বলসোনারোর সমর্থকদের দাঙ্গার বিচার শুরু
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সমর্থকদের দাঙ্গা সহিংসতার বিচার শুরু হয়েছে। গত বুধবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টে ওই ঘটনায় চারজনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।
আদালতের ১১ জন বিচারপতি একজন একজন করে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় চূড়ান্ত হবে। বিচারকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আলেকজান্ডার ডি মোরেস ইতিমধ্যে ৫১ বছর বয়সী অভিযুক্ত অ্যাসিও পেরেইরাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তিনি দেশটির সিনেট ভবনে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন তাঁর গায়ে থাকা টি–শার্টে লেখা ছিল ‘সামরিক হস্তক্ষেপ’।
দ্বিতীয় আরেক বিচারপতি মাত্র আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এরপর মামলাটির শুনানির জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার দিন রাখা হয়েছিল। এখনো নয়জন বিচারপতির রায় দেওয়া বাকি রয়েছে।
মোরেস বলেন, দাঙ্গাবাজেরা প্রেসিডেন্ট ভবন ও কংগ্রেস ভবনেও তাণ্ডব চালিয়েছেন। তাঁরা প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার ‘গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সহিংসভাবে উৎখাত করতে ও সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করতে অপরাধমূলক আক্রমণ’ চালিয়েছেন।
গত অক্টোবরের নির্বাচনে বামপন্থী লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হন ডানপন্থী বলসোনারো। তবে তাঁর উগ্র ডানপন্থী সমর্থকেরা এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের অভিযোগ, কারচুপির মাধ্যমে বলসোনারোকে হারানো হয়েছে। এ জন্য তাঁরা সামরিক বাহিনীর ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ জানুয়ারি ব্রাজিলের পার্লামেন্ট ভবন কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনে তাণ্ডব চালান বলসোনারোর সমর্থকেরা।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া চার আসামির বয়স ২৪ থেকে ৫২ বছর। তাঁদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলার ষড়যন্ত্র, আইনের শাসনের বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহ, অভ্যুত্থানের চেষ্টাসহ নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এই দাঙ্গার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের মোট ২৩টি মামলার শুনানি গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের।
অভিযুক্ত চারজনের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, তাঁরা মনে করেছিলেন যে বিক্ষোভটি হবে শান্তিপূর্ণ। তবে আইনজীবীরা বলছেন, প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে অভ্যুত্থানে উসকানি দিয়েছেন। আইনজীবী কার্লোস ফ্রেডেরিকো সান্তোস বলেন, অভিযুক্ত অ্যাসিও পেরেইরার বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে। মুঠোফোনে তাঁর নিজের ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দাঙ্গার সময় এই তাণ্ডবকে তিনি সিনেট চেম্বারের সামনে হাজির হয়ে উদ্যাপন করছেন। গণতন্ত্রবিরোধীদের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল অকাট্য।
তবে পেরেইরার আইনজীবীরা বলেন, তাঁদের মক্কেল নিরস্ত্র ছিলেন এবং কোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। আসামিপক্ষের আইনজীবী সেবাস্তিয়াও কোয়েলহো দা সিলভা এই বিচারকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
দাঙ্গার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে ২৩২টি মামলা থাকলেও এখনো এক হাজারের বেশি মামলার তদন্ত চলছে। এ বিক্ষোভের পেছনে কারা অর্থায়ন করেছে এবং এর পেছনে পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের কোনো ভূমিকা আছে কি না, তা–ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দাঙ্গার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য গত মাসে ব্রাসিলিয়ার সাত পুলিশ কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দাঙ্গার ঘটনার সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বলসোনারো কোনো ধরনের উসকানি দিয়েছেন কি না, তারও তদন্ত হচ্ছে। তবে ৬৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। গত সোমবার তিনি একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কিছু লোক আমাকে এ ঘটনায় জড়াতে বেশ উঠেপড়ে লেগেছে।’
বলসোনারোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের তদন্তও চলছে। জুনে বলসোনারোকে আট বছরের জন্য নির্বাচনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন দেশটির সুপ্রিম ইলেকটোরাল কোর্ট।