বিদায় ২০২৫
গাজা দখলের ইসরায়েলি ‘হলুদ’ নকশা কি ঠেকাতে পারে ট্রাম্পের ২০ দফা
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা বন্ধ হওয়ায় বিদায়ী বছরটি ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বস্তির একমাত্র কারণ হয়ে থাকবে। তবে গাজা দখলে ইসরায়েলি নীলনকশা এবং পশ্চিম তীরে তাদের দখলদারির প্রসার আরও একটি কঠিন বছরের দুঃস্বপ্ন দেখাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০–দফা শান্তি প্রস্তাবের পথ ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় স্থায়ী শান্তি না ফিরলেও গত অক্টোবরে বন্ধ হয়েছে ইসরায়েলের চালানো দুই বছরের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ। যদিও ‘একপক্ষীয়’ এই যুদ্ধবিরতিতে এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। গাজাকে দুই ভাগ করে টানা ইসরায়েলের কথিত ‘ইয়েলো লাইন’ বা ‘হলুদ রেখা’ যে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ড দখলের নীলনকশা, তা দৃশ্যত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান।
ইসরায়েলের নানা কূটকৌশল সত্ত্বেও নিজের ২০–দফা শান্তি প্রস্তাবের দ্বিতীয় ধাপ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দ্বিতীয় ধাপের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলো—গাজা থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং সেখানে আন্তর্জাতিক একটি ‘অস্থায়ী’ বাহিনী মোতায়েন ও হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ। কিন্তু সেনা প্রত্যাহারে রাজি নয় ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল অস্ত্র ছাড়তে সম্মত হামাস।
সবকিছু মিলিয়ে এখনো অনিশ্চিত গাজার ভবিষ্যৎ। ইসরায়েলের অব্যাহত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও গাজা দখলের পরিকল্পনার বিপরীতে হামাসের প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার—এ দুয়ের ফলে এ বছর বন্ধ হওয়া সংঘাত কত দিন টিকবে, নতুন বছরে তার ওপরই নজর থাকবে সবার।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’
গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ওই দিন দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাসসহ গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো। এ হামলাকে পুঁজি করে ওই দিনই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বন্দিবিনিময়ের জন্য মাঝে কিছু দিনের বিরতি ছাড়া দুই বছর ধরে চলে এই হত্যাযজ্ঞ। ইসরায়েলি বাহিনীর ‘পোড়ামাটি নীতির’ ফলে বিরাণভূমিতে পরিণত হয় অবরুদ্ধ উপত্যকাটি। সর্বাত্মক অবরোধের কারণে গাজায় নেমে আসে দুর্ভিক্ষ। দুধের অভাবে প্রাণ হারাতে থাকে শিশুরা।
ইসরায়েলের এই অমানবিক অবরোধ ভাঙতে সমুদ্রপথে গাজার উদ্দেশে রওনা হয় ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’। এ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এ বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। নৌযানগুলোয় প্রতীকী হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানবিক কার্গোয় খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও গাজার জনগণের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছিল।
শুরুতে এই নৌবহরে ৫০টির বেশি জাহাজ ও অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী ও আইনপ্রণেতা ছিলেন। এই বহরে ছিলেন সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও। ফ্লোটিলায় থাকা অধিকারকর্মীরা সমুদ্রে প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হন। এ ছাড়া মাল্টা ও ক্রিটের কাছে সন্দেহভাজন ড্রোন হামলার ঘটনাও ছিল। এতে কিছু নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়। যখন ফ্লোটিলা পূর্ব ভূমধ্যসাগরের কাছে পৌঁছায়, তখন বহরে ৪৪টি জাহাজ ছিল।
কিন্তু ফ্লোটিলার কোনো জাহাজকে শেষ পর্যন্ত গাজায় ভিড়তে দেয়নি ইসরায়েল। এই বহরের সব নৌযানের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। সেগুলোকে ইসরায়েলের সমুদ্রবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক করা হয় পাঁচ শতাধিক অধিকারকর্মীকে। অবশ্য পরে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
‘অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়ট’
চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়ট’ নামে গাজায় নতুন সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। মূলত গাজা নগরীকে লক্ষ্য করে এ হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ অভিযান এড়াতে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় হামাস। ইসরায়েল সাড়া না দিলে যুদ্ধবিরতির এ প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
নতুন এই অভিযানের মাধ্যমে গাজা নগরীর অবশিষ্ট বাড়িঘর ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযান থেকে রেহাই পায়নি সেখানকার প্রায় অচল হাসপাতালগুলো এবং সেখানকার চিকিৎসক ও কর্মীরাও। এ ছাড়া বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিতে বিস্ফোরক ভর্তি চালকবিহীন সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি। গাজায় ইসরায়েলের চালানো হত্যাযজ্ঞকে জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি কমিশন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ট্রাম্পের ২০ দফা ও ‘একপক্ষীয়’ যুদ্ধবিরতি
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে এক পরিকল্পনা প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। তখন বলা হয়, উভয় পক্ষ পরিকল্পনার ২০–দফা প্রস্তাব মেনে নিলে যুদ্ধ মুহূর্তেই থেমে যাবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় আটক সব জীবিত ও মৃত জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আর ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন ব্যবস্থায় গাজা শাসনের দায়িত্ব নেবে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট সরকার। সেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি অস্ত্র ত্যাগ করবে। ইসরায়েলও গাজা দখল বা একে তার সঙ্গে যুক্ত করবে না। প্রস্তাবে গাজা উপত্যকার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স বা আইএসএফ) গঠনেরও কথা বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী জীবিত ও মৃত সব বন্দীকে হস্তান্তর করে হামাস।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন বেসরকারি সরকারি সংস্থার মতে, বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ১০০ থেকে ৩০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করতে পারছে। গাজায় প্রয়োজনীয় তাঁবু পর্যন্ত ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এমনকি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এখন পর্যন্ত মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং খুলতে দেয়নি ইসরায়েল।
অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলের প্রায় ৮০০ বার গাজায় হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৪১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৩ ডিসেম্বর গাজা নগরীতে ইসরায়েলের হামলায় হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রায়েদ সাদ নিহত হন।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন বেসরকারি সরকারি সংস্থার মতে, বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ১০০ থেকে ৩০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করতে পারছে। গাজায় প্রয়োজনীয় তাঁবু পর্যন্ত ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
এমনকি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এখন পর্যন্ত মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং খুলতে দেয়নি ইসরায়েল। এর ফলে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর বছরের শেষ দিকে দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রবল বৃষ্টি আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া গাজার বাসিন্দাদের জীবন।
গাজা দখলের ‘হলুদ’ নকশা
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে উপত্যকাটিতে নির্দিষ্ট সীমারেখা বরাবর সেনা সদস্যের সরিয়ে নেয় ইসরায়েল। ওই সীমারেখাকে বলা হয় ‘ইয়েলো লাইন’ বা ‘হলুদ রেখা’। একটি খসড়া মানচিত্রে দেখা গেছে, হলুদ রেখা টেনে দেওয়ার মধ্য দিয়ে গাজার প্রায় ৫৮ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
ওই হলুদ রেখার কাছে গেলেই ফিলিস্তিনিদের গুলি করে ও ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ৬ ডিসেম্বর সাত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ বছর বয়সী এক নারী ও তাঁর ছেলেও ছিলেন।
গাজা নগরীতে তাঁদের দুজনকে একটি ইসরায়েলি ড্রোন তাড়া করে হামলা চালায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের পৃথক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। ওই তিনজন ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রম করেছিলেন।
এই হলুদ রেখাই গাজা ও ইসরায়েলের ‘নতুন সীমান্ত’ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির। সম্প্রতি গাজায় মোতায়েন করা ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এ কথা বলেন।
হলুদ রেখা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের আর পিছিয়ে না নেওয়ার অর্থ হলো, গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইসরায়েলের। এর মধ্যে গাজার অনেক কৃষিজমি ও মিসরের সঙ্গে উপত্যকাটির রাফার সীমান্ত ক্রসিং রয়েছে।
ইয়াল জামির বলেন, ‘হলুদ রেখা হবে (ইসরায়েলের) নতুন সীমান্ত। এটি আমাদের সম্মুখ প্রতিরক্ষা রেখা হিসেবে কাজ করবে। এই রেখা বরাবর আমাদের অভিযান কার্যক্রম চলবে। গাজার বড় অংশে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা এই প্রতিরক্ষা রেখা থেকে সরব না।’
এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সরকার গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তারা বলেছে, ‘নতুন করে সন্ত্রাসের ঝুঁকি দেখা না দিলে’ তারা একটি বাফার জোন মেনে চলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শর্তের এসব ফাঁকফোকর ইসরায়েলকে গাজায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করার সুযোগ দেবে।
আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের তোড়জোড়
চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েন নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়। এ আলোচনার নেতৃত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)।
এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাহিনীর নেতৃত্বের কাঠামোসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের প্রথম মাসেই বিভিন্ন দেশের সেনাদের গাজায় মোতায়েন করা হতে পারে।
এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় স্বাস্থ্য ও নির্মাণ-সংক্রান্ত কাজের জন্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রিকো সিরাইত বলেন, ‘এটি এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ও প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে রয়েছে। যে বাহিনী মোতায়েন হবে, এখন তার গঠনপদ্ধতি প্রস্তুত করছি আমরা।’
এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সরকার গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তারা বলেছে, ‘নতুন করে সন্ত্রাসের ঝুঁকি দেখা না দিলে’ তারা একটি বাফার জোন মেনে চলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শর্তের এসব ফাঁকফোকর ইসরায়েলকে গাজায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করার সুযোগ দেবে।
তবে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন এতটা সহজ হবে না। কারণ, এ বাহিনী কোথায় মোতায়েন করা হবে, সেটাই এখনো স্পষ্ট নয়। হামাস বলছে, আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন হতে হবে সীমান্তে। অন্যদিকে, ইসরায়েল চায় গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হোক। আর ওই বাহিনীর হাতে অস্ত্র সমর্পণ করুক হামাস।
অবশ্য মার্কিন সূত্রগুলো বলছে, গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকা অংশে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে।
পশ্চিম তীর গ্রাস করছে ইসরায়েল
ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে রেহাই পাচ্ছে না দখলকৃত পশ্চিম তীরও। সেখানে নতুন করে আরও ১৯টি অবৈধ বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটি। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজেলাল স্মোতরিচ।
২১ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে স্মোতরিচ বলেন, নতুন বসতি স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন তিনি নিজেই। সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের জুদেয়া ও সামারিয়া এলাকায় ১৯টি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ নিয়ে বিগত তিন বছরে পশ্চিম তীরে ৬৯টি বসতি স্থাপনের অনুমতি দিল ইসরায়েল সরকার।
এমন সময় নতুন অবৈধ বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হলো, যখন কয়েক দিন আগেই জাতিসংঘ থেকে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। পশ্চিম তীরে গড়ে তোলা ইহুদি বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ উল্লেখ করে জাতিসংঘ তখন বলেছিল, কম করে হলেও ২০১৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডের অবৈধ বসতি স্থাপন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে জাতিসংঘ। সে সময় থেকে করা হিসাবের বরাতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘বিগত বছরগুলোয় অবৈধ বসতি স্থাপন দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে অবৈধভাবে ১২ হাজার ৮১৫টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।’
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম তীরে কম নৃশংসতা চালায়নি ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে অন্তত ১ হাজার ২৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। সেখানকার কয়েকটি শহরে সামরিক নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করেছে ইসরায়েল।
শেষ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা বন্ধ হওয়ায় বিদায়ী বছরটি ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বস্তির একমাত্র কারণ হয়ে থাকবে। তবে গাজা দখলের ইসরায়েলি নীলনকশা এবং পশ্চিম তীরে তাদের দখলদারির প্রসার আরও একটি কঠিন বছরের দুঃস্বপ্ন দেখাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের।
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি ও রয়টার্স