রেহমান সোবহান মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এক ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ সেই অর্থনৈতিক সমতা ও মুক্তির বাংলাদেশ নয়, যা তাঁর পিতা, জাতির পিতা চেয়েছিলেন।

রেহমান সোবহানের প্রস্তাবিত তিন খণ্ডের জীবনীর প্রথম খণ্ড আনট্রাঙ্কুইল রিকালেকশনস: দ্য ইয়ারস অব ফুলফিলমেন্ট (উতল রোমন্থন: পূর্ণতার সেই বছরগুলো)। বইটি একই সঙ্গে স্মৃতিকথা, আত্মজীবনী এবং ইতিহাস। তিনি এই বইয়ে তাঁর জীবনের নানা পর্যায় মেলে ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় পর্যন্ত নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইতিহাসের নানা চরিত্র উঠে এসেছে সময়ের এক নির্মোহ দলিল হিসেবে। তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকা ত্যাগ করে গোপনে আগরতলার দিকে পাড়ি জমান। পরবর্তী সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নির্দেশে ভারত থেকে পশ্চিমা বিশ্বের রাজধানীগুলোতে বাংলাদেশের জন্য ভ্রাম্যমাণ কূটনীতিক হিসেবে স্বল্প সম্বলে পাড়ি জমান। এই বইটি শেষ হয়েছিল যখন তিনি ৯ মাস বিদেশে কাটিয়ে কলকাতা থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ডাকোটা বিমানে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বরে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই তিন খণ্ডের জীবনীর দ্বিতীয় খণ্ডে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী বাংলাদেশ। আনট্রাঙ্কুইল রিকালেকশনস: নেশন বিল্ডিং ইন পোস্ট-লিবারেশন বাংলাদেশ (অশান্ত দিনগুলো: মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী বাংলাদেশে দেশ গঠন) নামের এই বইটিতে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের অক্টোবরের সময়কালের ঘটনাবহুল সময়কে তুলে ধরা হয়েছে।
রেহমান সোবহান একজন প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অর্থনীতিবিদ। তবে একই সঙ্গে তিনি সমাজের সুবিধাভোগী অংশ থেকে উঠে আসা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের পাশে সব সময় ছিলেন ও আছেন। তিনি একজন চিত্তাকর্ষক লেখকও। এমন গুণাবলি বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদের মধ্যে লক্ষ করা যায় না।
‘অশান্ত দিনগুলো: মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী বাংলাদেশে দেশ গঠন’ বইটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে কেবল সমৃদ্ধ বিষয়বস্তুর জন্য নয়, বাংলাদেশের গঠনমূলক বছরগুলোর ঘটনাপ্রবাহকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে উপস্থাপন করার পাশাপাশি তিনি সাবলীল সাহিত্যরীতিতেও এই আত্মস্মৃতি রচনা করেছেন। যেমন একটি উপধারার শিরোনাম উল্লেখ্য: ‘হার্ট থেকে হার্ট’ (পৃষ্ঠা ২২৬)। সেখানে লেখক ব্রিটিশ বৈদেশিক উন্নয়নমন্ত্রী জুডিথ হার্টের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে কূটনৈতিক মিশনে এমপি থাকাকালীন হার্টের সঙ্গে রেহমান সোবহান প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেছিলেন। সে সময়ে তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার জন্য এবং ইয়াহিয়া খানের হত্যাকারী সরকারকে সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করার প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
বইটিতে বেশ কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যার কয়েকটি সংবেদনশীলও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর ভূমিকার প্রমাণ হিসেবে কিছু রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপনীয় তথ্য একজন মার্কিন ইতিহাসবিদের বরাত দিয়ে প্রকাশ করেছেন। রেহমান সোবহান স্ট্যানলি ওলপার্টের সু-গবেষিত ভুট্টোর জীবনী উদ্ধৃত করে আওয়ামী লীগ সরকারকে অস্থিতিশীল করতে ভুট্টোর ভূমিকার উদাহরণ দিয়েছেন। ইতিহাসবেত্তা স্ট্যানলি ওলপার্ট ভুট্টোর জীবনী নিয়ে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘পাকিস্তানের জুলফি ভুট্টো: হিজ লাইফ অ্যান্ড টাইমস’ (১৯৯৩) লিখতে গিয়ে ইসলামাবাদে ভুট্টোর ব্যক্তিগত কাগজপত্রের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হকের, ভুট্টোকে লেখা ‘আমার প্রিয় প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামের একটি চিঠি পেয়েছিলেন। ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৪ সালে লিখিত এই চিঠিটি ভুট্টোর কাছে পৌঁছেছিল ১৬ জানুয়ারি, ১৯৭৫ (ওলপার্ট ১৯৯৩, পাদটীকা নং ৩, পৃষ্ঠা ৩১৭) যখন ভুট্টো এই ‘সৎ’ ব্যক্তির পক্ষে ‘সহায়তা’ প্রেরণ করেছিলেন, যাকে তিনি মোটামুটি কার্যকর বলে চিহ্নিত করেছিলেন। রেহমান সোবহান ভুট্টোর ইসলামিক সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধারার কথা উল্লেখ করেননি, যা ওলপার্টের গ্রন্থে রয়েছে (ওলপার্ট ১৯৯৩, পাদটীকা নং ৪, পৃষ্ঠা ৩১৭)। তবে রেহমান সোবহান চরম বামপন্থী (মাওবাদী) এবং ডানপন্থী ইসলামপন্থীদের—উভয় পরাজিত শক্তির বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার ভূমিকার সঠিক বিশ্লেষণ করেছেন।
# বইটিতে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের অক্টোবরের সময়কালের ঘটনাবহুল সময়কে তুলে ধরা হয়েছে।# বঙ্গবন্ধুসহ সরকারের কেউ কেউ বাংলাদেশকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।# কেউ কেউ আদর্শিকভাবে একটি পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার দিকে ঝুঁকছিলেন।
নবজাতক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা কমিশন কেবল সরকারের একটি গতানুগতিক প্রতিষ্ঠান ছিল না, এটি পুনর্বাসন, পুনর্নির্মাণ এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের কৌশল নির্ধারণের জন্য দায়বদ্ধ ছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশের বেশির ভাগ মানুষই ছিল দরিদ্র। আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপুল এবং সম্পদ ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল। সবার প্রত্যাশা ছিল অবাস্তবভাবে আকাশচুম্বী। একমাত্র আস্থার বিষয় ছিল পরিকল্পনা কমিশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গভীর অঙ্গীকার এবং তাঁদের প্রতি দেশটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ণ সমর্থন ও বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে বাছাই করা ছিল পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা। তাঁরা কেবল কেমব্রিজ, হার্ভার্ড ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আসা উচ্চমানের প্রতিভাবান অর্থনীতিবিদদের একটি নির্বাচিত দল ছিলেন না, তাঁরা আঞ্চলিক সাম্য, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক অধিকারের লড়াইয়ের সময় বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় স্বাধিকার আন্দোলনের যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। মুক্তিকামী এই চারজন হলেন নুরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান। তাঁরা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া তৈরি করতেও সহায়তা করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বিশ্বাসী ও সহযোগী হিসেবে তাঁরা কেবল টেকনোক্র্যাটই ছিলেন না, জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে অংশ নিয়ে তাঁরা মেধা ও কর্মবলে তাঁদের অবস্থান অর্জন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। যেমন মোশাররফ হোসেন মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং রেহমান সোবহান ছিলেন দেশটির একজন ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে রেহমান সোবহান পরিকল্পনা বোর্ড গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন, পরিকল্পনা কমিশনের বীজ তখনই স্থাপন করা হয়েছিল। মোশাররফ হোসেন বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের সরাসরি যাওয়া-আসার কারণে কমিশনের সদস্যরা কিছুটা বিশেষ অধিকার উপভোগ করেছিলেন এবং রেহমান সোবহান প্রায়শই তাঁর বিধিপ্রাপ্ত ভূমিকা ছাড়িয়ে যেতেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং গভীর দেশপ্রেমের উপলব্ধি অবিসংবাদিত ছিল।
রেহমান সোবহান একজন প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অর্থনীতিবিদ। তিনি সমাজের সুবিধাভোগী অংশ থেকে উঠে আসা সত্ত্বেও সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন ও আছেন। তিনি একজন চিত্তাকর্ষক লেখকও। এমন গুণাবলি বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই দিনগুলোতে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল এই যে বঙ্গবন্ধুসহ সরকারে কেউ কেউ বাংলাদেশকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, আবার অন্যরা কেউ কেউ আদর্শিকভাবে একটি পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার দিকে ঝুঁকছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন ও সুষম বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠাতা নেতার ও আওয়ামী লীগের একাংশের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ অনুবাদ করতে এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব নিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু সরকারের আরেকটি অংশ এবং আমলাতন্ত্রের মূলধারা খন্দকার মোশতাকের পথ অনুসরণ করে পশ্চিমাপন্থী পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। এই ধরনের টানাপোড়েনে সরকারকে দ্বিধাবিভক্ত করে তোলে এবং পরিকল্পনা কমিশনের কাজকে হতাশ করে তোলে। পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে হার্ভার্ড প্রশিক্ষিত অর্থনীতিবিদ আনিসুর রহমান ছিলেন, রেহমান সোবহানের কথায়, ‘আদর্শবাদী’। কারণ,সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ছিল দৃঢ়। হার্ভার্ডের আরেকজন অর্থনীতিবিদ ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের উপ-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। মোশারফ হোসেনকে ‘বাস্তববাদী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। রেহমান সোবহান নিজেকে একজন ‘সীমাহীন আশাবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন,যিনি পরে একজন অধৈর্য কর্মী হয়ে উঠেছিলেন।
সরকারের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব এবং আদর্শিক বিভাজনের শিকড় ছিল একই সঙ্গে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং সেই সময়কার বিশ্বের ভূরাজনৈতিক পরিবেশে প্রোথিত। জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের নেতৃত্বে থাকা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের জন্য কখনো চিন্তিত হতে হয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন সমাজতান্ত্রিক পন্থার প্রতি সহানুভূতিশীল। তদুপরি, মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের পর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক বলয়ের দেশগুলো অল্পবিস্তর সমর্থন দান এবং কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়। সে জন্য বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে সমাজতান্ত্রিক বলয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ১৯৭০ দশকের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাপী আদর্শিক বিভক্তি এবং ঠান্ডা যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সমাজতান্ত্রিক বলয়ে চলে যায়।
বইয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সব বৈধ রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের ও পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের অনুপস্থিতিতে কার্যত বাকশাল একদলীয় শাসনে পরিণত হয়। পরবর্তী দিনের আলোচনায়, বাকশাল অনেকটা সমালোচনার শিকার হয়েছে, যেখানে বিরোধীরা এটিকে স্বৈরাচারের পক্ষে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি থেকে আওয়ামী লীগের বিদায়ের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। সমালোচকেরা সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতকে প্রায়শই উপেক্ষা করে। একদিকে জাতীয় ঐক্যের অভাব, তার ওপর ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দেশে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রাজনৈতিক ব্যবস্থা যখন একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখনই বাকশাল গঠিত হয়। রেহমান সোবহানের আলোচনায় ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রবর্তিত বাকশাল বিধিমালা বাস্তবায়নের পক্ষে যুক্তি বা ন্যায়সঙ্গতা প্রদান করা হয়নি। তিনি এটিকে সামাজিক, প্রায় সমাজতান্ত্রিক-পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিসাবে দেখেন। এই পরিবর্তনের ফল পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। ১৯৭৫ সালের আগস্টে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিপথগামী এবং উচ্চাভিলাষী কিছু সেনা সদস্য সরকার পরিবর্তন করে।
১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে রেহমান সোবহান পরিকল্পনা কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে বাকশাল গঠনের ঠিক আগের দিনগুলোতে অভ্যন্তরীণ কী আলোচনা হয়েছিল, তা তিনি জানার সুযোগ পাননি। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য যে প্রেক্ষাপটগুলো ছিল, তা তিনি আলোচনা করেছেন এবং এই ব্যাপারে আরও বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও প্রমাণভিত্তিক গবেষণার আহ্বান করেন।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দিনগুলোতে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল এই যে বঙ্গবন্ধুসহ সরকারে কেউ কেউ বাংলাদেশকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। আবার অন্যদের কেউ কেউ আদর্শিকভাবে একটি পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার দিকে ঝুঁকছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন ও সুষম বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠাতা নেতার ও আওয়ামী লীগের একাংশের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ অনুবাদ করতে এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব নিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু সরকারের আরেকটি অংশ ও আমলাতন্ত্রের মূলধারা খন্দকার মোশতাকের পথ অনুসরণ করে পশ্চিমাপন্থী পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল।
রেহমান সোবহান সাহস করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মতো সংবেদনশীল বিষয়কে স্পর্শ করেছেন। তিনি সেই সময়ে বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাপকভাবে ভারতবিরোধী চিন্তার একটি গভীর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচার বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে, এ বিষয়ে তিনি একটি বৃহত্তর, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সরবরাহ করেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে অনেকেই বুঝতে ব্যর্থ হন যে প্রারম্ভিক গঠনমূলক বছরগুলোতে বাংলাদেশ কেবল যুদ্ধের ধাক্কা থেকে উদ্ধার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্নির্মাণের জন্য নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্যও বহির্বিশ্বের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমেরিকা, যে দেশটি বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতাকারী একটি পরাশক্তি, তাদের প্রভাবিত পশ্চিমা দাতাদের অনুপস্থিতিতে, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশকে প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছিল। এই সময় ভারত একটি দরিদ্র দেশ থাকা সত্ত্বেও এককভাবে সাহায্যদাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছিল। সে সময় চীন বা সৌদি আরব—কেউই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেনি। সেই সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের কোনো বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল না বললেই চলে। তাই বাণিজ্যর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রায় পূর্বনির্ধারিতভাবেই ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বিশিষ্ট সদস্যরা নির্ধারণ করেছিলেন যে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি শুধু বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞানবান নয়, বরং একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন কাউকে তাঁদের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রেরণ করা উচিত। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রধান সচিব ও প্রভাবশালী উপদেষ্টা পি. এন. হাকসরের কাছে অনুরোধ করেছিলেন এবং রাজি করিয়েছিলেন যেন দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক অর্জুন সেনগুপ্তকে ঢাকা মিশনে অর্থনৈতিক মন্ত্রী হিসেবে পাঠানো হয়, যাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কোনো বাধা ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারে। ভারত সরকারের ভেতরে তদবির করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বৃহত্তর প্রতিবেশীকে প্রভাবিত করার তেমন বেশি কোনো উদাহরণও নেই। এটি তাদের কাজের পরিধি ছাড়িয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ ছিল। পরে পরিকল্পনা কমিশন ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এবং আমলাতান্ত্রিক লাল টেপগুলোর জটিলতা এড়ানো ও সরাসরি নিয়মিত আলোচনার জন্য টেবিলের ওপারে তাদের মুখোমুখি বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করে।
একনিষ্ঠ নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শবাদী রেহমান সোবহান একজন অধৈর্য কর্মী ছিলেন। তাঁর স্মৃতিচারণায় একটি উদাহরণ রয়েছে যখন মাঠ পরিদর্শনকালে তিনি আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতা এবং আন্তমন্ত্রণালয়ের ঝগড়াঝুঁকিতে আটকে পড়া কতগুলো সমস্যার তাত্ক্ষণিক সমাধান দিয়েছিলেন। তাঁর ‘অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমিক’ (তাঁর নিজের ভাষায়) বা বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পছন্দ ছিল না। একটি ঘটনায়, রেহমান সোবহান কর্ণফুলী নদীর এক পাশে একটি চুনাপাথর উত্পাদন কারখানার বিক্রি না হওয়া বিপুল পরিমাণ চুনাপাথরের সন্ধান পেয়েছিলেন। অন্যদিকে তিনি সিলেটের ছাতক সিমেন্ট কারখানাটি চুনাপাথর সরবরাহের অভাবের কারণে অলস অবস্থায় পেয়েছিলেন। রেহমান সোবহান তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে কাগজপত্রগুলো সই করে, নদীর ওপারে চুনাপাথর জাহাজে করে নিতে আদেশ দিয়েছিলেন। এভাবে এক ঢিলে দুটি পাখি মারা হয়েছিল। তাঁর এখতিয়ারের বাইরে পদক্ষেপের জন্য তাঁকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রোষের শিকার হতে হয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন।
রেহমান সোবহানের আলোচনায় ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রবর্তিত বাকশাল বিধিমালা বাস্তবায়নের পক্ষে যুক্তি বা ন্যায়সংগততা প্রদান করা হয়নি। তিনি এটিকে সামাজিক, প্রায় সমাজতান্ত্রিক-পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিসেবে দেখেন। এই পরিবর্তনের ফল পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। ১৯৭৫ সালের আগস্টে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিপথগামী এবং উচ্চাভিলাষী কিছু সেনাসদস্য সরকার পরিবর্তন করে।
নানামুখী এই বই তাঁর পরিকল্পনা কমিশনের দৈনন্দিন বিবরণ ছাড়াও তাঁরা যেসব কাজ গ্রহণ করেছিলেন, তার সফলতা এবং কখনো কখনো ব্যর্থতার কথা অকপটে তুলে ধরেছেন। এই সমৃদ্ধ বইটি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় পাঠযোগ্য বই। প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা বইটি অমূল্য বলে মনে করতে পারেন। তবে বইটি শুধু এক আদর্শবাদী পরিকল্পনাকারীর স্মৃতিচারণার চেয়েও বেশি। একদিকে দেশপ্রেমের দ্বারা পরিচালিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে রিয়েলপলিটিক এবং আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার পথ রোধ করা সংঘাতের বর্ণনা। আদর্শবাদ যেমন ব্যাপকভাবে বিস্তারিত ছিল না, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে দেশপ্রেমও অনেকের মধ্যে অনেক সময় ছিল অনুপস্থিত। কেউ কেউ যখন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরকে একটি দীর্ঘ-টানা সংগ্রামের চূড়ান্ত হিসেবে দেখেছিল এবং স্বাধীনতার ফলগুলো উপভোগ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল, রেহমান সোবহানের মতো অন্যরা এই দিনটিকে একটি সামাজিক বিচার ও সমতাবাদী সমাজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘ এবং কঠোর যাত্রার সূচনা হিসেবে দেখেছিলেন। এ ক্ষেত্রে রেহমান সোবহান একা ছিলেন না। তিনি প্রকৌশলী রফিকউদ্দিন আহমেদের মতো করপোরেশন প্রধান বা এম সায়েদুজ্জামানের মতো নিবেদিতপ্রাণ সরকারি কর্মচারীদের দেশপ্রেম এবং তাঁদের দায়িত্বের প্রতি উত্সর্গের প্রশংসা করেন, যাঁদের নাম কখনো সংবাদপত্রগুলোতে বা টেলিভিশনে প্রচারিত হয়নি।
বইটি গৌরব, সাফল্যের আনন্দের পাশাপাশি ব্যর্থতার বেদনাও প্রকাশ করেছে। এটি ছিল তাঁর নিজের জ্ঞান অর্জনের একটি অধ্যয়। তিনি সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে বাংলাদেশের সহায়তা ও ঋণের আলোচনার জন্য ভ্রমণ করেছিলেন। সমাজতান্ত্রিক নীতির একজন সংবেদনশীল অনুসারী হিসেবে রেহমান সোবহান তখন দেখেছিলেন যে ব্যবসা এবং স্বার্থের আলোচনাতে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর আমলারা অন্য যেকোনো দেশের আমলাদের মতোই, বরং বেশি নির্মোহ ও অসহনাভূতিশীল। রেহমান সোবহানের মতে, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর চেয়ে হার্ভার্ড অর্থনীতি বিভাগে বেশি সমাজতান্ত্রিকদের দেখা যায়। এটি ছিল বিজয় ও ব্যর্থতার গল্প। রেহমান সোবহান এবং তাঁর ছোট ভাই মেধাবী কূটনীতিক ফারুক সোবহান বেশ কিছু সমাজতান্ত্রিক দেশে কূটনৈতিক মিশনে গিয়েছিলেন এবং সেসব দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু ছাড় নিয়েছিলেন। এগুলো কোনো ছোট বিজয় ছিল না। এসব উদাহরণে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সততা, সক্ষম ব্যক্তিদের ভূমিকা এবং নিষ্ঠার পরিচয় মেলে। একবার রাশিয়ায় এক সরকারি ভ্রমণে, টারমাকে অপেক্ষমাণ অতিথি গ্রহণের দলটি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। তারা আশা করেছিল, তাদের অতিথি বিমান থেকে প্রথমে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু রেহমান সোবহান বাংলাদেশ সরকারের ভ্রমণ নীতি অনুসরণ করে ইকোনমি ক্লাসে যাওয়ায় শেষের দিকে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে অবতরণ করেছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবার ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের হত্যার ঘটনা ঘটে, পরিবর্তন আসে শাসন পরিচালনায়। রেহমান সোবহান এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড এবং যে ঘটনাগুলো এই জাতীয় ট্র্যাজেডির দিকে নিয়েছিল, তার ওপর কিছুটা আলোকপাত করেন। এখানে তিনি মেজর জেনারেল জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্কারের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার পরপরই ধানমন্ডিতে এক বন্ধুর বাসায় থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধের দুজন নায়ক জিয়াউর রহমান ও খালেদ মোশাররফ জানুয়ারিতে সস্ত্রীক তাঁরা সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় এই দুজন সেক্টর কমান্ডারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশন ত্যাগ করার পরে জিয়া তাঁর বাসভবনে দেখা করতে গিয়েছিলেন। দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে রেহমান সোবহানের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন সম্ভবত তাঁকে কিছুটা হতাশ করেছিল। জিয়াকে তিনি উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি হিসেবে দেখেছিলেন। রেহমান সোবহানের মতে সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি হিসেবে তিনি তাঁর আইনি বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে অনেকেই বুঝতে ব্যর্থ হন যে প্রারম্ভিক গঠনমূলক বছরগুলোতে বাংলাদেশ কেবল যুদ্ধের ধাক্কা থেকে উদ্ধার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্নির্মাণের জন্য নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্যও বহির্বিশ্বের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমেরিকা, যে দেশটি বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতাকারী একটি পরাশক্তি, তাদের প্রভাবিত পশ্চিমা দাতাদের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশকে প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়েছিল। এই সময় ভারত একটি দরিদ্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও এককভাবে সাহায্যদাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছিল।
রেহমান সোবহান বাকশালের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকলেও এই উদ্যোগের মধ্যে তিনি সেই সময়কালের একদলীয় সমাজতান্ত্রিক সমাজগুলোর ধাঁচে সমতাবাদী সমাজ গঠনের সম্ভাবনা দেখেছিলেন। কেমব্রিজের দিনগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক দেশে মাঠ–পরিদর্শন থেকেও রেহমান সোবহান সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি সমতাবাদী সমাজের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতি তাঁর সমর্থন করার ব্যাপারে অনুশোচিত ছিলেন না। তাঁর সময়কালে ‘ব্রিফকেস পুঁজিবাদে’র সমালোচনা করলেও রেহমান সোবহান বাংলাদেশকে বর্তমানের অর্থনৈতিক বিকাশের এই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের ভূমিকা স্বীকার করেছেন। তবে অসম উন্নয়নে তিনি সন্তুষ্ট নন, বিশেষ করে যেখানে রাষ্ট্র-সমর্থিত উচ্চবিত্তরা তাঁদের পাশ্চাত্য সহযোগীদের মতো জীবন যাপন করেন, অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠরা দারিদ্র্য ও হতাশায় জীবন যাপন করেন। রেহমান সোবহান মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এক ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ সেই অর্থনৈতিক সমতা ও মুক্তির বাংলাদেশ নয়, যা তাঁর পিতা, জাতির পিতা চেয়েছিলেন।
# হাবিবউল হক খোন্দকার: অধ্যাপক, জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়, আবুধাবি