Thank you for trying Sticky AMP!!

আইনের ফাঁক দিয়ে বাল্যবিবাহ চলছেই

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বাল্যবিবাহ ঘটেই চলেছে। আইনে ত্রুটির পাশাপাশি বাস্তবায়নে উদ্যোগ কম থাকায় তা মেয়েদের সুরক্ষায় কাজে আসছে না। বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েদের প্রজননস্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে আজ শুক্রবার এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭–এর বিশেষ বিধানকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অন্যতম বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। আইনটির ১৯ ধারায় ‘বিশেষ বিধান’–এ বলা আছে, বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ ও বাবা–মা–অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ে হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

‘প্রতিরোধ করার জন্য প্রচার করুন, আইনি দণ্ডবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলুন: বাল্যবিবাহের প্রতিক্রিয়াগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করুন’ শিরোনামে ফেমিনিস্ট ইনকোয়ারিজ ইনটু রাইটস অ্যান্ড ইক্যুয়ালিটি (এফআইআরই) জোট এই দক্ষিণ এশিয়া সংলাপের আয়োজন করে। ভার্চ্যুয়াল এই সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে আয়োজক ছিল বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

সংলাপে বাংলাদেশ থেকে ছিলেন পপুলেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সহযোগী সাজেদা আমিন ও ব্র্যাকের কর্মসূচি প্রধান (মানবাধিকার ও লিগ্যাল এইড সার্ভিস) শাহরিয়ার সাদাত, শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সদস্য হারিনি অমরসুরিয়া এবং দেশটির সোশ্যাল সায়েন্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি আইনজীবী থিয়াগি পিয়াদাসা, পাকিস্তানের নারীর প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকারবিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ‘অহং’–এর নির্বাহী পরিচালক শিনা হামিদ, ভারতে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কর্মরত সংগঠন এনফোল্ড প্রাইভেট হেলথ ট্রাস্টের প্রধান (পুনরুদ্ধার অনুশীলন) স্বাগতা রাহা, নয়াদিল্লির সেন্টার ফর উইমেন্স ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মেরি ই জন, নারী ও মেয়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিষয়ে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ার নেপালের মেলিসা উপ্রিতি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভারতে সামাজিক ন্যায়বিচার ও নারীর সমতার লক্ষ্যে আইনি সহায়তা দেওয়া সংগঠন পার্টনার ফর ল ইন ডেভেলপমেন্টের প্রধান মধু মেহরা।

সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ব্লাস্টের সম্মানসূচক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন।

সারা হোসেন বলেন, আইনের যথাযথ প্রণয়ন ও প্রয়োগের অভাবে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন মেয়েদের জন্য রক্ষাকবচ হয়ে উঠছে না। ত্রুটি দূর করে আইনকে কীভাবে মেয়েদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। অনেক সময় মা–বাবা বাল্যবিবাহ দেন, আবার অনেক সময় মেয়েরাও নিজের পছন্দে বিয়ে করে ফেলে। এই বিয়েগুলোর নিবন্ধন না হওয়ায় মেয়েরা আরও বিপন্ন অবস্থায় পড়ে যায়। সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার কোন ক্ষেত্রগুলোতে পরিবর্তন আনা দরকার ও জোর দেওয়া উচিত, সেটাও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সাজেদা আমিন বাল্যবিবাহ নিরোধে বিয়ে নিবন্ধনের ওপর জোর দেন।

ব্র্যাকের শাহরিয়ার সাদাত বলেন, মাঠপর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা দেখেছেন, দেশে ৫৬ শতাংশ বাল্যবিবাহের কথা বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, বেশির ভাগ বাল্যবিবাহের নিবন্ধন হয় না। এর ফলে মেয়েটিকে যদি তার স্বামী ছেড়ে দিয়ে চলে যায়, তখন মেয়েটি আইনি ব্যবস্থা নিতেও অক্ষম হয়।

শ্রীলঙ্কার এমপি হারিনি অমরসুরিয়া একেকটি এলাকার বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।

ভারতের স্বাগতা রাহা বাল্যবিবাহ বন্ধে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, শুধু আইন করেই বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নেপালের মেলিসা উপ্রিতি বলেন, বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার রক্ষায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জোটবদ্ধ হতে হবে বাল্যবিবাহ আইনের অপব্যবহার রুখতে। দেশে দেশে আইনটির অপব্যবহারের মাধ্যমে নারীর ইচ্ছা ও অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের শিনা হাদি বলেন, পাকিস্তানে বাল্যবিবাহ নিরোধে আইন নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের সম্মতিকে আমলে নেওয়া হয় না।