কিয়েভে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি রুশ বাহিনীর

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে বিস্ফোরণ। গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে।
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দাবি করেছে রাশিয়া। আজ মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, তাদের হাইপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে গত রাতে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের সেনা ও অস্ত্র সংরক্ষণাগার লক্ষ্য করেও ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও এ হামলাকে ‘তীব্র’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ১৮টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৬টি কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী কিয়েভকে লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার পর ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইউক্রেনের দাবি, তারা ১৮টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ছয়টি কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র।

এ হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া ইউক্রেনের নতুন প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে রুশ বাহিনীর কৌশলগত হামলার চেষ্টা বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্যাট্রিয়ট পেয়েছে কিয়েভ। এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে রুশ বাহিনী।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর গতকালের হামলাকে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা বলা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র দিয়ে শিগগিরই ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সম্প্রতি ইউরোপ সফর করে আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার অনুরোধ করেছে। এসব অস্ত্র পাওয়ার আগেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।

কিয়েভের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি রুশ রকেট ও ড্রোনের মধ্যে ১৮টিই ধ্বংস করেছে। শহরের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে তীব্র এবং ব্যাপক আক্রমণ করা হয়।
ভ্যালেরি জালুঝনি, ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ

এর আগে গত মার্চ মাসে ইউক্রেনে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল রুশ বাহিনী। কিনঝালের গতি শব্দের গতির ১০ গুণ। শব্দের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩৩২ মিটার। অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতি সেকেন্ডে সোয়া তিন কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের যেকোনো স্থানে নির্ভুলভাবে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম বলে দাবি করে আসছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেনকে সম্প্রতি অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া জেলেনস্কি সরকার বার্লিনের কাছ থেকেও একটি প্যাট্রিয়ট পেয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের ধরনের ওপর এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। প্যাট্রিয়টের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৩০ লাখ ডলার। যদি ইউক্রেনের এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রুশ বাহিনীর শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়, তবে তা মস্কোর জন্য হতাশার।

গতকাল রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে কিয়েভে বিমান হামলার জরুরি সাইরেন বেজে ওঠে। এ সময় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময় কিয়েভের আশপাশে ব্যাপক বিস্ফোরণ শোনা যায়। ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, কিয়েভের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি রুশ রকেট ও ড্রোনের মধ্যে ১৮টিই ধ্বংস করেছে। শহরের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে তীব্র এবং ব্যাপক আক্রমণ করা হয়। আকাশ, সমুদ্র ও স্থলভাগ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এ সময় ক্রেমলিনের ছয়টি দূরপাল্লার কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া নয়টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ছয়টি কামিকাজে ড্রোন ও তিনটি চালকবিহীন আকাশযান ধ্বংস করা হয়েছে।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, নির্ঘুম রাতের পর অনেকে বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্র চলে আসেন। তিনি বলেন, এ হামলায় তিনজন হতাহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় খারকিভ ও দোনেৎস্কে ছয়জন নিহত হয়েছেন। ওই দুই অঞ্চলের গর্ভনররা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর স্থলবাহিনীর কমান্ডার বলেন, বাখমুতের চারপাশে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।

শস্যচুক্তি ঘিরে অনিশ্চয়তা

রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে তাদের কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তির মেয়াদ ১৮ মে শেষ হচ্ছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘চুক্তির অনেক বিষয়ে এখনো কোনো উত্তর মেলেনি। তাই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের ভেবে দেখতে হবে।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন