অ্যাসিড–দগ্ধ নাছরিনের আকুতি

আমি বাঁচতে চাই

গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং দুই হাতের পুরো অংশ ব্যান্ডেজ করা। মাথার চুল ফেলে দেওয়া হয়েছে। কপাল ও দুই গালে অ্যাসিডে ঝলসানোর দাগ। হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করেন নাছরিন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। মরে গেলে আমার ছোট্ট ছেলেটা কার কাছে যাবে?’
গতকাল বুধবার সকালে সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে রিজেন্ট হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকে এ কথা বলেন নাছরিন (২০)। তখন তিনি ওই হাসপাতালের ষষ্ঠতলার একটি কেবিনে ছিলেন। নাছরিন অশ্রুসিক্ত ছিলেন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর চার বছরের ছেলে আবু সাইদ।
স্বামীর ছোড়া অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার নাছরিনের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার রেজ্জাকপুর গ্রামে। তিনি গাজীপুরে ভাড়াবাড়িতে থেকে কারখানায় কাজ করতেন।
নাছরিনের বড় বোন জোছনা বেগম বলেন, তাঁর বোনের স্বামী সুরুজ মিয়া নেশাগ্রস্ত। আগের বিয়ের কথা গোপন রেখে তাঁর বোনকে বিয়ে করেন। সুরুজ প্রায়ই নাছরিনকে মারধর করতেন। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নেন। কাজ নেন একটি কারখানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত শনিবার সুরুজ নাছরিনকে অ্যাসিডে ঝলসে দেন। প্রথমে তাঁকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পড়ে রিজেন্ট হাসপাতালে আসেন।
রিজেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসক আনোয়ারুল আজিম বলেন, নাছরিনের শরীরের ২৭ ভাগ ঝলসে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, নাছরিনকে গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
নাছরিনের স্বামী সুরুজ মিয়াকে (৩৭) গত সোমবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়েছে।