
আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ দেখার পরম সৌভাগ্যের অধিকারী হতে যাচ্ছি আমরা। সারা বিশ্বের প্রতিপালকের মেহমান হয়ে মক্কা, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফায় হাজির হয়ে বলব, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা’, অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’
ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্প ও বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিমানের বোয়িং ৭৭৭ বিজি ১০৭১ ফ্লাইট উড়াল দিল জেদ্দার পথে। যেহেতু মক্কায় যাব, তাই বিমানে ওঠার আগে হজ ক্যাম্পেই ইহরামের কাপড় পরে নিলাম। কারণ, জেদ্দায় পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ বা ইহরাম বাঁধতে হয়। বিমানে যদিও ইহরাম বাঁধার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন; আর বিমানে পোশাক পাল্টানো দৃষ্টিকটু।
বিমানের প্রতিটি আসনের সামনে একটি করে পর্দা, যাতে ইয়ারফোনের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন শরিফ তিলাওয়াত শোনা যায় ও মানচিত্রের মাধ্যমে বিমানের গতিপথ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ছয় ঘণ্টা পর জেদ্দা বিমানবন্দরে গিয়ে নামলাম। বাংলাদেশের সঙ্গে সময়ের ব্যবধান তিন ঘণ্টা। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো হজ টার্মিনালে। বিশাল টার্মিনাল, চারদিক খোলা। হজ টার্মিনাল শুধু হজযাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই হজ টার্মিনালের স্থপতি বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি ফজলুর রহমান খান, যিনি এফ আর খান নামে পরিচিত। গর্বে বুকটা ভরে গেল।
বিশাল হলঘরে বসার ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। তাঁদের কাছে মোবাইল সিম কিনতে পাওয়া যায়। অনেকে সিম কিনে দেশে প্রিয়জনদের ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার। ইমিগ্রেশন পুলিশ হজ ভিসা দেখে ছবি ও আঙুলের ছাপ নিল। পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দিয়ে দিল। ইতিমধ্যে বিমানের বেল্টে মালামাল চলে এসেছে। তারপর মোয়াল্লেমের কাউন্টার। সৌদি আরবে বিমানবন্দরে নামার পর থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে হাজিদের মক্কা-মদিনায় পৌঁছানো, মক্কা-মদিনায় আবাসন, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ সবকিছুর ব্যবস্থা যাঁরা করেন, তাঁদের বলা হয় মোয়াল্লেম। সৌদি আরবের নাগরিকেরাই হতে পারেন মোয়াল্লেম। প্রত্যেক মোয়াল্লেমের নির্দিষ্ট নম্বর আছে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে হজ টার্মিনালের ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ আমরা পৌঁছালাম।
বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ে কর্মরত সবাই বাংলাদেশি। তথ্যসেবা, চিকিৎসা-সহায়তার পাশাপাশি পাসপোর্ট বা হজযাত্রী নিয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে প্রশাসনিক দলের সদস্যরা তা সমাধান করে দেন।
হজ টার্মিনালের মেঝেতে এক ইঞ্চি পুরু বালু। আমাদের বিমান পৌঁছানোর আগে ধূলিঝড় হয়ে গেছে। সবার মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা।
হজযাত্রীদের জন্য সেবা: অন্যবারের মতো এবারও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হজযাত্রীদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য, খাদ্য, পানিসহ নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। ঢাকায় হজ ক্যাম্পে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক অস্থায়ী কার্যালয় খুলে হজযাত্রীদের নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) হজ ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র খুলেছে। প্রথম আলো এবারও হজযাত্রীদের বিনা মূল্যে হজ গাইড দিচ্ছে। এ নিয়ে টানা নয় বছর ধরে হজ গাইড বিতরণ করছে প্রথম আলো। এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে হজযাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে নাশতা, বোতলজাত পানি সরবরাহ করতে দেখা যায়।
কাল পড়ুন: মক্কায় পৌঁছেই ওমরাহ পালন