বাংলাদেশ থেকে আসা বেশির ভাগ হজযাত্রী জীবনে প্রথমবারের মতো আজ মক্কায় কাবা শরিফে জুমার নামাজ আদায় করবেন। কেউ কেউ প্রথম কাতারে ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ‘ফজরের নামাজের পর আর বাড়ি ফিরব না। একেবারে জুমার নামাজ পড়ে ফিরব।’ গতকাল বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন গোপালগঞ্জের রাজপাট থেকে আসা রেজওয়ান রাব্বি মিয়া।
হজযাত্রীরা এখন ইসলামের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরেফিরে দেখছেন। হজ শুরু হতে কয়েক দিন বাকি আছে। তাই এ সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা। বড় বাসে প্রতিজনের ভাড়া ১০ রিয়াল। গাইড ওই সব স্থানের বর্ণনা দেন। গ্রুপে অল্প সদস্য হলে ছোট গাড়িতে করে অথবা নিজ উদ্যোগে ঘুরেফিরে দেখছেন অনেকে।
তাঁরা হেরা গুহা, সাওর পর্বত, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা, জামারা (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোড়ার স্থান) মাআলা কবরস্থান, মসজিদে জিন পরিদর্শন করছেন।
জাবালে সাওর। জাবাল মানে পাহাড়, সাওর অর্থ গুহা। সাওর পর্বত কাবা শরিফ থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত। হিজরতের সময় এই পর্বতের একটি গুহায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং হজরত আবুবকর (রা.) তিন রাত অবস্থান করেছিলেন। গুহাটি এই পর্বতের চূড়ায়। পর্বতটি প্রায় দেড় মাইল উঁচু।
মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে মক্কা শরিফের বিখ্যাত কবরস্থান। এখানে কোনো কবর বাঁধানো নয়, নামফলকও নেই। গ্রিলঘেরা কবরস্থান। হজযাত্রীরা মোনাজাত করছেন নিজের মতো করে। জান্নাতুল মাআলা কবরস্থানের কাছে মসজিদে জিন।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেখানে ধ্যান করতেন এবং পবিত্র কোরআন শরিফের আয়াত যেখানে নাজিল হয়েছে, সেসব জায়গা দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। জাবালে নুরে সকালে আর বিকেলে যাওয়া যায়। আরবিতে জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে নুর হলো নূরের পাহাড়। পাহাড়ের বেশ কিছু দূর পর্যন্ত আনুমানিক ১৫০ মিটার পাকা রাস্তা করা হয়েছে,
যাতে শক্তিশালী ইঞ্জিনের গাড়ি সে পর্যন্ত যেতে পারে। এ পাকা রাস্তার পর শুরু হয়েছে পাহাড় কেটে তৈরি সিঁড়ির ধাপ। সাইনবোর্ডে লেখা আছে, সেখান থেকে জাবালে নুর বা গারে হেরার উচ্চতা ৫৬৫ মিটার। রাস্তার পাশে দোকানপাট, বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। পাহাড়ের একটি স্থান থেকে দেখা যাচ্ছিল অনেক লোক ওপরে উঠছেন। সিঁড়ি এঁকেবেঁকে ওপরে উঠে গেছে। এখন ওপরে ওঠা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। কিছু দূর উঠে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। পথে এ রকম পাঁচটি বিশ্রামাগার দেখতে পাই।
এ পথের বাঁকে বাঁকে ফকিরেরা শুয়ে-বসে ভিক্ষা চাইছেন। আরেক দল লোক আছে, যাঁদের দেখলে মনে হবে তাঁরা রাজমিস্ত্রি। বালু–সিমেন্ট নিয়ে এমন ভাবে অপেক্ষা করছেন, যেন আপনি সিঁড়ির ধাপটিতে ওঠার পর তিনি মেরামতের কাজ শুরু করবেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না। নানান কথা বলে টাকা আদায় করছেন। পথে পানি, চা, ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করছেন অনেকে। ওপরে উঠতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। পাহাড়ে উঠতে উঠতে আমাদের মনে হচ্ছিল, যখন কোনো রাস্তাঘাট ছিল না তখন কেমন করে নবীজি দীর্ঘদিন এ পাহাড়ের চূড়ার গুহায় যাতায়াত করেছেন। খাদিজা (রা.) কেমন করে নবীজিকে এখানে খাবার দিয়ে যেতেন?