তুরস্কের তৈরি আকাশযুদ্ধের এই মারণাস্ত্র এখন বিশ্বের আর কারও হাতে নেই

তুরস্কের মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান বাইরকতার কিজেলেলমাছবি: টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ভিডিও থেকে নেওয়া

প্রথমবারের মতো তুরস্কের একটি মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। তুরস্কের ওই মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমানের নাম বাইরকতার কিজেলেলমা (কেআইজেডআইইএলএমএ)।

দেশটির শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইকার সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যাধুনিক এই সমরাস্ত্র তৈরি করেছে।

তুরস্কের সিনোপ উপকূলে কিজেলেলমার সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষার সময় এটি আকাশ থেকে আকাশে নিখুঁত নিশানায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা একটি জেট ইঞ্জিনচালিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

এই প্রথম কোনো মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান নিখুঁতভাবে আকাশে প্রচণ্ড গতিতে চলমান কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হলো।

টিআরটি ওয়ার্ল্ড বাইরকতার কিজেলেলমার পরীক্ষার দিনের ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে ২০ নভেম্বর পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়।

গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি বাইকার বলেছে, তাদের মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান বাইরকতার কিজেলেলমা দেশে তৈরি করা জিওকেডিওজিএএন আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে উচ্চগতিতে চলা নিশানায় নিখুঁত আঘাত হেনেছে।

বাইরকতার কিজেলেলমা তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি এসেলসানের তৈরি মুরাদ এইএসআই (অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে) রাডার ব্যবহার করা হয়েছে। এই রাডার দিয়ে সেটি প্রথমে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে, তারপর সেটি অনুসরণ করে নিজের ডান ও বাঁ পাখার নিচ থেকে নিখুঁত নিশানায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

তুরস্কের আকাশ প্রতিরক্ষার ইতিহাসে এই প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি কোনো মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান দেশীয়ভাবে তৈরি রাডার ব্যবহার করে দেশে তৈরি আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে নিশানা করেছে।

তুরস্কের আকাশ প্রতিরক্ষার ইতিহাসে এই প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি কোনো মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান দেশীয়ভাবে তৈরি রাডার ব্যবহার করে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

শুধু তা–ই নয়, বরং এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে বাইরকতার কিজেলেলমা (কেআইজেডআইএলইএলএমএ) বিশ্বে প্রথম এবং একমাত্র মনুষ্যবিহীন আকাশযান হিসেবে আকাশ থেকে আকাশে যুদ্ধের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

আরও পড়ুন

তুরস্কের মেরজিফন বিমানঘাঁটি থেকে এই পরীক্ষা চালানো হয়। বাইরকতার কিজেলেলমার সঙ্গে পাঁচটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মাধ্যমে মনুষ্যবিহীন ও মানুষবাহী যুদ্ধবিমানের যৌথ অংশগ্রহণে ভবিষ্যৎ আকাশযুদ্ধ কেমন হতে পারে, তার একটি নমুনা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

আরেকটি বাইরকতার একেআইএনসিআই মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান এই অভিযানে সঙ্গে ছিল এবং আকাশ থেকে পুরো ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করেছে।

বাইরকতার কিজেলেলমা শত্রুর রাডারে খুব একটা ধরা পড়ে না। সেই সঙ্গে উন্নত সেন্সরব্যবস্থার মাধ্যমে এটি দূর থেকে শত্রুবিমান শনাক্ত করতে সক্ষম, তা–ও আবার শত্রুর চোখে নিজে ধরা পড়ার আগেই।

এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যেমন, মুরাদ এইএসএ রাডার এবং টয়গান টার্গেটিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এটি দেশীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম।

আরও পড়ুন

আগের পরীক্ষায় বাইরকতার কিজেলেলমা টিওএলইউএন এবং টিইবিইআর-৮২ অস্ত্র ব্যবহার করে সরাসরি ভূমিতে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল।

এবার এটি আকাশ থেকে আকাশে আঘাত হানার সক্ষমতা দেখিয়েছে।

বাইরকতার কিজেলেলমা শত্রুর রাডারে খুব একটা ধরা পড়ে না। সেই সঙ্গে উন্নত সেন্সরব্যবস্থার মাধ্যমে এটি দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে শত্রুবিমান শনাক্ত করতে সক্ষম।

অর্থাৎ বাইরকতার কিজেলেলমা এখন আকাশ থেকে ভূমি এবং আকাশ থেকে আকাশ—উভয় অভিযানে নিজের কার্যক্ষমতা দেখিয়েছে। নিশ্চিতভাবেই এই যুদ্ধবিমান তুরস্কের প্রতিরক্ষা কৌশলে আরও বিস্তৃত ভূমিকা রাখতে চলেছে।

তুরস্কের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইকার ২০০৩ সাল থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব তহবিলে মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) প্রকল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে কোম্পানিটি ড্রোন রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানির একটি। কোম্পানিটি ২০২৩ সালে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি থেকে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। ২০২৪ সালেও তাদের আয়ের এই ধারা ধরে রেখেছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাইকার চার বছর ধরে তুরস্কের শীর্ষ প্রতিরক্ষা ও অ্যারোস্পেস রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ধরে রেখেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন