ফেরানো, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন করে আর কোনো হুমকি নেই, এমনটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

আরও পড়ুন

সাময়িক যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকা কয়েক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলেও পূর্ব জেরুজালেম থেকে জানিয়েছেন আল-জাজিরার প্রতিনিধি হামদাহ সালহুত।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েল জানায়, ওই হামলায় প্রাণ হারান ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ। আর ২৪০ জনের মতো মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।

এর পরপরই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় ফিলিস্তিনে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। এর বেশির ভাগই শিশু ও নারী। উদ্বাস্তু হয়েছে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। অবরুদ্ধ গাজায় চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন