এমন রাত বাড়তে থাকলে একসময় ইসরায়েলিরা প্রশ্ন তুলবে, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

ইসরায়েলের হাইফা শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। ১৬ জুন ২০২৫ছবি: এএফপি

আকাশপথে ইরানের চালানো পাল্টা হামলা থেকে ইসরায়েলিরা কতটা সুরক্ষিত? এই প্রশ্নের উত্তর ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের সাংবাদিক গিদেওন লেভির কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছে আল-জাজিরা।

গিদেওন লেভি আল-জাজিরাকে বলেন, বেশির ভাগ ইসরায়েলি আকাশপথের হামলা থেকে ‘খুব ভালোভাবে সুরক্ষিত’।

তবে গিদেওন লেভি বলেন, এমন হামলা চলতে থাকলে ইসরায়েলিরা একসময় শুধু ক্লান্ত আর ভীতই হবে না, একসময় যুদ্ধের পর যুদ্ধ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলবে। এভাবে তারা কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

আরও পড়ুন

গত শুক্রবার ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। চলমান ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের অন্তত ২০ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। ইরানও পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরানের হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন।

আকাশপথে চালানো হামলা থেকে ইসরায়েলিদের সুরক্ষার ব্যবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিক গিদেওন লেভি বলেন, ইসরায়েলে ‘অ্যালার্ম সিস্টেম’ খুব কার্যকরভাবে কাজ করে। এবার তাঁরা ‘সাইরেন’ বাজার অনেক আগেই ‘অ্যালার্ম’ পাচ্ছেন। ফলে তাঁরা নিজেদের প্রস্তুত করার সময় পাচ্ছেন। যেমন তেল আবিবের বেশির ভাগ এলাকায় অনেক আশ্রয়কেন্দ্র আছে। তা ছাড়া নতুন প্রতিটি ভবনেই নিজস্ব আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ কক্ষ থাকে। এই দিক থেকে দেখলে ইসরায়েলের সাধারণ জনগণ যথেষ্ট সুরক্ষিত।

ইসরায়েলে ‘অ্যালার্ম সিস্টেম’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আকাশপথে হামলার বিষয়ে লোকজনকে আগাম সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। অন্যদিকে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় আকাশপথে হামলা শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে ‘সাইরেন’ বাজানো হয়।

আরও পড়ুন

তবে গিদেওন লেভি উল্লেখ করেন, এই সুরক্ষা সব ইসরায়েলির জন্য সমান নয়। যেমন বেদুইন জনগোষ্ঠী কিংবা ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিকেরা এ সুবিধা পান না।

এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের উত্তরের ফিলিস্তিনিপ্রধান শহর তামরার উদাহরণ দেন গিদেওন লেভি। শহরটিতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। এখানে গতকাল রোববার একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় অন্তত চারজন নিহত হন। এখানে কোনো সুরক্ষা আশ্রয়কেন্দ্র নেই। কিন্তু পাশের একটি এক হাজার জনসংখ্যা–অধ্যুষিত ইহুদি গ্রামে একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র আছে বলে জানান গিদেওন লেভি।

সাংবাদিক গিদেওন লেভি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ রকম রাত যত বাড়বে, ইসরায়েলিরা শুধু ক্লান্ত আর ভীতই হবে না, বরং একসময় আমরা শেষমেশ নিজেরাই প্রশ্ন করতে শুরু করব—এর কি কোনো মূল্য আছে? আমরা কোথায় যাচ্ছি? এক যুদ্ধ থেকে আরেক যুদ্ধে? এক গোলাবর্ষণ থেকে আরেক গোলাবর্ষণে? কারণ, এবারের পরিস্থিতি গাজা বা লেবাননের মতো নয়। এবার বেসামরিক জনগণের খেসারত হতে পারে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই ইসরায়েল কয়েক দিন এটা সহ্য করতে পারবে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে নয়।’