৩৪ বিঘা জমি৷ ১০ বছর আগেও ছিল একফসলি৷ বেশির ভাগ জমিই বর্গায় চাষ হতো, নয়তো পরিত্যক্ত থাকত৷ এখন সেই জমিতে সোনা ফলে৷ ধান হয়, আলু হয়, হরেক রকম শাকসবজির চাষ হয়৷
এ সবকিছু হয়েছে একজন নারীর নেতৃত্বে৷ সারা দিন তিনি চষে বেড়ান এই জমি থেকে সেই জমি৷ রোদ, ঝড়, বৃষ্টি কিছুই তাঁকে দমাতে পারে না৷ নাম তাঁর মায়া রানী বাউল৷ বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কান্দামাত্রা গ্রামে৷ কৃষিতে সফলতার জন্য গত বছর কৃষি মেলায় তাঁকে আদর্শ কিষানি উপাধি দিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর৷
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ জানান, মায়া রানী সংসারের দায়িত্ব পালন করেও কৃষিতে সাফল্য দেখিয়েছেন৷ বছরজুড়েই তাঁর জমিতে শাকসবজি ও ধান উৎপাদিত হয়৷ এতে এলাকায় অন্য কৃষকেরা উৎসাহিত হচ্ছেন৷
নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কান্দামাত্রা গ্রাম৷ ওই গ্রামেই তাঁর জন্ম৷ এসএসসি পাস করেছেন৷ এরপর ওই গ্রামের বাসিন্দা পল্লিচিকিৎসক জগদীশ চন্দ্র বাউলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়৷
সরেজমিনে দেখা যায়, মায়া রানীর বাড়ির চৌচালা একটি ঘরের বারান্দাজুড়ে মিষ্টিকুমড়ার স্তূপ৷ একটি বড় ঘরজুড়ে আলু আর আলু৷
মায়া রানীর একমাত্র ছেলে অমিত বাউল অষ্টম শ্রেিণতে পড়ে৷ মাঠের কাজে সেও মাকে সাহায্য করে৷
মায়া রানী জানান, তাঁর স্বামী চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন৷ উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি ও তাঁর স্বামী প্রায় ৩৪ বিঘা জমি পেয়েছেন৷ লোকজন ওই জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করতেন৷ তবু বেশ কিছু জমি পরিত্যক্ত থাকত৷ একসময় তিনি জমিগুলো কাজে লাগানোর চিন্তা করেন৷ ছুটে যান উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে৷ কৃষি কর্মকর্তারা তাঁকে সবজিসহ নানা ফসল ফলাতে উৎসাহিত করেন৷ তাঁদের পরামর্শ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে শুরু হয় চাষাবাদ৷
চলতি বছর ১৪ বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছেন মায়া রানী৷ ১৪ হাজারের বেশি কুমড়া হয়েছে৷ ১১ হাজার বিক্রি করেছেন৷ তিন হাজার ঘরে মজুত আছে৷ মিষ্টিকুমড়ার মৌসুম শেষ হলে একই জমিতে ভাদ্রাকুমড়ার চাষ করবেন৷ ছয় বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেন৷ ৪০০ মণ আলু হয়েছে৷ ছয় বিঘা জমিতে লাউ ও লাউ শাক চাষ করেছেন৷ চার বিঘাতে উচ্চফলনশীল জাতের বেগুন, তিন বিঘাতে পুঁইশাক ও এক বিঘা জমিতে পটোল চাষ করা হয়েছে৷ সবজির মৌসুম শেষে একই জমিতে আষাঢ় মাস নাগাদ আমন ধান রোপণ করবেন৷
নভেম্বর থেকে শীতকালীন সবজি ও রবি ফসল ফলাতে মে মাস পর্যন্ত তিনজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন৷ এতে তাঁদের বেতন বাবদ খরচ হয় প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা৷ কীটনাশক, সার ও ট্রাক্টরের ভাড়া বাবদ খরচ প্রায় এক লাখ টাকা৷ সারা বছর প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ফসল ও শাকসবজি বিক্রি করেন৷
মায়া রানীর সফলতা দেখে একই গ্রামের অরুণ মজুমদার ও নবীন মল্লিক সবজিসহ নানা ফসল চাষাবাদে মনোযোগী হয়েছেন৷ অরুণ মজুমদার বলেন, ‘মায়া রানীর কৃষিতে সফলতা আমাদের গ্রামের সবার নজর কেড়েছে৷ তাই আমিও এ কাজে পুরো সময় ব্যয় করে ভালো চাষি হওয়ার চেষ্টা করছি৷’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘মায়া রানীর মতো কৃষিতে এমন সাফল্য উপজেলাজুড়ে থাকা দরকার৷ এতে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চালিত হবে৷ এসব কৃষকের পাশে আমাদের মাঠ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেন৷’