হামলাকারীদের একজন রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন, তাঁর সম্পর্কে কী বলছেন নিয়োগকর্তা
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে হামলাকারী দুই বন্দুকধারী সম্পর্কে বাবা-ছেলে। হামলায় তাঁরা বৈধভাবে কেনা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মোট ছয়টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হামলায় জড়িত ২৪ বছর বয়সী নাভিদ আকরামকে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর ৫০ বছর বয়সী বাবা সাজিদ আকরাম ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড বাবা–ছেলের নাম প্রকাশ করেছে। তবে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো হামলাকারীদের নাম জানায়নি। আর কোন দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হয়েছেন, সে সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ইহুদিদের হানুক্কাহ উৎসব চলাকালে ওই দুই বন্দুকধারী বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে হামলা চালান। এতে ১৫ জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন।
পুলিশ বলেছে, সাজিদ আকরামের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তাঁর কাছে নিবন্ধিত ছয়টি অস্ত্র ছিল। পুলিশ সব কটি অস্ত্রই উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে রাইফেল, শটগানসহ চারটি অস্ত্র ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। বাকি দুটি সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমের ক্যাম্পসি এলাকায় একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে জব্দ করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ জানান, নাভিদ আকরাম রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি অস্ট্রেলীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এএসআইও) নজরদারিতে এসেছিলেন। কিছু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে তাঁর ওপর ছয় মাস ধরে নজর রাখা হয়।
এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তের অংশ হিসেবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি ইউনিটের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতায় জড়িত থাকার বা হুমকির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ কমিশনার ম্যাল লেনিয়ন বলেন, সিডনির পশ্চিমে বনিরিগের অন্য একটি বাড়িতে বসবাস করতেন সাজিদ ও নাভিদ আকরাম। গতকাল রাতে সেখানেও অভিযান চালানো হয়।
ম্যাল লেনিয়ন আরও বলেন, ওই দুই ব্যক্তি গতকাল পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, সাজিদ আকরামের কাছে এক দশক ধরে অস্ত্রের লাইসেন্স আছে।
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্রিস মিন্স বলেন, এটা প্রায় নিশ্চিত, বন্দুক আইন পরিবর্তন করা হবে। কীভাবে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে এমন সন্ত্রাসী হামলা ঘটানো সম্ভব হলো, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
যদিও পুলিশ দ্য গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়াকে হামলাকারীদের নাম নিশ্চিত করেনি। তবে তাঁদের বয়স, বাসস্থান ও সাজিদ আকরামের অস্ত্রের লাইসেন্স–সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
হামলার আগে নাভিদ আকরাম রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর নিয়োগকর্তা জানিয়েছেন, ছয় বছর আগে তিনি নাভিদকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজে নিয়েছিলেন। নাভিদ ছিলেন পরিশ্রমী। তিনি কখনো ছুটি নিতেন না।
কয়েক মাস আগে নাভিদ জানিয়েছেন, কুস্তি লড়তে গিয়ে তাঁর কবজি ভেঙে গেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত তিনি কাজ করতে পারবেন না। তিনি তাঁর সব বেতন-ভাতা, চুক্তিভিত্তিক সব পাওনা এবং বার্ষিক ছুটি দেওয়ার দাবি জানান। সাধারণত কর্মীরা বছর শেষেই এসব চান। আর এ কারণেই, ‘আমি ভাবতে বাধ্য হয়েছি যে তিনি এত অর্থ দিয়ে করবেনটা কী।’
নাম গোপন রাখার শর্তে ওই নিয়োগকর্তা আরও বলেন, নাভিদ ছিলেন খুব শান্ত স্বভাবের। রাজমিস্ত্রির কাজে সাধারণত সবাই দল বেঁধে কাজ করেন, কাজের ফাঁকে অনেক কথাবার্তা হয়। কিন্তু নাভিদ কাজের বাইরে অন্যদের সঙ্গে মিশতেন না। দুপুরের খাবারও তিনি একাই খেতেন।
নিয়োগকর্তা আরও জানান, তিনি শুনেছিলেন, নাভিদের বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছিল এবং তিনি বাবার সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
নাভিদ চাকরি হারিয়েছিলেন—এমন দাবি তিনি অস্বীকার করেন। তাঁর ভাষায়, কবজিতে চোট থাকলেও তিনি নাভিদকে কাজে ফেরাতে চেয়েছিলেন।
নিয়োগকর্তা বলেন, ‘তিনি কাজের বাইরে কিছুটা বক্সিং করতেন। চিকিৎসক নাকি তাঁকে কয়েক মাস বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবেন কি না। কারণ, তিনি একজন ভালো কর্মী ছিলেন, আমি তাঁকে হারাতে চাইনি।’
বনিরিগ এলাকায় নাভিদ ও সাজিদের বসতবাড়ির সামনে সোমবার সকালেও পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখা যায়। বাড়িটি নীল ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।