অভিজাত শ্রেণি কীভাবে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে খেয়ে ফেলছে

ক্রমশ দরপতন হয়েছে পাকিস্তানি রুপির। বর্তমানে দেশটিতে প্রতি ডলারের বাজারদর ২৮০ রুপিতে পৌঁছেছেফাইল ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে দুর্নীতিই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ। দেশটিতে ‘স্টেট ক্যাপচার’ অর্থাৎ রাষ্ট্রের নীতি এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে অল্পসংখ্যক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক এলিটদের স্বার্থ পূরণ হয়।

চলতি নভেম্বরে চূড়ান্ত হওয়া ‘দ্য গভর্ন্যান্স অ্যান্ড করাপশন ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্ট (জিসিডিএ)’–এ দেখা যায়, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মনীতি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারে না, জনসম্পদ রক্ষা করতেও ব্যর্থ হয়।

১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে ‘স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা ও ক্ষয়কারী’ দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করছে, জনগণের আস্থা কমাচ্ছে ও আর্থিক স্থিতি নষ্ট করছে।
আইএমএফের এ প্রতিবেদন পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে তৈরি। এতে সতর্ক করা হয়, যদি ‘এলিট সুবিধা কাঠামো’ ভেঙে না দেওয়া যায়, তবে দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলতেই থাকবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি সরকারের সব স্তরেই আছে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় তখন, যখন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলো নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ করে; বিশেষ করে যেসব খাত রাষ্ট্র বা সরকারি মালিকানাধীন কিংবা এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।

১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে ‘স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা ও ক্ষয়কারী’ দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করছে, জনগণের আস্থা কমাচ্ছে ও আর্থিক স্থিতি নষ্ট করছে।

আইএমএফ বলছে, সুশাসন ও জবাবদিহি বাড়ানো গেলে পাকিস্তান বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুফল পেতে পারে। এ রকম সংস্কারে দেশটির জিডিপি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তে পারে। ২০২৪ সালে তাদের জিডিপি ছিল ৩৪০ বিলিয়ন (৩৪ হাজার কোটি) ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন উদীয়মান অর্থনীতিতে সংস্কারের অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, পাঁচ বছরে সুশাসনসংক্রান্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করলে পাকিস্তানের জিডিপি ৫ থেকে ৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।’

পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন বলেন, দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহিহীনতা দেশটির উন্নয়ন সম্ভাবনাকে ধরে ধরে খাচ্ছে।

দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহিহীনতা দেশটির উন্নয়ন সম্ভাবনা ধরে ধরে খাচ্ছে। আইনকানুন ও জবাবদিহির নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ না করলে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো খুব সহজে নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। আর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে অবশ্যই সবার আগে সমাধান করতে হবে।
স্টেফান ডারকন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক

অধ্যাপক ডারকন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আইনকানুন ও জবাবদিহির নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ না করলে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো খুব সহজে নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। আর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে অবশ্যই সবার আগে সমাধান করতে হবে।’

নিচে আইএমএফের প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—দুর্বলতাগুলো কোথায়, কী নীতিগত সুপারিশ করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।

আইএমএফ প্রতিবেদন কী বলছে

১৯৫৮ সাল থেকে পাকিস্তান মোট ২৫ বার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের সামরিক কিংবা বেসামরিক—প্রায় সব সরকার আইএমএফের কাছে গেছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে তার বৈদেশিক লেনদেনের সমস্যাকে প্রতিফলিত করছে।  

২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের দেওয়া সুবিধা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ।

সর্বশেষ বর্তমান সহায়তা কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সময় শুরু হয়েছে। জিসিডিএ প্রকাশিত হয়েছে এমন সময়, যখন আগামী মাসে আইএমএফ নির্বাহী বোর্ড ১.২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ডলার ঋণ ছাড়ের অনুমোদন দিতে পারে। এটি ৩৭ মাসের ৭ বিলিয়ন (৭০০ কোটি) ডলারের প্যাকেজের অংশ।

২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য ঋণখেলাপি হওয়া থেকে বাঁচে। এর আগে আইএমএফ ৯ মাসের পুরোনো চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় ৩৭ মাসের চলতি কর্মসূচি।

আইএমএফ বলছে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী শাসন–সূচকে নিয়মিতই নিচের দিকে থাকে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের স্কোর একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে; যা বিশ্বের মধ্যে ও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপদের কাতারে।

আইএমএফের প্রতিবেদনের মূল বিষয় হলো ‘স্টেট ক্যাপচার’ ধারণা। সংস্থাটির মতে, এর অর্থ হলো, দুর্নীতি এক রীতি হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রকৃতপক্ষে সরকার পরিচালনার প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্র প্রায়ই সাধারণ জনগণের ক্ষতির বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীকে সমৃদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।

দুর্নীতি ও সুশাসন একে-অপরের সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি সুশাসন দুর্বল করে, দুর্বল সুশাসন আবার দুর্নীতি বাড়ায়।
সাজিদ আমিন জাভেদ, ইসলামাবাদের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ  

আইএমএফ হিসাব কষে দেখেছে, এ ‘এলিট সুবিধা’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর জন্য দেওয়া ভর্তুকি, কর ছাড় ও লাভজনক সরকারি চুক্তি—প্রতিবছর অর্থনীতির লাখো কোটি ডলার খেয়ে ফেলে। সঙ্গে কর ফাঁকি আর নিয়মনীতি নিজেদের মতো বদলে নেওয়ায় প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

এসব নতুন তথ্য নয়। ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের দেওয়া সুবিধা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক আলী হাসনাইন বলেন, ‘আইএমএফের বর্ণনা সঠিক হলেও এটা নতুন কিছু নয়। কীভাবে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত গোষ্ঠী ভূমি, ঋণ, শুল্কছাড় ও নিয়মকানুন থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়, তা ২০২১ সালের ইউএনডিপির প্রতিবেদনসহ দেশীয় অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছে।’

আলী হাসনাইন আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আইএমএফ যা বলেছে, বিশ্বব্যাংক এবং পাকিস্তানের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বহু আগেই তা বলেছে। সেটি হলো, ক্ষমতাবান গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা রক্ষায় নিয়মকানুন বানায়।’

ফ্রান্সের প্যারিসে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (ডানে)। ২২ জুন ২০২৩
ছবি: রয়টার্স

নতুন এ প্রতিবেদন বলছে, কর ছাড় ও কর–সুবিধা; বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট, উৎপাদন ও জ্বালানি খাতের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর জন্য দেওয়া ছাড় শুধু ২০২৩ অর্থবছরেই জিডিপির ৪ দশমিক ৬১ শতাংশের সমান ক্ষতি করেছে।

সরকারি চুক্তিগুলোতে ক্ষমতাবান রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করা এবং স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল (এসআইএফসি)–এর কার্যক্রমে বড় ধরনের স্বচ্ছতা আনার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

এসআইএফসি ২০২৩ সালের জুনে শাহবাজ শরিফের প্রথম মেয়াদে গঠিত হয়। এটি বেসামরিক–সামরিক নেতৃত্বে গঠিত অতিশক্তিশালী একটি সংস্থা। এটির কাজ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আনা। কিন্তু স্বচ্ছতার অভাবে এটি শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআইএফসির কর্মকর্তারা, যাঁদের অনেকেই সামরিক বাহিনীর; ব্যাপক আইনি সুরক্ষা পান। এ সুরক্ষা প্রাপ্তি ও আইনি যোগ্যতা এড়িয়ে প্রকল্প ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ায়। জিসিডিএ বলছে, এসআইএফসিকে প্রতিবছর বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে—কোন বিনিয়োগ এসেছে, কী সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং এর পেছনে যুক্তি কী ছিল।

‘বড় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এসআইএফসির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা পরীক্ষিত নয়’, বলছে প্রতিবেদন।

বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসন

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারব্যবস্থা বড় বাধা। দেশে ২ মিলিয়নের (২০ লাখ) বেশি মামলার জট আছে। ২০২৩ সালে শুধু সুপ্রিম কোর্টেই অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা ৭ শতাংশ বেড়েছে।

গত ১২ মাসে পাকিস্তান দুটি সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করেছে। এগুলো নিয়ে আইনজীবীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এগুলো ‘সংবিধানিক আত্মসমর্পণ’। কারণ, এতে সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করে একটি সমান্তরাল ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিচারপতি নিয়োগ–বদলির নিয়ম পরিবর্তন করে নির্বাহী বিভাগকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকার বলছে, এসব পরিবর্তন বিচারব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করবে।

দুর্নীতি তদন্তের প্রধান দুই সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)’ ও ‘ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ)’ নিয়েও প্রশ্ন আছে।

জিসিডিএ বলছে, ২০২৪ সালে একটি সরকারি টাস্কফোর্স দেখেছে, এনএবি কখনো কখনো ক্ষমতার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করে। এতে মানুষের আস্থা কমে, আমলাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়া ধীর হয়ে যায়।

যদিও এনএবি বলেছে, তারা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪–এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন রুপি (১৭ বিলিয়ন ডলার) উদ্ধার করেছে। কিন্তু আইএমএফ বলছে, দোষী সাব্যস্ত করার হার এখনো কম।

‘এনএবির নিয়োগ–প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন দরকার; যেন সংস্থাটি স্বাধীন হয়, রাজনৈতিক প্রতিশোধের বদলে নিয়মভিত্তিক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত হয়’, বলছে প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনটা কি দরকার ছিল

আইএমএফের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে তা ব্যাপক প্রভাব ফেলবে—এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত নেই। কিন্তু তাঁদের মতে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশীয় গবেষকেরা বহু বছর ধরে একই ধরনের সুপারিশ করে আসছেন। সরকার তাতে খুব কমই গা লাগিয়েছে।

ইসলামাবাদের ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এসডিপিআই)’ এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাজিদ আমিন জাভেদ বলেন, পাকিস্তান যেহেতু আইএমএফের কর্মসূচির অধীনে আছে, তাই এবার সরকার হয়তো প্রতিবেদনের কথা বেশি গুরুত্ব দেবে।

সাজিদ আমিন বলেন, আইএমএফ আরও বলতে পারত, কেন অতীতে একই ধরনের সুপারিশ ফল দেয়নি। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত দেখানো উচিত ছিল, বারবার ব্যর্থতার কারণ কী।’

সাজিদ আমিন প্রতিবেদনের সেই অংশকে স্বাগত জানান; যেখানে দুর্নীতির আর্থিক ক্ষতি পরিমাপ করা হয়েছে। এতে নীতিনির্ধারকেরা তৎপর হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি ও সুশাসন একে–অপরের সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি সুশাসন দুর্বল করে, দুর্বল সুশাসন আবার দুর্নীতি বাড়ায়।’

আলী হাসনাইন আরও সংশয়ী। তিনি বলেন, আইএমএফের নিজেরই অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা আছে। তাহলে পাকিস্তান সরকারের অনুরোধ না পাওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করল কেন?

আরও পড়ুন

সরকার কী করতে পারে

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতি বহুদিন ধরে এমন সব গোষ্ঠীর হাতে; যারা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত এবং ভূমি, ঋণ, শুল্কছাড় ও নিয়মনীতিতে বিশেষ সুবিধা পায়। আইএমএফ নতুন কিছু বলেনি।

হাসনাইন বলেন, ‘বাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি নীতিতে এলিটদের দখল এবং দুর্নীতি প্রকৃতিগতভাবে রাজনৈতিক বিষয়। ব্যাপক সংস্কার ছাড়া এগুলো দূর হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বড় পরিসরে রাজনৈতিক পরিবর্তন ছাড়া সংস্কার টিকবে না। এলিট দখল তখনই দুর্বল হয়, যখন রাজনৈতিক প্রণোদনা বদলায়।’

জাভেদ বলেন, যাঁরা দুর্নীতি দমন ও সুশাসন–সংস্কারের নীতি তৈরি করেন, তাঁরাই অনেক সময় সেই এলিট গোষ্ঠীর অংশ। এতে ‘নীতিগত দখল’ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন

‘নীতি তৈরির জায়গায় এলিটদের দখলই সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতিবেদনের সুপারিশ দেখাচ্ছে, বর্তমান ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে বেশি অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি দরকার আমাদের’, বলেন জাভেদ।

হাসনাইন বলেন, ‘সবচেয়ে জরুরি সংস্কারের বিষয় হলো, একটি একীভূত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা তৈরি করা; যা প্রধানমন্ত্রী নিজে নেতৃত্ব দেবেন।’ তিনি বলেন, পাকিস্তানে কমিটি, কাউন্সিল, টাস্কফোর্স ও মন্ত্রণালয়ের জট। এগুলোতে সমন্বয় নেই, জবাবদিহিও নেই।

‘সরকারের উচিত, সব ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কাঠামো এক প্ল্যাটফর্মে আনা, অগ্রাধিকার ঠিক করা, সময় বেঁধে দেওয়া এবং পরিমাপযোগ্য ফলাফল বের করে আনা। আরও দরকার অগ্রগতি মাসে মাসে প্রকাশ করা এবং তা স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করা’, বলেন হাসনাইন।

সবশেষ, জাভেদ বলেন, ‘যদি স্বচ্ছ, কার্যকর অর্থনীতি চাই; তবে আমাদের পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনা ছাড়া উপায় নেই।’

আরও পড়ুন