২১ বছর আগে শুরু হওয়া ইরাক যুদ্ধের ইতি ঘটে যেভাবে

ইরাকের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের প্রস্তাবে সই করছেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর তোলাছবি: এপি

আজ থেকে ঠিক ২১ বছর আগের ঘটনা। ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ বাহিনী হামলা চালায় ইরাকে। বিশ্বের বুকে শুরু হয় নতুন একটি যুদ্ধ—ইরাক যুদ্ধ। পরদিন থেকে দেশটিতে স্থল অভিযান শুরু করে পশ্চিমা বাহিনী। মাসখানেকের বেশি চলে সর্বাত্মক যুদ্ধ। ইঙ্গ–মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে এ অভিযানে যুক্ত হন পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সেনারা।

তখন ইরাকে ক্ষমতায় সাদ্দাম হোসেন। যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য অভিযোগ করে, প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের (ডব্লিউএমডি) মজুত গড়ে তুলেছেন। সেই সঙ্গে আল–কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তাই সাদ্দামের বিরুদ্ধে শুরু হয় ইঙ্গ–মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধ।

২০১১ সাল পর্যন্ত ইরাকে মার্কিন সেনারা অবস্থান করেন। পরে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, ইরাক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু এর আগেই যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে পৌনে ৩ লাখ মানুষের। ধ্বংস হয়ে গেছে সমৃদ্ধ ইরাকের বহু এলাকা।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
ইরাক যুদ্ধের শুরুটা নিয়ে বলতে গেলে আরেকটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। সময়টা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় যুক্তরাষ্ট্র। আল–কায়েদার ওই হামলায় ধসে পড়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের জোড়া ভবন। হামলা থেকে বাদ যায়নি মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনও।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করেন। ততদিনে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বুশ অভিযোগ তোলেন, ডব্লিউএমডির মজুত গড়েছেন সাদ্দাম, আল–কায়েদাকে সমর্থন জোগাচ্ছেন তিনি। যদিও পরে এসব অভিযোগ কার্যত মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

২০১১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার হাউস অব কমন্সে একটি ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় না থাকলেও ইরাক, পুরো অঞ্চল ও বিশ্ব আরও ভালো থাকবে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এমন অবস্থানে নতুন যুদ্ধের দামামা শুনতে পায় বিশ্ববাসী। দিকে দিকে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ছড়ায়। কিন্তু তাতে মোটেও কর্ণপাত করেননি বুশ–ব্লেয়ার।

২০০২ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৪৪১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। নিরস্ত্রীকরণের বাধ্যবাধকতা মানতে ইরাককে সর্বশেষ সুযোগ দেয় জাতিসংঘ।

কিন্তু চার দিনের মাথায় ইরাকের পার্লামেন্ট ভোটাভুটির মাধ্যমে জাতিসংঘের ওই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে অনিবার্য একটি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায় সাদ্দাম হোসেনের ইরাক।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট সাদ্দামকে সময় বেঁধে দেন বুশ। কাজ না হওয়ায় ২০০৩ সালের ১৭ মার্চ বুশ ঘোষণা দেন, আর কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ নয়। সাদ্দাম ও তাঁর ছেলেদের ইরাক ছাড়তে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেন তিনি।

ইরাকের বসরায় সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদের বাইরে পশ্চিমা সেনারা। ২০০৩ সালের এপ্রিলে তোলা
ছবি: রয়টার্স

শুরু হয় যুদ্ধ
২০০৩ সালের ১৯ মার্চ জর্জ ডব্লিউ বুশ টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জানান, ইরাকে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে পশ্চিমা সামরিক জোট। দেশটিকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত করা ও সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরানো এর উদ্দেশ্য। বুশের বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই পশ্চিমা সামরিক বিমানগুলো বাগদাদের আকাশে উড়ে যায়। বোমা ফেলে। শুরু হয় যুদ্ধ।

পরদিন কুয়েত সীমান্ত দিয়ে ইরাকে ঢুকে পড়েন পশ্চিমা জোটের সেনারা। বসরার নিয়ন্ত্রণ নেন তাঁরা। বসরা ও শহরটির আশপাশের সব তেলক্ষেত্র পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

এদিন সামরিক পোশাকে ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন সাদ্দাম হোসেন। ভাষণে তিনি জুনিয়র বুশকে ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেই সঙ্গে ইরাকি জনগণকে দখলদারদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

২৩ মার্চ ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সেখানে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় পশ্চিমাদের। তবে ইরাকজুড়ে নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়া হয়। এতে হতচকিত হয়ে পড়েন ইরাকের সেনারা।

বাগদাদের পতন হয় ৯ এপ্রিল। ওই দিন পশ্চিমা সেনারা রাজধানী শহরটিতে প্রবেশ করেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে সাদ্দামের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনা বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়। তখনো ইরাকি বাহিনী ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রতিরোধ জারি রেখেছিল।

যুদ্ধ শেষের ঘোষণা
২০০৩ সালের ১ মে। আবারও টেলিভিশনের পদায় হাজির হন জর্জ ডব্লিউ বুশ। ইরাক যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে জানান, যুদ্ধ শেষ হলেও পশ্চিমা সেনারা এখনই ইরাক ছাড়বে না। এর মধ্য দিয়ে ইরাকে কয়েক বছরের সামরিক দখলদারত্বের সূচনা হয়।

ওই মাসের ২৫ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন প্রভিন্সিয়াল কাউন্সিল (সিপিএ) একটি প্রক্রিয়া শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল সাদ্দামের রাজনৈতিক দল বাথ পার্টির প্রভাবমুক্ত ইরাক গড়ে তোলা। এর আওতায় সাদ্দাম হোসেনের আমলে ইরাক ছাড়তে বাধ্য হওয়া শিয়াদের ফিরিয়ে এনে ক্ষমতাশালী করা হয়।

বাগদাদের পতনের পর থেকে সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর নিজের জন্ম শহর তিকরিতের পাশ থেকে মার্কিন সেনারা তাঁকে আটক করে।

শেষ হয়েও হলো না
ইরাক যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছে ঠিকই। কিন্তু দেশটিতে যুদ্ধ আদতে থামেনি। কেননা, তখনো ইরাক ছাড়েননি ইঙ্গ–মার্কিন সেনারা। জায়গায় জায়গায় চলতে থাকে খণ্ডযুদ্ধ।

২০০৪ সালের এপ্রিলের শেষদিকে কিছু আলোকচিত্র আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবিতে দেখা যায়, মার্কিন সেনারা ইরাকি যুদ্ধবন্দীদের নির্মম নির্যাতন করছেন। এসব ঘটনা ঘটে বাগদাদের আবু গারিব কারাগারে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে।

ওই বছরের জুনে প্রথমবারের মতো সাদ্দাম হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। আনা হয় যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ।

ইরাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালের আগস্টে দেশটিতে বেকারত্বের হার ৭০ শতাংশে উঠে যায়। ইরাক পুনর্গঠনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আরব লীগের প্রধান দেশটি সফর করেন।

আরও পড়ুন
ইরাকের বাগদাদে আদালতের কাঠগড়ায় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন
ছবি: রয়টার্স

বহু দলের নির্বাচন
২০০৫ সালের ৩০ জানুয়ারি, ইরাকে পাঁচ দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কুর্দিশ রাজনীতিক জালাল তালাবানি। আধা–স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের প্রধান হন মাসুদ বারজানি।  

এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইরাকের ভোটারেরা একটি নতুন সংবিধানের পক্ষে নিজেদের মত দেন। সংবিধানে ইরাকে একটি ইসলামিক ফেডারেল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা হয়। গঠিত হয় ইরাকের পার্লামেন্ট। শিয়াপন্থী ইউনাইটেড ইরাকি অ্যালায়েন্স পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় পায়।

রক্তপাতের বছর
ওই সময়টাতে ইরাকে বেশ সক্রিয় ছিল আল–কায়েদা। ২০০৬ সালের এপ্রিল নাগাদ শুধু পশ্চিমা বাহিনী নয়, ইরাকের অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও রক্তক্ষয়ী বিরোধে জড়ায় আল–কায়েদা।

২০ মে, ২০০৬ ইরাকের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নূরি আল–মালিকি।

ওই নির্বাচনের এক মাস পর ইরাকে আল–কায়েদার নেতা আবু মুসাব আল–জারকাওয়ি মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন। এরপর ইরাকে আল–কায়েদার নেতা হন সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবু আইয়ুব আল-মাসরি।

বছরজুড়ে ইরাকে একের পর এক হামলা–পাল্টা হামলা চলছিল। তবে জুলাই ছিল ইরাকের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী মাস। বিভিন্ন হামলা ও বোমাবর্ষণে জুলাইয়ে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ইরাকির প্রাণ যায়। দৈনিক গড়ে ১১০ জন নিহত হন।

একই বছর ৩০ ডিসেম্বর ছিল ঈদুল আজহা। ওই দিন সকালবেলা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৬৯ বছর বয়সী সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আরও সেনা পাঠান বুশ
ইরাকজুড়ে সংঘাত ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে আরও ২১ হাজার ৫০০ সেনা পাঠানোর প্রস্তাব তোলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ।

সামারার আল–আসকানি মসজিদে আত্মঘাতী হামলা হয়। ইরাকের উত্তরাঞ্চলেও একাধিক আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে।

২০০৭ সালের অক্টোবরে ১ লাখ ৭১ হাজার মার্কিন সেনা ইরাকে অবস্থান করছিলেন। অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সেনা ছিলেন আরও ১২ হাজার।

অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ইরাক সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় প্রধান সুন্নি রাজনৈতিক জোট ‘ইরাকি অ্যাকর্ডেন্স ফ্রন্ট’। যুক্তরাজ্যের সেনারা বসরার নিরাপত্তার দায়িত্ব ইরাকি সেনাদের হাতে ছেড়ে দেয়। সেই সঙ্গে ইরাকের মাটিতে ব্রিটিশ সেনাদের সংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন
ইরাকে মার্কিন সামরিক যান
ফাইল ছবি: এএফপি

কমে আসে বিদেশি সেনা
২০০৮ সালের মার্চে মার্কিন নেতৃত্বধীন জোটের সহায়তায় ইরাকি সেনারা বসরায় শিয়া নেতা আল–সদরের মাহদি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূরি আল–মালিকি জানান, বসরায় শিয়া মিলিশিয়াদের নিশ্চিহ্ন করা হবে।

মে মাসে এসে ইরাক সরকার ও মিলিশিয়ারা একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। আর ২০০৮ সালের শেষে এসে ইরাকের মাটিতে মার্কিন সেনাসহ বিদেশি সেনার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজারে নামিয়ে আনা হয়।

সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা
হোয়াইট হাউস থেকে তত দিনে বিদায় নিয়েছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বারাক ওবামা। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওবামা ঘোষণা দেন, ২০১০ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে ইরাকে মার্কিন সেনাদের সব কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হবে। আর ২০১১ সালের শেষে ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা দেশে ফিরবে।

২০০৯ সালের এপ্রিলে ইরাক থেকে সেনাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় যুক্তরাজ্য। বসরা ঘাঁটি মার্কিন বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন ব্রিটিশ সেনারা।

একই বছরের জুলাইয়ে টনি ব্লেয়ারের উত্তরসূরি গর্ডন ব্রাউন ইরাক যুদ্ধে তাঁর দেশের যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি না, তা যাচাইয়ে স্বাধীন তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন

সেনা প্রত্যাহারের নিন্দা
২০১০ সালের মার্চে ইরাকে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। তবে নির্বাচনে কোনো জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়।

একই সময়ে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সমালোচনা করেন ইরাকের সেনা কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, নিজেদের নিরাপত্তা দেওয়ার মতো পুরো সক্ষমতা ইরাকের নেই। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন সেনারা চলে গেলে চরম সংকটে পড়বে ইরাক।

সমালোচনা উপেক্ষা করে ২০১০ সালের আগস্টে ইরাক থেকে  মার্কিন সেনাদের সর্বশেষ ব্রিগেড দেশে ফিরিয়ে নেয় ওয়াশিংটন। তবে ইরাকিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিতে ৫০ হাজার সেনা দেশটিতে রয়ে যান।

ওই বছরের নভেম্বরে জালাল তালাবানি ইরাকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান। প্রধানমন্ত্রী হন নূরি আল–মালিকি। নানা বিভক্তিসহ পার্লামেন্টের অনুমোদন পায় মালিকির নতুন সরকার।

আরও পড়ুন

ইরাকজুড়ে বিক্ষোভ
কয়েক বছর ইরানে ছিলেন শিয়া নেতা মুক্তাদা আল–সদর। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে ফেরেন তিনি। জানানো হয়, যদি মার্কিন বাহিনী প্রতিশ্রুতি মেনে ইরাক ছেড়ে যায়, তাহলে আর তাদের ওপর হামলা চালাবেন না সদরের সমর্থকেরা।

ততদিনে আরব বসন্তে কেঁপে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। এর ঢেউ এসে লাগে ইরাকেও। রাজধানী বাগদাদ ও দেশটির উত্তরাঞ্চলে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। সরকারি সেবা উন্নত করা ও দুর্নীতির লাগাম টানার দাবিতে শুরু হয় ইরাকিদের এ বিক্ষোভ।

২০১১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দেয়, ইরাকে সেনা রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করা হয়েছে। বছরের শেষ দিকে সব মার্কিন সেনা ইরাক ছেড়ে আসবেন। ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সেনা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত ঘোষণা আসে। এভাবেই ইরাক যুদ্ধের রক্তাক্ত অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক ইতি টানা হয়।

সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন অনিন্দ্য সাইমুম

আরও পড়ুন