বেড়ানো

আফতাবনগরের নদীর ধারে কাশবন

আফতাবনগরের কাশফুলের নিবিড় সান্নিধ্যে দর্শনার্থীরা l প্রথম আলো
আফতাবনগরের কাশফুলের নিবিড় সান্নিধ্যে দর্শনার্থীরা l প্রথম আলো

দুপাশে গাছের সারিঘেরা প্রশস্ত সড়ক। বিশাল খোলা প্রান্তর। সবুজ ঘাস বিছিয়ে আছে। সড়কের ধারে ফুটে আছে শরতের বার্তা নিয়ে আসা কাশফুল। সুদীর্ঘ সড়কের শেষ প্রান্তে নদী। ঢাকার ভেতরে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার জন্য যাঁরা খোলামেলা জায়গা খুঁজে বেড়ান, তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন আফতাবনগরে।
রামপুরা সেতুর উত্তর-পূর্ব পাশে জহুরুল ইসলাম সিটির প্রবেশপথ দিয়ে খানিকটা এগোলেই লোহার সেতু। সেতু পেরোলেই যেন ভিন্ন জগৎ। ইট-কাঠের এই শহরে এক টুকরো সবুজের দেখা মেলাই যেখানে ভার, সেখানে আফতাবনগরে এই সবুজ প্রান্তরে হারিয়ে যেতে নেই মানা।
শরৎ শেষ হতে চলল। রাজধানীর প্রকৃতিতে শারদীয় শোভা দুর্লভ। তবে আফতাবনগর ব্যতিক্রম। শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা নিবিড় কাশবন রয়েছে এখানে। লোহার সেতু পেরিয়ে আধা কিলোমিটার গেলেই কাশবন। কাশফুলের ছোঁয়ায় প্রশান্ত হবে প্রাণ। আফতাবনগরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাট বসেছিল। ঈদের পর কাশের বন আবার তার পুরোনো রূপ ফিরে পেয়েছে। চারদিক কাশ ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে।
ছুটির দিনগুলোতে গাড়ি-বাইক হাঁকিয়ে, কেউবা রিকশায় চড়ে হাজির হচ্ছেন এখানে। আফতাবনগরে আছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। তাই এখানকার কাশবনের ছাত্রছাত্রীদের ভিড়টা বেশি। ক্লাস শেষে দল বেঁধে অনেকেই আড্ডা দেন কাশবনের পাশে ফাঁকা রাস্তায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চার বান্ধবী এসেছেন আফতাবনগরে ঘুরতে। শরতের নীল আকাশের সঙ্গে মিলিয়ে চারজনই পরেছেন নীল রঙা শাড়ি। তাঁদেরই একজন ফারিয়া হক বললেন, ‘মাঝেমধ্যেই এখানে ঘুরতে আসি। নিরিবিলি পরিবেশ বলে বেশ ভালো লাগে।’
অনেকেরই রিকশাভ্রমণ করতে ভালো লাগে। কিন্তু রাজধানীর যানজট আর ব্যস্ত সড়কে সে ভ্রমণ সুখকর হয়ে ওঠে না। আফতাবনগরের সুদীর্ঘ রাস্তায় চাইলে রিকশা ভ্রমণও করতে পারেন। মনোরম পরিবেশে প্রিয়জনকে নিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন একটি সুন্দর বিকেল।
সড়কের শেষ মাথায় এসে মিশেছে বালু নদের শাখা। রয়েছে বালুচর। নদের পাড়ে বসে মনে মনে ভাসিয়ে দিতে পারেন কল্পনার ভেলা। পা মেলে একটু বসলেই ছুটে আসা ফুরফুরে বাতাসে জুড়িয়ে যায় প্রাণ। এখানে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের শোভাও অপূর্ব।
নদীর শীতল বাতাস ও সবুজের সমারোহে মুক্তি মিলবে শহুরে কোলাহল থেকে। হু হু করা ঠান্ডা বাতাস। চারপাশে কাশবন। রাজধানীর ভেতরে এ যেন এক ভিন্ন জগৎ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আফতাবনগরে ঘুরতে আসছেন নানান বয়সী লোকজন। প্রায় সময় সেখানে চলে নাটকের শুটিং। ফলে দেখাও পেয়ে যেতে পারেন প্রিয় কোনো তারকার।
যাত্রী নিয়ে আসা রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে। রামপুরা সেতু থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত আসতে কমবেশি ৩০-৪০ টাকা ভাড়া। চটপটি-ফুচকা, আইসক্রিম, ঝালমুড়ির ভ্রাম্যমাণ দোকান থাকলেও খাবারের স্থায়ী কোনো দোকান নেই।
যাঁরা কর্মব্যস্ত রাজধানীতে খুঁজে বেড়ান একটু নীরবতা, তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন প্রিয়জনকে নিয়ে। তবে জনবসতি সেভাবে গড়ে না ওঠায় আফতাবনগরের পরিবেশ সন্ধ্যার পরে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকার ইচ্ছা থাকলে দলবল নিয়ে যাওয়াই নিরাপদ।