দীর্ঘদিন ধরে ছেলে মাদকাসক্ত। নিরাময়কেন্দ্রে পাঠিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শেষে বাবা এক কবিরাজের কাছে ছেলের চিকিৎসার জন্য যান। কবিরাজ বাবাকে জানিয়ে দেন তাঁর চিকিৎসার ধরন আলাদা। পানিপড়া পান করলে তাঁর ছেলের মাদকাসক্তি দূর হয়ে যাবে। তবে পানিপড়া ছেলেকে নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের পান করতে হবে। এই চিকিৎসা নিতে গিয়েই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই ছেলের বাবা-মাসহ চারজন।
এ ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোড়াকান্দা মহল্লায়। মাদকাসক্ত ওই ছেলেটি হচ্ছে ওই মহল্লার ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে দীপু (১৭)। পানিপড়া পান করে দীপুর বাবা ছিদ্দিকুর রহমান (৪৬), মা রেখা বেগম (৪০), ভাই তপু মিয়া (২২) ও তপুর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২০) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে কবিরাজ পলাতক রয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ছিদ্দিকুর পেশায় আলু ব্যবসায়ী। তাঁর ছেলে দীপু চার বছর আগে ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবারের সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ছিদ্দিক ঢাকার এক কবিরাজের কাছে যান। দীপুকে সুস্থ করে তোলার জন্য গত রোববার থেকে কবিরাজ ছিদ্দিকের ঘরে অবস্থান করতে থাকেন। কবিরাজের চিকিৎসার নিয়মানুযায়ী গত মঙ্গলবার রাতে বাবা, মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীকে এক ঘরে রেখে দীপুকে বের করে দেওয়া হয়। কবিরাজ ওই কক্ষেই অবস্থান করেন। গতকাল সকালে পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরে গিয়ে দেখতে পান সবাই অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। ডাকাডাকির পর কারও কোনো সাড়া না পেয়ে প্রথমে তাঁদের স্থানীয় আলশেফা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাটি জানতে পেরে আলশেফা মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে কথা হয় দীপুর দাদি ফাইজুন্নেছা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কবিরাজের বয়স ৫০ বছরের বেশি হবে। তাঁর নামটিও তাঁদের জানা নেই। দীপুকে নেশার জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে যখন যে যা করতে বলতেন, ছিদ্দিক তা-ই করার চেষ্টা করতেন। পীর গা ঢাকা দিলেও ঘরের জিনিসপত্র অক্ষত ছিল। ওই সেন্টারের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম বলেন, কী ওষুধ সেবন করিয়ে অচেতন করা হয়েছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। ১০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কারও জ্ঞান ফিরে না আসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রোগীদের দেখতে এসেছিলেন ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দ্বিন ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রোগ সারাতে রোগীর চিকিৎসা না দিয়ে পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়ার অদ্ভুত পদ্ধতির কথা আগে শুনিনি। কুসংস্কার ও অসেচনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।’