রাঙামাটিতে গণিত উৎসব

এক অঙ্কের ক্ষুদ্রতম সংখ্যা কেন মাইনাস দিয়ে হয় না?

রাঙামাটি শহরের লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজ মাঠে গতকাল ‘ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে’ প্রশ্ন করে এক শিক্ষার্থী l ছবি: প্রথম আলো
রাঙামাটি শহরের লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজ মাঠে গতকাল ‘ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে’ প্রশ্ন করে এক শিক্ষার্থী l ছবি: প্রথম আলো

এক অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যা ৯ হলে এক অঙ্কের ক্ষুদ্রতম সংখ্যা কেন মাইনাস ৯ হয় না? সাদা শার্টে বৃষ্টির পানি পড়লে দাগ হয় কেন? তবে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন শুধু গণিতেই ‘আটকে’ থাকেনি। বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের একের পর এক বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নে রীতিমতো ঘাম ঝরেছে উত্তরদাতাদের।
রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার গণিত নিয়ে উৎসবমুখর দিন কাটিয়েছে। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে রাঙামাটি শহরের লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব।
লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল মতিন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আহসান উল্লাহ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনী আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। উৎসবে শিক্ষার্থীরা মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে ‘না’ বলার শপথ নেয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যক্ষ আবদুল মতিন বলেন, বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের একটা দুর্নাম ছিল, তারা গণিতে দুর্বল। কিন্তু এই উৎসব শুরু হওয়ার পর থেকে তারা প্রমাণ করেছে, কথাটি ঠিক নয়। উৎসবে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যাতে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাতে পারে, তোমাদের সব সময় সেই চেষ্টা থাকতে হবে।’
গতকাল সকাল আটটা থেকে শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের নিয়ে লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজ চত্বরে আসতে থাকে। অন্য বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এবারই প্রথম গণিত উৎসবে উৎসবে যোগ দেয় রাঙামাটি থেকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা কলেজ ও শহীদ লেফটেন্যান্ট মুশফিক উচ্চবিদ্যালয় এবং কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারের নারানগিরি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়।
উদ্বোধনের পর সোয়া এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা ছিল। এরপর বন্ধুতা পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে রাঙামাটি বন্ধুসভা এবং লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। মজার ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে অনেকে পুরস্কার জিতে নেয়।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রভাষক রিপন চাকমা, রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আহসান উল্লাহ, খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা কলেজের প্রভাষক অর্জুন নাথ, লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের সহকারী শিক্ষক নূর মোহাম্মদ ও খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. সালেহ উদ্দিন।
সমাপনী পর্বে বক্তারা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে অনেক মেধাবী ও ভালো মানুষের দরকার। ছাত্রছাত্রীদের ভালো মানুষ হতে হবে। শেখার আগ্রহ থাকার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। ভালো কিছু করার জন্য নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। সমাপনী পর্বে সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রথম আলোর রাঙামাটি প্রতিনিধি হরি কিশোর চাকমা।
পুরস্কার: উৎসবে বিজয়ী হয়েছে ৪০ জন। তাদের সনদ ও মেডেল দেওয়া হয়। তারা ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসবে রাঙামাটি অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবে। প্রাথমিক শাখায় সেরাদের সেরা হয়েছে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের কানিজ আফসানা, নিম্নমাধ্যমিক শাখায় সেরা হয়েছে লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের সৈয়দা মোফাদ্দিনা আহমেদ; মাধ্যমিক শাখায় সেরা হয়েছে লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের আইডিট বড়ুয়া এবং উচ্চমাধ্যমিক শাখায় সেরা হয়েছে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের মোহাম্মদ রাফিদ রাব্বি।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করে। উৎসব ব্যবস্থাপনায় ছিল প্রথম আলো রাঙামাটি বন্ধুসভা।