মইসির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

জোভেনেল মইসি ও মার্টিন মইসি।
ছবি : এএফপি

হাইতির নিহত প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জিন লগুয়েল সিভিলকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। মইসি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের কাছে দেলমাসের একটি নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে।

৭ জুলাই রাতে নিজ বাসভবনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জোভেনেল মইসি। এ সময় আহত হন স্ত্রী মার্টিন মইসি। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত শনিবার তিনি দেশে ফেরেন।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জিন লগুয়েল সিভিল ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেদিন মাঝরাতে সশস্ত্র হামলাকারীরা প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা রক্ষীদের কোনো বাধা ছাড়াই মইসিকে হত্যা করে।

হাইতি পুলিশের মুখপাত্র মেরি মিশেল ভেরিয়ার এএফপিকে বলেন, গতকাল সোমবার সিভিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মইসি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিভিলের আইনজীবী রেনল্ড জর্জেস তাঁর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে এএফপিকে বলেন, তাঁর মক্কেলকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় সিভিলসহ এ নিয়ে ১২ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে হাইতির পুলিশ।

আরও পড়ুন

পোর্ট-অ-প্রিন্সের কমিশনার বেড-ফোর্ড ক্লড ইতিমধ্যে চার পুলিশ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই চার পুলিশ কর্মকর্তা মইসির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

গতকাল সোমবার দেশটির উচ্চ আদালতের বরখাস্ত হওয়ার বিচারক ওয়েনডেলের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছে পুলিশ। মইসি ক্ষমতায় থাকাকালে এই বিচারককে চাকরিচ্যুত করেছিলেন।

মইসি হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার হাইতির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যারিয়েল হেনরি। দায়িত্ব পাওয়ার পর নিহত প্রেসিডেন্ট মইসি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি। হেনরি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন

জোভেনেল মইসি ২০১৭ সাল থেকে হাইতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর পদত্যাগ দাবি করে দেশটিতে একাধিকবার বিক্ষোভ হয়। জোভেনেল মইসি নিহত হওয়ায় হাইতির সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ।

মইসি হত্যাকাণ্ডে ২৮ জন ভাড়াটে ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে হাইতির পুলিশ। তাদের মধ্যে ২৬ জন কলম্বিয়ার। আর ২ জন হাইতি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।

এদিকে মইসি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিরাপত্তার পাশাপাশি তদন্তসংক্রান্ত কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে হাইতি। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যার তদন্তে এফবিআইয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাইতিতে পাঠানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র হাইতিতে সেনা পাঠাবে কি না, তা নিশ্চিত করেননি তিনি। এদিকে জাতিসংঘের কাছেও সেনা সহায়তা চেয়েছে হাইতি।

হাইতির প্রেসিডেন্ট হত্যার পর অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও আইনসভা নির্বাচন সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্লদে জোসেফ বলেছেন, তিনি এখনো দায়িত্বে বহাল আছেন।