যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে যাবে, নির্ধারণে ভোট চলছে

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির হাতেই থাকবে না কি বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে যাবে– সে প্রশ্নের মীমাংসায় মঙ্গলবার ভোট দিচ্ছেন দেশটির নাগরিকেরা। মধ্যবর্তী এই নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে সেভাবে ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অপরদিকে বিরোধী শিবির রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পও কয়েক দিন ধরে নির্বাচনে দলের জয় পেতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে এই নির্বাচনের পুরো ফলাফল পেতে আরও কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করা লাগতে পারে বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা ধারণা করছেন।

প্রতি চার বছর অন্তর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনের দুই বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের প্রতিটিতে এবং সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৫টি আসনে ভোট হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৬টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদেও নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে লড়াই হবে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প

নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে (প্রতিনিধি পরিষদ) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে রিপাবলিকানদের বাড়তি পাঁচটি আসনে জয়ী হতে হবে। আর সিনেটে একটি আসন বেশি পেলেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। দল নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং বিভিন্ন জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে হটিয়ে রিপাবলিকানদের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার খুব বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। অপর দিকে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে তীব্র লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পেনসিলভেনিয়ার মতো কিছু অঙ্গরাজ্য থেকে ইতিমধ্যে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সেখানকার ব্যালট গুনতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে ভোটের ফলাফল না জেনেই আমেরিকানদের নির্বাচনের রাতে ঘুমাতে যেতে হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মিশিগান অঙ্গরাজ্য থেকে গভর্নর পদে লড়ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী টুডর ডিক্সন। মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন সন্তানদের নিয়ে ভোট দিতে যান তিনি
ছবি: রয়টার্স

দল নিরপেক্ষ সাময়িকী ইনসাইড ইলেকশনের প্রকাশক নাথান গঞ্জালেস বলেছেন, ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল জানতে নির্বাচনের দিনের কথা ভুলে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের সপ্তাহ নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে যাওয়া ব্যালট পেপারের খাম নির্বাচনের দিনের আগপর্যন্ত খোলার সুযোগ ছিল না। ভোটের দিনের আগপর্যন্ত সেখানে রিপাবলিকানদের এগিয়ে থাকার ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু ডাকযোগে পাঠানো ডেমোক্র্যাটদের ব্যালট গণনা শেষে এ চিত্র বদলে যেতে পারে।

বেশ কয়েকটি সংস্থা মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। এডিসন রিসার্চ সেগুলোর একটি। সংস্থাটি শতাধিক কেন্দ্রের খবরাখবর রাখছে এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে খবর পৌঁছে দিচ্ছে। ভোট শেষ হওয়ার পর ব্যালট গণনা পর্যন্ত তারা বিভিন্ন বিষয়ে চোখ রাখবে। প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা জো লেনস্কি বলেছেন, ‘লাল-নীল (রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট) যাই হোক না কেন, আপনার জানতে হবে কোন অঙ্গরাজ্যে কী পরিমাণ ভোট দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের এলাকাগুলোতে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট গণনা শেষ হতে পারে। প্রথম দিকে ভার্জিনিয়ার সপ্তম কংগ্রেসনাল জেলা বা সিনেটের নর্থ ক্যারোলিনা আসনে রিপাবলিকানদের সফলতার খবর আসতে পারে।

তবে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে যাবে তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পেনসিলভেনিয়া, অ্যারিজোনা ও জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে কারা জয়ী হবে, তা জানতে অনেক সময় লাগবে। চূড়ান্ত ফলাফল পেতে হয়তো বা কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে।

আরও পড়ুন